ঢাকা, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

শেয়ারবাজারে প্রাণ ফেরাতে আইসিবি পাচ্ছে ১০০০ কোটি টাকা

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৯ ০৮:১০:৫৯
শেয়ারবাজারে প্রাণ ফেরাতে আইসিবি পাচ্ছে ১০০০ কোটি টাকা

দেশের পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বড় ধরনের আর্থিক সহায়তা পেতে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। সংশোধিত জাতীয় বাজেটের অধীনে প্রতিষ্ঠানটিকে ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা এক বৈঠকে এই অর্থায়ন নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, অর্থ উপদেষ্টাসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ওয়াশিংটন থেকে সরকারি সফর শেষে দেশে প্রত্যাবর্তনের পরই এই তহবিল আইসিবি-র কাছে দ্রুত হস্তান্তর করা হতে পারে।

আইসিবি-র তারল্য সংকট

দেশের একমাত্র সরকারি বিনিয়োগ ব্যাংক হিসেবে আইসিবি বন্ড, ফিক্সড ডিপোজিট রসিদ (এফডিআর) ও শেয়ার বিক্রির মতো বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় তহবিল সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা করে থাকে। তবে, পুঁজিবাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি চরম তারল্য সংকটে জর্জরিত।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর, আইসিবি আর্থিক সহায়তার আবেদন জানিয়ে ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস ডিভিশন (এফআইডি)-এর কাছে অনুরোধ করে, যা পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে প্রেরিত হয়।

বকেয়া ঋণ ও এফআইডি-র আহ্বান

২০১০ সাল থেকে আইসিবি এফডিআর ও বন্ড ইস্যু করে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করেছিল। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মূল ও সুদের পাওনা মিলিয়ে ৬ হাজার কোটি টাকা পরিশোধের সময়সীমা অতিক্রম করেছে, এবং এই বকেয়া ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপরন্তু, প্রতি মাসে আইসিবি-কে কেবল সুদ হিসেবেই ৯০ কোটি টাকা গুনতে হয়।

এই পরিস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে দেওয়া এক পত্রে এফআইডি আইসিবি-কে স্বল্প সুদে ১০ বছর মেয়াদে (দুই বছরের রেয়াত কাল সহ) ১৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ প্রদানের জন্য আহ্বান জানায়। এফআইডি-র ভাষ্যমতে, সরকারি নির্দেশে ৮০ কোটি টাকা ব্যয় করে ন্যাশনাল টি কোম্পানির ৬৬ লাখ শেয়ার কিনতে বাধ্য হওয়ায় আইসিবি-র এই তারল্য ঘাটতি আরও গভীর হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আপত্তির কারণ

জবাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক (বিবি) তহবিল যোগান দিতে স্পষ্ট অস্বীকৃতি জানায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবস্থান ছিল—এই বিপুল অর্থায়ন দেশে আগে থেকেই চড়া থাকা মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দেবে। এফআইডি-কে লেখা চিঠিতে বিবি আরও সতর্ক করে জানায় যে, এমন অর্থ সরবরাহ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো থেকে বাজেট সহায়তা প্রাপ্তিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে।

তারা আরও উল্লেখ করে যে, এই অর্থায়নটি সংকোচনশীল মুদ্রানীতির পরিপন্থী এবং ঋণের দীর্ঘ পরিশোধের সময়কাল 'বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ, ১৯৭২'-এর বিধানের সরাসরি লঙ্ঘন।

সমাধানের পথ এবং বাজার পরিস্থিতি

বরং, বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে সংশোধিত জাতীয় বাজেট থেকে তহবিল নেওয়ার পরামর্শ দেয়, যার ফলে মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম পড়বে। এই সুপারিশের ভিত্তিতেই বর্তমানে ১০০০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিষয়টি চূড়ান্তের পথে।বাজারের নিম্নমুখী প্রবণতার কারণে আইসিবি দ্রুত অর্থায়ন চেয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক গত এক মাসে প্রায় ১০ শতাংশ বা ৫১২ পয়েন্ট হ্রাস পেয়েছে। আইসিবি কর্মকর্তারা আশাবাদী যে, এই কম মূল্যের বাজারে অর্থ পেলে বিনিয়োগ করে দ্রুত উচ্চ মুনাফা অর্জন সম্ভব হবে।

তারা স্মরণ করিয়ে দেন, এর আগে ২০২৪ সালে সরকার সার্বভৌম গ্যারান্টির মাধ্যমে আইসিবি-কে ৩ হাজার কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছিল। সেই অর্থের মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ পরিশোধে ব্যয় হয় এবং বাকি বিনিয়োগ থেকে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ২০ শতাংশ মূলধনী মুনাফা লাভ করেছিল।

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ