ঢাকা, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২

ওসি দাওয়াত খাইয়ে গ্রেপ্তার করলেন যুবলীগ নেতাকে; তোলপাড় শরীয়তপুর!

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৩ ১৮:৫১:০২
ওসি দাওয়াত খাইয়ে গ্রেপ্তার করলেন যুবলীগ নেতাকে; তোলপাড় শরীয়তপুর!

শরীয়তপুরের পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ আহমেদ সেলিম এক স্থানীয় যুবলীগ নেতাকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানোর পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন। সমালোচনার ঝড় সামাল দিতে ওই যুবলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর পরেও শেষ রক্ষা হলো না ওসির। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাকে ক্লোজড (প্রত্যাহার) করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।

শনিবার বিকেলে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ঘটনার সূত্রপাত:

জানা যায়, গতকাল শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ওসি পারভেজ আহমেদ সেলিম থানার ভেতরে নিজ উদ্যোগে একটি মাসিক ভোজসভার আয়োজন করেন। এই ভোজসভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দেয় নাওডোবা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মোক্তার বেপারীর উপস্থিতি। তাকেও এই ভোজসভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই রাজনৈতিক ও সচেতন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। প্রশ্ন উঠতে থাকে, একজন পুলিশ কর্মকর্তা কিভাবে একজন রাজনৈতিক নেতাকে থানার অভ্যন্তরে আয়োজিত ভোজসভায় আমন্ত্রণ জানাতে পারেন।

দাওয়াত খাইয়েই গ্রেপ্তার!

সমালোচনার মুখে পড়ে ওসি পারভেজ আহমেদ সেলিম নিজের দায় এড়াতে এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে এক নাটকীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভোজসভার কয়েক ঘণ্টা পর, শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে নাওডোবার কালু বেপারী কান্দির নিজ বাসা থেকে যুবলীগ নেতা মোক্তার বেপারীকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ওসি তার বিরুদ্ধে ওঠা সমালোচনা থেকে বাঁচতে এবং নিজের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে রাতারাতি এই গ্রেপ্তারের নাটক সাজিয়েছেন। তাদের মতে, দুপুরের দাওয়াতে সসম্মানে অংশ নেওয়ার পর রাতের আঁধারে একই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

ওসির ব্যাখ্যা এবং জনরোষ:

গ্রেপ্তারের পর ওসি পারভেজ আহমেদ সেলিম দাবি করেন যে, মোক্তার বেপারী বাজার কমিটির সভাপতি হিসেবে ভোজসভায় উপস্থিত ছিলেন এবং পরবর্তীতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে এই ব্যাখ্যা স্থানীয়দের ক্ষোভ প্রশমিত করতে পারেনি। বরং এটি আগুনে ঘি ঢেলেছে এবং ওসির বিরুদ্ধে জনরোষ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণ মানুষ এই ব্যাখ্যাকে অজুহাত হিসেবে দেখছে এবং ওসির আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ:

পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম জানান, শনিবার সকালে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পারভেজ আহমেদ সেলিমকে প্রত্যাহার করে শরীয়তপুর পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, "ঘটনার বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলছে। তদন্তে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"

এই ঘটনা শরীয়তপুরের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনার তদন্তে কী বেরিয়ে আসে এবং ওসির বিরুদ্ধে কী ধরনের বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেদিকেই এখন সবার দৃষ্টি।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ