ঢাকা, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

বেতনের নতুন প্রস্তাব: সর্বনিম্ন ২৫ হাজার, সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২০ ০৯:২৭:৫৩
বেতনের নতুন প্রস্তাব: সর্বনিম্ন ২৫ হাজার, সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা

সরকারি চাকরিতে বেতনের নতুন প্রস্তাব: সর্বনিম্ন ২৫ হাজার, সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা, সাকুল্য বেতনের বিকল্প বিবেচনা

বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামোতে বিশাল পরিবর্তনের প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির নেতারা পে-কমিশনের কাছে সর্বনিম্ন ২৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত বেতন নির্ধারণের একটি রূপরেখা জমা দিয়েছেন। এই প্রস্তাবের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো 'সাকুল্য বেতন' বা 'পারিশ্রমিক' নামে একটি বিকল্প কাঠামো প্রবর্তনের ধারণা, যেখানে বিদ্যমান সব ধরনের ভাতা এবং আর্থিক/অনার্থিক সুবিধা বাতিল করা হবে।

বৃহস্পতিবার এই প্রস্তাব পেশ করার পর আজ (শুক্রবার) সমিতির নেতাদের সঙ্গে পে-কমিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রস্তাবে মূলত দুটি ভিন্ন পথ প্রস্তাব করা হয়েছে: একটি হলো বর্তমান বেতন কাঠামোতে অতিরিক্ত সুবিধা যোগ করা, এবং অন্যটি হলো বর্তমান কাঠামো সম্পূর্ণ বাতিল করে বৈশ্বিকভাবে প্রচলিত 'সাকুল্য বেতন কাঠামো' (All-inclusive Salary Structure) গ্রহণ করা।

এক হাজার কোটি টাকার সম্মানী বাতিলের সুপারিশ

কমিশনের কাছে জমা দেওয়া প্রস্তাবে সরকারি চাকরিজীবীদের বিভিন্ন কমিটি, সেমিনার বা প্রশিক্ষণে যোগ দেওয়ার জন্য নেওয়া সম্মানী বা ভাতা বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ পদের জন্য অর্পিত দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবেই এই পৃথক সম্মানী নিচ্ছেন, যা নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমানে এই সুবিধা দিতে বছরে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়, যা বাতিলের মাধ্যমে সাশ্রয়ের সুযোগ তৈরি হবে।

পে-স্কেল কার্যকর হতে পারে আগামী বছরের শুরুতে

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন যে, পে-কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে যে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে, তা সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ রাখা হবে। ডিসেম্বরে বর্তমান বাজেট সংশোধনের কাজ শুরু হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, এটি আগামী বছরের শুরুর দিকে কার্যকর হতে পারে, যা নির্ভর করছে পে-কমিশনের গেজেট প্রকাশের ওপর।

১২টি গ্রেড ও বিশেষ ভাতার সুপারিশ

প্রস্তাবে বর্তমান বেতন স্কেলের অপ্রয়োজনীয় বা কম ব্যবহৃত গ্রেডগুলো বাদ দিয়ে মোট ১২টি গ্রেড নির্ধারণের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন কাঠামোতে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের বৃদ্ধির হারকে মানদণ্ড ধরে অন্যান্য গ্রেডের বেতন একই অনুপাতে বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে অফিস সহায়ক, মেসেঞ্জার, দপ্তরি, প্লেন ফটোকপিয়ার-এর মতো পদগুলোকে একই গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত করার এবং ৬ষ্ঠ ও ৮ম গ্রেডের মতো কম ব্যবহৃত গ্রেডগুলোকে যথাক্রমে ৫ম ও ৯ম গ্রেডের সঙ্গে একীভূত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি, সচিবালয়ে কর্মরত সব স্তরের জনবলের কাজের গুরুত্ব ও ভিন্নতা বিবেচনা করে 'সচিবালয় ভাতা' এবং 'রেশন সুবিধা' চালুর যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং জুডিশিয়ারি ক্যাডারভুক্ত জনবলের জন্য বিদ্যমান বিভিন্ন বিশেষ ভাতা বা সুবিধার উল্লেখ করা হয়েছে।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভাতার পরিবর্তনের প্রস্তাব

উচ্চতর বেতন সুবিধা: টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড, বিশেষ ইনক্রিমেন্টসহ অন্যান্য সুবিধাগুলো পুনরায় চালু করা অথবা ৪টি উচ্চতর গ্রেড দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ভাতা বৃদ্ধি: ১০ম গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের জন্য 'টিফিন ভাতা' ২০০ থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা এবং 'যাতায়াত ভাতা' ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার ৫০০ টাকা করার এবং এই সুবিধাগুলোতে তাদের অন্তর্ভুক্তির দাবি জানানো হয়েছে।

শিক্ষা ও চিকিৎসা সহায়তা: শিক্ষার স্তর (প্রাথমিক থেকে স্নাতক) অনুযায়ী প্রতি সন্তানের (অনধিক ২টি) জন্য ২ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত শিক্ষা সহায়তা ভাতা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। একইভাবে, বয়স বাড়ার সঙ্গে চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধির কথা বিবেচনা করে কর্মচারীদের বয়স ৪০ বছর পর্যন্ত ৫ হাজার, ৪০-৫০ বছর পর্যন্ত ৭ হাজার এবং পরবর্তী সময়ের জন্য ১০ হাজার টাকা চিকিৎসা ভাতা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে।

নববর্ষ ভাতা: বর্তমানে মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে দেওয়া 'নববর্ষ ভাতা'র পরিমাণ মূল বেতনের ৮০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

কর্মচারী কল্যাণ: কর্মচারীদের জন্য 'স্বাস্থ্যবিমা' চালু করা, তাদের করের আওতায় আনা এবং প্রদত্ত করের ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর 'পেনশন' সুবিধা নিশ্চিত করার প্রস্তাবও রয়েছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত কাজের জন্য অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত এই পে-কমিশন ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেশ করবে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়েছিল।

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ