ঢাকা, সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪ ভাদ্র ১৪৩২

শেয়ার কারসাজিতে ১২ জনকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা জরিমানা: বিএসইসি

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৮ ২২:৫০:৩২
শেয়ার কারসাজিতে ১২ জনকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা জরিমানা: বিএসইসি

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি সাফকো স্পিনিং মিলস লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির দায়ে ১২ জন ব্যক্তিকে মোট ৩ কোটি ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বাজারের স্বচ্ছতা ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কমিশনের কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২ মে থেকে ২০ জুন পর্যন্ত সময়ে অভিযুক্তরা একে অপরের সঙ্গে যোগসাজশ করে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে সাফকো স্পিনিংয়ের শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়েছিলেন। এই সময়ের মধ্যে কোম্পানির শেয়ারের দাম ১০ টাকা থেকে বেড়ে ৩১ টাকা ৫০ পয়সায় পৌঁছায়, যা মাত্র এক মাস ১৮ দিনে ২১৪.২% বৃদ্ধি নির্দেশ করে। এই কারসাজির মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করে অভিযুক্তরা বিপুল পরিমাণ মুনাফা হাতিয়ে নেন।

তদন্তে উঠে আসা মূল কারিগর ও সহযোগীরা:

তদন্তে জানা গেছে, সাফকো স্পিনিংয়ের শেয়ার কারসাজিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন মো. সজিব হোসেন ও মো. সুলেমান। তাদের সহযোগিতা করেছেন আরও ১০ জন ব্যবসায়ী: মো. শরিফ, তাসলিমা বেগম, আব্দুল কুদ্দুস আমিন, একেএম খলিলুর রহমান, নুরুন্নেসা সাকি, মো. বেলাল হোসেন, আরিফা বেগম লাকি, তারান্নুম সাফি, মাহমুদা আক্তার ও কাজী মহিউদ্দীন আহমেদ।

জরিমানার বিস্তারিত:

বিএসইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মো. সজিব হোসেনকে সর্বোচ্চ ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা এবং মো. সুলেমানকে ৬৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অন্যান্য অভিযুক্তদের মধ্যে মো. শরিফকে ৩৩ লাখ, তসলিমা বেগম ও সজিব হোসেনকে যৌথভাবে ২৭ লাখ, আব্দুল কুদ্দুস আমিনকে ২৭ লাখ, একেএম খলিলুর রহমানকে ২৪ লাখ, নুরুন্নেসা সাকিকে ১৯ লাখ, মো. বেলাল হোসেনকে ৯ লাখ, আরিফা বেগম লাকিকে ৮ লাখ, তারান্নুম সাফিকে ৪ লাখ ৫০ হাজার এবং মাহমুদা আক্তার ও কাজী মহিউদ্দীন আহমেদকে ২ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

বিএসইসির মতে, অভিযুক্তরা ইচ্ছাকৃতভাবে বাজারে কৃত্রিমতা সৃষ্টি করে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করেছেন, যার ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, অভিযুক্তদের ৩০ দিনের মধ্যে নির্ধারিত অর্থ কমিশনের অনুকূলে জমা দিতে হবে, অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাফকো স্পিনিংয়ের বর্তমান অবস্থা:

সাফকো স্পিনিং মিলস ২০০০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় এবং বর্তমানে কোম্পানিটি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে। সর্বশেষ ২০২২ সালের হিসাব বছরের পর কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য মাত্র ২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে এবং এরপর আর কোনো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেনি।

কোম্পানিটির মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৩০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৭.০৮ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৬২.৯২ শতাংশ শেয়ার। এই কারসাজির ঘটনা বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার সক্রিয়তা এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার প্রতি তাদের অঙ্গীকারকে তুলে ধরে।

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ