ঢাকা, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭ ভাদ্র ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

এক শেয়ারে বিনিয়োগ করে মাসের ব্যবধানে কোটিপতি বিনিয়োগকারীরা

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০১ ১৯:০২:১৫
এক শেয়ারে বিনিয়োগ করে মাসের ব্যবধানে কোটিপতি বিনিয়োগকারীরা

১১ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি আইএসএন দীর্ঘকাল ধরেই আর্থিক দুর্বলতা ও লোকসানের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির রিজার্ভে প্রায় ৮ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯ কোটির বেশি টাকা লোকসান করার পর যদিও কিছু বছর সামান্য মুনাফা করেছিল, কিন্তু সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) প্রায় ১৯ লাখ টাকা লোকসান গুণতে হয়েছে। এমন দুর্বল ভিত্তির একটি কোম্পানির শেয়ারের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বাজার বিশ্লেষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।

নামমাত্র লভ্যাংশ, বড় ঝুঁকিতে সাধারণ বিনিয়োগকারী

বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রদানের ক্ষেত্রেও আইএসএন-এর রেকর্ড আশাব্যঞ্জক নয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছে, যা আগের অর্থবছরে ছিল ১ শতাংশ। এর আগের বছরে ৩ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছিল। এমনকি, ঘোষিত লভ্যাংশের পুরো অংশও বিতরণ করা হয়নি; গত বছরের ৩০ জুন শেষে প্রায় ১৮ লাখ টাকা অবণ্টিত লভ্যাংশ রয়ে গেছে।

লভ্যাংশের এই অপ্রতুলতা বিনিয়োগকারীদের জন্য কতটা লাভজনক, তা একটি উদাহরণ দিয়ে পরিষ্কার করা যায়। যদি কোনো বিনিয়োগকারী ৫০ টাকা দরে ১ লাখ শেয়ারে ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন, তবে ৩ শতাংশ লভ্যাংশ হিসেবে বছরে তিনি পাবেন মাত্র ৩০ হাজার টাকা। অর্থাৎ, বিনিয়োগের বিপরীতে বার্ষিক মুনাফার হার মাত্র শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ, যা ব্যাংকে আমানত রেখে পাওয়া ৮-১২ শতাংশ সুদের তুলনায় অনেক কম।

কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে বিএসইসির নির্দেশিত ৩০ শতাংশ শেয়ারও নেই; তাদের মালিকানা মাত্র ২১.৪৭ শতাংশ, যেখানে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৬৮.৭৪ শতাংশ শেয়ার। এটি স্পষ্ট করে যে, কোম্পানির লোকসান বা অবসায়নের মতো পরিস্থিতিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

সুবিধাভোগীদের ফুলেফেঁপে ওঠা, বাজার জুড়েই আতঙ্ক

ডিএসইর বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ৩১ জুলাই আইএসএন-এর প্রতিটি শেয়ারের দর ছিল ৪২ টাকা ৪০ পয়সা। আশ্চর্যজনকভাবে, আজ তা বেড়ে ১১৩ টাকা ৫০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ, মাত্র এক মাসের ব্যবধানে শেয়ারটির মূল্য ৭১ টাকা ১০ পয়সা বা ১৬৮ শতাংশ (২.৬৮ গুণ) বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে, যারা গত মাসে ৪২ লাখ ৭০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ১ লাখ শেয়ার কিনেছিলেন, তারা আজ ৬৩ লাখ টাকা মুনাফাসহ মোট ১ কোটি ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা তুলতে পেরেছেন। এই চিত্র কিছু সংখ্যক সুবিধাভোগীর পকেট ভরাট করলেও, বাজারের সামগ্রিক স্থিতিশীলতার জন্য এটি এক অশনি সংকেত।

তদন্ত ও সতর্কবার্তা: নিয়ন্ত্রক সংস্থার পদক্ষেপ

কোম্পানিটির শেয়ারের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নজরে আসার পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডিএসই ইতিমধ্যেই তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে এবং বিনিয়োগকারীদের বারবার সতর্কবার্তা জারি করছে। তা সত্ত্বেও, আজ শেয়ারটির দর আরও ৩ টাকা বেড়েছে।

ডিএসইর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, "আইএসএন-এর শেয়ারের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি এবং কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত শুরু হয়েছে। কোনো অসংগতি পাওয়া গেলে আমরা কমিশনকে প্রতিবেদন জমা দেব।" বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালামও নিশ্চিত করেছেন যে, ডিএসই-এর রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন:

এক কোম্পানির শেয়ার ‘জেড’ থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর

বিনিয়োগকারীদের চাহিদার ঝড়ে উড়ছে ৭ কোম্পানির শেয়ার

ডিভিডেন্ড পেল বিনিয়োগকারীরা

অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ এই পরিস্থিতিকে "আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত" হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, "যারা লোকসানি শেয়ার গুজবের ওপর ভিত্তি করে কিনছেন, তারা নিশ্চিতভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। যথাযথ তদন্ত হলে দেখা যাবে, কোনো বিশেষ শ্রেণির প্রলোভনে পড়ে এই শেয়ারে আগ্রহ বাড়ছে এবং পরে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে উচ্চমূল্যে ধরিয়ে দিয়ে তারা বেরিয়ে যাবে।"

মো: রাজিব আলী/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ