ঢাকা, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮ ভাদ্র ১৪৩২

MD Zamirul Islam

Senior Reporter

তদন্তে চাঞ্চল্য: এক কোম্পানির ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ চায় বিএসইসি

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০২ ১৯:৫৪:৪২
তদন্তে চাঞ্চল্য: এক কোম্পানির ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ চায় বিএসইসি

দেশের পুঁজিবাজারে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে একটি নতুন আর্থিক কেলেঙ্কারি। অভিযোগ উঠেছে যে, অ্যালায়েন্স ক্যাপিটাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড নামের একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান দুটি মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটহোল্ডারদের ৪৫ কোটি ৭ লাখ টাকা অবৈধভাবে আত্মসাৎ করেছে। এই গুরুতর অভিযোগের প্রেক্ষিতে, দেশের শীর্ষ আর্থিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে।

বিএসইসি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়ে অ্যালায়েন্স ক্যাপিটালের সকল পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সহ সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক এবং ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (এনবিএফআই) পরিচালিত সকল হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলন স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়েছে।

সম্প্রতি দুদকের সচিবের কাছে পাঠানো এই চিঠিতে, বিএসইসি অ্যালায়েন্স ক্যাপিটালের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের বিশদ বিবরণ তুলে ধরেছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এমটিবি ইউনিট ফান্ড এবং অ্যালায়েন্স সন্ধানী লাইফ ইউনিট ফান্ড থেকে ইউনিটহোল্ডারদের বিপুল পরিমাণ অর্থ বেআইনিভাবে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, ২০১৪ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অ্যালায়েন্স ক্যাপিটালের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ এবং বিশেষ করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও খন্দকার আসাদুল ইসলামের সকল আর্থিক হিসাব থেকে অর্থ লেনদেন বন্ধ করা অত্যাবশ্যক।

বিএসইসি আরও জানিয়েছে যে, এই ফান্ডগুলোর ট্রাস্টি, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি পিএলসি (বিজিআইসি)-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দুই মাসের মধ্যে কমিশনের প্যানেলভুক্ত একজন নিরীক্ষক দ্বারা ফান্ডগুলোর পুনর্মূল্যায়ন সম্পন্ন করতে।

আরও পড়ুন:

বিনিয়োগকারীদের জন্য সুখবর: কমলো বিও অ্যাকাউন্ট রক্ষণাবেক্ষণ ফি

লভ্যাংশ পেল চার কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা

বিক্রেতা সংকটে হল্টেড ৮ কোম্পানি

এরপর, পরবর্তী এক মাসের মধ্যে ইউনিটহোল্ডারদের সাথে বৈঠক করে ফান্ডগুলোর ভবিষ্যৎ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং কমিশনকে অবহিত করতে হবে। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন, অর্থাৎ পুনর্মূল্যায়ন প্রতিবেদন এবং ইউনিটহোল্ডারদের সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে কমিশনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত সকল ব্যাংক ও এনবিএফআই হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলন বন্ধ রাখার অনুরোধ করা হয়েছে।

বিএসইসি'র তদন্তে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সংস্থাটি নিশ্চিত করেছে যে, এমটিবি ইউনিট ফান্ড এবং অ্যালায়েন্স সন্ধানী লাইফ ইউনিট ফান্ড থেকে বেআইনিভাবে ৪৫ কোটি ৭ লাখ টাকা লোপাট করা হয়েছে। এই অনিয়মের জন্য শুধু সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানই নয়, এর প্রধান নির্বাহী ও অন্যান্য কর্মকর্তা, ফান্ডের ট্রাস্টি, নিরীক্ষক এবং কাস্টোডিয়ানদেরও দায় খুঁজে পেয়েছে বিএসইসি।

প্রতিষ্ঠানটি সম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে তার মৌলিক দায়িত্ব পালনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে এবং বিধিমালা লঙ্ঘন করে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যক্তিস্বার্থে পাচার করেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই অর্থ স্থানান্তরের ঘটনা ঘটেছে এবং বিএসইসির তদন্তে খন্দকার আসাদুল ইসলামের সংশ্লিষ্টতা স্পষ্ট হয়েছে।

বিএসইসি আরও জানিয়েছে যে, চলমান তদন্তে খন্দকার আসাদুল ইসলাম সহযোগিতা করছেন না এবং বিনিয়োগকারীদের অর্থের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে তিনি কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ দিতে পারেননি। পরিস্থিতি বিবেচনায়, আসাদুল ইসলাম যাতে কোনো আইনি বা ফৌজদারি কার্যক্রম এড়াতে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে না পারেন, সে জন্য ২০২৩ সালের ২৮ মার্চ বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক এবং ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছে বিএসইসি।

এই ঘটনা পুঁজিবাজারের স্বচ্ছতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থার বিষয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে, এবং সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে।

তানিয়া বৃষ্টি/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ