ঢাকা, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১ ভাদ্র ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

শেয়ারবাজারে সফল হতে চান? জেনে নিন দ্রুত মুনাফা তোলার ৫টি অব্যর্থ কৌশল!

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৫ ২২:৫০:৫০
শেয়ারবাজারে সফল হতে চান? জেনে নিন দ্রুত মুনাফা তোলার ৫টি অব্যর্থ কৌশল!

শেয়ারবাজারে নিয়মিত লেনদেন করেও যারা মাস শেষে কাঙ্ক্ষিত লাভের দেখা পাচ্ছেন না, কিংবা ভালো শেয়ার হাতে নিয়েও সঠিক সময়ে বিক্রি করতে না পারায় মুনাফা হারাচ্ছেন—তাদের জন্য এই প্রতিবেদন। বাজারের উত্থান-পতনের মাঝে হঠাৎ লোকসানের মুখে পড়লে দিশেহারা না হয়ে, কিছু সুনির্দিষ্ট কৌশল অবলম্বন করে আপনিও হয়ে উঠতে পারেন একজন সফল ট্রেডার।

শুধু কোম্পানির মৌলভিত্তির ওপর ভরসা করে বসে থাকাই সাফল্যের একমাত্র চাবিকাঠি নয়; বরং বাজারের গতিবিধি বুঝে কিছু প্রমাণিত কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে একজন সাধারণ বিনিয়োগকারীও দক্ষ হয়ে উঠতে পারেন। নিচে এমন পাঁচটি কৌশল তুলে ধরা হলো, যা অনেক অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীও কখনো কখনো এড়িয়ে চলেন:

১. সুইং ট্রেডিং: স্বল্পমেয়াদী ঢেউ থেকে মুনাফা আহরণ

শেয়ারবাজারের দামের ওঠানামা কখনোই সরল পথে চলে না; বরং এটি সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো চড়ে ও নামে। এই স্বল্পমেয়াদী উত্থান-পতনের সুযোগকে কাজে লাগিয়েই বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীরা 'সুইং ট্রেডিং' করেন। দীর্ঘ সময় ধরে শেয়ার ধরে রাখার পরিবর্তে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দামের স্বাভাবিক ঢেউ ব্যবহার করে দ্রুত মুনাফা করাই এই কৌশলের মূল লক্ষ্য।

সুইং ট্রেডিংয়ে সফল হতে হলে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বুঝতে হবে: সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স।

সাপোর্ট: এটি এমন একটি প্রাইস লেভেল, যেখানে শেয়ারের দাম কমতে কমতে একসময় থেমে যায় এবং আবার বাড়তে শুরু করে। অভিজ্ঞ ট্রেডাররা এই লেভেলের কাছাকাছি শেয়ার কেনেন, কারণ এখানে ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম থাকে এবং দাম বাড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

রেজিস্ট্যান্স: এটি হলো সেই লেভেল যেখানে শেয়ারের দাম বাড়তে বাড়তে একসময় বাধার সম্মুখীন হয় এবং আবার কমতে শুরু করে। বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীরা সাধারণত এই জায়গায় পৌঁছালে শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নেন।

শুধু দামের দিকে তাকিয়ে না থেকে, চার্ট বিশ্লেষণ করেও এই সংকেতগুলো পাওয়া যায়। 'Hammer', 'Bullish Engulfing' বা 'Morning Star'-এর মতো ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্নগুলো দেখা দিলে দাম বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে বলে ধরে নেওয়া যায়। অন্যদিকে, 'Shooting Star' বা 'Bearish Engulfing' দেখা দিলে সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে, কারণ তখন দাম কমার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।

২. ভলিউম অ্যানালাইসিস: শুধু দাম নয়, লেনদেনের পরিমাণও দেখুন

শেয়ারবাজারে শুধু দামের ওঠানামা দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া যথেষ্ট নয়; বরং সেই দামের পেছনে কতজন বিনিয়োগকারী সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন, তা বোঝা যায় 'ভলিউম' থেকে। ভলিউম হলো নির্দিষ্ট সময়ে মোট কতগুলো শেয়ার হাতবদল হলো তার পরিমাণ। এটি বাজারের অভ্যন্তরীণ শক্তি বা দুর্বলতার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে।

যখন কোনো শেয়ারের দাম বাড়ছে এবং একইসঙ্গে ভলিউম বা লেনদেনও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে, তখন ধরে নেওয়া যায় বাজারে শক্তিশালী ক্রেতাদের চাপ বিদ্যমান। এই ধরনের প্রবণতাকে 'শক্তিশালী ট্রেন্ড' বলা হয়, যা সাধারণত কিছু সময়ের জন্য বজায় থাকে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি চমৎকার সুযোগ তৈরি করে।

অন্যদিকে, যদি দেখা যায় দাম বাড়ছে কিন্তু ভলিউম বাড়ছে না, বরং কমে যাচ্ছে, তবে সতর্ক হওয়া জরুরি। কারণ এটি বাজার নিয়ন্ত্রণকারীদের তৈরি করা একটি ফাঁদ হতে পারে। অনেক সময় প্রভাবশালী গ্রুপ অল্প সংখ্যক শেয়ার লেনদেন করে দাম কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে তোলে, যাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হয়ে ক্রয় করে। পরে তারা শেয়ার ছেড়ে দিলে দাম দ্রুত নিচে নেমে আসে।

সুতরাং, একজন সচেতন বিনিয়োগকারীর জন্য ভলিউম অ্যানালাইসিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি হাতিয়ার। দাম বাড়া বা কমার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণ মিলিয়ে দেখলে বাজারের প্রকৃত দিক বোঝা যায় এবং ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকি কমে আসে।

৩. সেক্টর রোটেশন: সময়ের আগেই সঠিক খাতটি চিহ্নিত করুন

শেয়ারবাজারে একই সময়ে সব খাত সমানভাবে ভালো করে না। অর্থনীতির অবস্থা ও মৌসুমি চাহিদার ওপর নির্ভর করে মূলধন এক খাত থেকে অন্য খাতে স্থানান্তরিত হয়। এই প্রবাহকে সঠিকভাবে ধরতে পারা একজন সফল ট্রেডারের অন্যতম গুণ। যেমন:

বাজেটের পর অবকাঠামো খাত (যেমন: সিমেন্ট, স্টিল, পাওয়ার) শক্তিশালী হয়।

ঈদ বা উৎসবের আগে ব্যাংক ও আর্থিক খাতগুলোয় সচলতা বাড়ে।

শীতকালে ফার্মাসিউটিক্যালস ও টেক্সটাইল খাতের শেয়ার চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

এই ধরনের 'সেক্টর রোটেশন' বুঝতে পারলে আপনি সময়ের আগেই সঠিক খাতে বিনিয়োগ করে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকতে পারবেন।

৪. ডিভিডেন্ড ও রাইট শেয়ার: বাস্তবতার নিরিখে সিদ্ধান্ত নিন

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সময় অনেকেই শুধু ডিভিডেন্ড ঘোষণার খবরে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ডিভিডেন্ড ঘোষণার পরপরই অনেক সময় শেয়ারের দাম কমে যায়। এর কারণ হলো, যারা কেবল ডিভিডেন্ড পাওয়ার জন্য শেয়ার কিনেছিলেন, তারা রেকর্ড ডেট শেষ হতেই শেয়ার বিক্রি করে দেন।

এই পরিস্থিতিকে 'ডিভিডেন্ড ফাঁদ' বলা হয়। তাই কেবল ঘোষণার দিন বা কাছাকাছি সময়ে শেয়ার কিনলে বিনিয়োগকারীরা প্রায়শই লোকসানের মুখে পড়েন। বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীরা এ কারণে ডিভিডেন্ড ঘোষণার অনেক আগেই বাজারে প্রবেশ করেন এবং কৌশলীভাবে দামে সুবিধা নেন।

অন্যদিকে, 'রাইট শেয়ার'ও বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বড় সিদ্ধান্ত। সাধারণত রাইট শেয়ার ঘোষণার পর বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহ সৃষ্টি হয়, যার ফলে শেয়ারের দাম সাময়িকভাবে কমে যায়। এতে অনেক বিনিয়োগকারী আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার ছেড়ে দেন।

কিন্তু যদি সংশ্লিষ্ট কোম্পানির মৌলভিত্তি শক্তিশালী হয় এবং ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে, তবে রাইট শেয়ার দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক হয়ে উঠতে পারে। কারণ রাইট শেয়ারের মাধ্যমে কোম্পানি মূলধন বৃদ্ধি করে ব্যবসা সম্প্রসারণে যেতে পারে, যা পরবর্তীতে শেয়ারদরের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম।

সুতরাং, শুধু ঘোষণার খবরে ঝাঁপিয়ে না পড়ে, কোম্পানির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, আর্থিক স্বাস্থ্য এবং বাজারের বাস্তবতা বিশ্লেষণ করে ডিভিডেন্ড ও রাইট শেয়ারে বিনিয়োগ করাই একজন সচেতন বিনিয়োগকারীর বিচক্ষণ কৌশল হওয়া উচিত।

৫. মানি ম্যানেজমেন্ট: লোকসানকে সীমাবদ্ধ রাখুন

আলী হায়দারের মতে, "শেয়ারবাজারে লোকসান এড়ানো সম্ভব নয়, কিন্তু সেটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।" এর জন্য 'রিস্ক-রিওয়ার্ড রেশিও' ব্যবহার করা জরুরি। প্রতিটি ট্রেডের আগে ঠিক করুন কতটুকু লাভে বিক্রি করবেন আর কতটুকু ক্ষতিতে বাজার থেকে বেরিয়ে আসবেন। আদর্শ অনুপাত হলো ১:৩ – অর্থাৎ, ১ টাকা ক্ষতির বিপরীতে অন্তত ৩ টাকা লাভের সম্ভাবনা থাকলেই ট্রেড করুন।

সর্বোপরি, শেয়ারবাজারে সফল হতে হলে শুধু সঠিক সময়ে শেয়ার কেনা-বেচাই যথেষ্ট নয়; এর জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো ধৈর্য, শৃঙ্খলা এবং নিয়মিত শেখার মানসিকতা। বিনিয়োগকারীদের মনে রাখতে হবে, শেয়ারবাজার সবসময় এক রকম থাকে না—কখনো দাম বাড়বে, আবার কখনো হঠাৎ কমেও যেতে পারে।

তাই স্বল্পমেয়াদী ওঠানামায় আতঙ্কিত হয়ে বা অতিরিক্ত লোভে পড়ে আবেগপ্রবণ সিদ্ধান্ত নিলে ক্ষতির ঝুঁকি বেড়ে যায়। বরং, একটি সুস্পষ্ট ট্রেডিং পরিকল্পনা তৈরি করে সেটির প্রতি অনুগত থাকা, ঝুঁকি-লাভের সঠিক হিসাব মেনে চলা এবং প্রতিটি অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এই বিষয়গুলো গড়ে তুলতে পারলেই দীর্ঘমেয়াদে শেয়ারবাজার আপনার জন্য হয়ে উঠবে এক নির্ভরযোগ্য ও ধারাবাহিক মুনাফার উৎস।

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ