ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

শোক সংবাদ: আওয়ামী লীগ নেত্রীর মৃত্যু

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৪ ০৭:৫২:২২
শোক সংবাদ: আওয়ামী লীগ নেত্রীর মৃত্যু

ঝালকাঠির আলোচিত নেত্রী শারমিন মৌসুমী কেকার রহস্যজনক মৃত্যু! রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড়

গভীর রহস্যের জালে জড়িয়ে পড়েছে ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের একসময়ের প্রভাবশালী নারী নেত্রী শারমিন মৌসুমী কেকার আকস্মিক মৃত্যু। সোমবার রাতে বরিশাল শহরের সদর রোড সংলগ্ন তার শ্বশুরবাড়ি থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করেছে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। এই ঘটনা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়েছে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যেও আলোচনার প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

মৃত্যুরহস্যের অন্তরালে:

কেকার মৃত্যু নিয়ে বেশ কিছু অসঙ্গতি সামনে আসছে। স্থানীয়দের একাংশ দাবি করছেন, ঘটনার সময় ঘরের দরজা ভেতর থেকে তালাবদ্ধ ছিল—যা একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ইঙ্গিত দেয়। অন্যদিকে, অন্য একটি সূত্র জানাচ্ছে, মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগেও তিনি ফোনে সক্রিয় ছিলেন। এসব পরস্পরবিরোধী তথ্য পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তুলেছে। পুলিশও এই মৃত্যু স্বাভাবিক নয় বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছে।

কে ছিলেন শারমিন মৌসুমী কেকা?

একসময় ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম পরিচিত ও প্রভাবশালী মুখ ছিলেন শারমিন মৌসুমী কেকা। রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই তিনি সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। দ্রুতই তিনি জেলা রাজনীতিতে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করেন এবং একপর্যায়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও দায়িত্ব পালন করেন।

রাজনৈতিক উত্থান, বিতর্ক ও বহিষ্কার:

তবে ২০২০ সালে স্থানীয় পর্যায়ের একটি বিতর্কিত ঘটনার জেরে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এই ঘটনা তার রাজনৈতিক জীবনে এক বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এরপর তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। তবে দলীয় সূত্রমতে, বহিষ্কারের পরেও তিনি রাজনৈতিক যোগাযোগ বজায় রেখেছিলেন এবং পুনর্বাসনের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

মামলা ও বরিশালে আত্মগোপন:

ঝালকাঠির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে তিনি একাধিক রাজনৈতিক মামলার আসামি হন। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি ঝালকাঠি ছেড়ে বরিশালের সদর রোডে তার শ্বশুরবাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন।

পুলিশের তদন্ত ও ময়নাতদন্তের প্রস্তুতি:

কেকার স্বামী লিটু এবং পরিবারের সদস্যরা দাবি করছেন, সোমবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান এই দাবিকে সরলভাবে দেখছেন না। তিনি বলেন, "স্বজনদের কাছ থেকে খবর পেয়ে আমরা লাশ উদ্ধার করেছি। মৃত্যুকে ঘিরে নানা ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, যা সন্দেহজনক বলে মনে হচ্ছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।"

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ায় তোলপাড়:

শারমিন মৌসুমী কেকার মৃত্যু স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেকেই এই মৃত্যুর পেছনে 'অস্বাভাবিক কারণ' বা 'রাজনৈতিক চাপের' সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না। ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট এবং পুলিশের নিবিড় তদন্তই এই রহস্যের জট খুলতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এই ঘটনা ঝালকাঠি ও বরিশালের রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ