ঢাকা, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৭ আশ্বিন ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

ব্যালন ডি’অর দেম্বেলের! বার্সার 'ব্যর্থ' তারকা এখন পিএসজির নায়ক

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২২ ০৮:২০:১০
ব্যালন ডি’অর দেম্বেলের! বার্সার 'ব্যর্থ' তারকা এখন পিএসজির নায়ক

ফুটবল বিশ্বে আজ একটাই গুঞ্জন—কে পাচ্ছেন ব্যালন ডি’অর? প্যারিসের ঝলমলে মঞ্চে উসমান দেম্বেলের হাতেই কি উঠতে চলেছে ফুটবলের মর্যাদাপূর্ণ এই সোনালি ট্রফি? ইঙ্গিত তেমনই। একসময় বার্সেলোনার হয়ে নিজেকে হারিয়ে খোঁজা দেম্বেলে এখন পিএসজির সাফল্যের অন্যতম প্রতীক, আর এই পারফরম্যান্সই তাঁকে নিয়ে এসেছে ব্যালন ডি’অরের দোরগোড়ায়।

২০১৭ সালে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড ছেড়ে বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার পর দেম্বেলের ক্যারিয়ারে লেগেছিল বারবার চোটের কালো ছায়া। ছয় বছর ধরে তাঁর নামের পাশে যোগ হয়েছিল হতাশা আর মাঠের বাইরের নানা বিতর্ক, যা তাঁর প্রতিভার সঠিক মূল্যায়ন করতে দেয়নি। কিন্তু ২০২৩ সালের আগস্টে তিনি যখন প্যারিস সেন্ট-জার্মেইতে পাড়ি জমান, তখন যেন তাঁর ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে।

পিএসজি তখন এক যুগসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। লিওনেল মেসি ও নেইমারের প্রস্থান, সঙ্গে কিলিয়ান এমবাপ্পের সম্ভাব্য বিদায়—এই পরিস্থিতিতে পিএসজিকে নতুন এক পোস্টার বয় দরকার ছিল। লুইস এনরিকের অধীনে দল যখন নতুনভাবে সাজছে, ঠিক তখনই জ্বলে ওঠেন দেম্বেলে। একঝাঁক তরুণ প্রতিভাকে নিয়ে পিএসজি ইউরোপে কতটা সফল হবে, তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান ছিলেন, কিন্তু দেম্বেলে সেই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছেন।

ব্যালন ডি’অর একজন ফুটবলারের ব্যক্তিগত সাফল্যের চূড়ান্ত স্বীকৃতি। দীর্ঘকাল ধরে এই পুরস্কারটি লিওনেল মেসি (৮) ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (৫) নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিলেও, এখন সেই আধিপত্য শেষ। গত বছর ম্যানচেস্টার সিটির মিডফিল্ডার রদ্রি যেমন অপ্রত্যাশিতভাবে এই পুরস্কার জিতেছিলেন, এবার দেম্বেলেও ব্যক্তিগত নৈপুণ্য ও দলীয় সাফল্যে বাকিদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে আছেন।

এবারের ব্যালন ডি’অরের জন্য বিবেচিত সময়কাল ছিল ২০২৪ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ১৩ জুলাই পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে লিভারপুলের মোহাম্মদ সালাহ (২৯ গোল, ১৮ অ্যাসিস্ট), রিয়াল মাদ্রিদের কিলিয়ান এমবাপ্পে (৪৪ গোল), এবং বার্সেলোনার ইয়ামাল ও রাফিনিয়ার মতো তারকারাও উজ্জ্বল পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। তবে সার্বিক বিবেচনায় দেম্বেলের পাল্লাই ভারী।

২০২৪-২৫ মৌসুম পিএসজির জন্য ছিল এক ঐতিহাসিক বছর। লিগ আঁ, ফ্রেঞ্চ কাপ এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ—এই তিনটি শিরোপা জিতে তারা ট্রেবল অর্জন করেছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে তারা ইউরোপের সেরা ক্লাবের খেতাব অর্জন করে। এই ঐতিহাসিক সাফল্যের অন্যতম কারিগর ছিলেন দেম্বেলে। পুরো মৌসুমে তিনি ৩৫টি গোল করেছেন এবং ১৬টি গোলে সহায়তা করেছেন।

মৌসুমের প্রথম দিকে (২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৮ ম্যাচে মাত্র ৫ গোল) তাঁর পারফরম্যান্স কিছুটা মন্থর থাকলেও, নতুন বছর অর্থাৎ ১ জানুয়ারি থেকে তিনি যেন এক অন্য দেম্বেলেতে রূপান্তরিত হন। মৌসুমের শেষ পর্যন্ত ২৯ ম্যাচে ২৫ গোল এবং ৮ গোলে সহায়তা করেন তিনি। ২০২৫ সালের প্রথম ছয়টি ম্যাচে টানা গোল করে সকলের নজর কাড়েন। এক সপ্তাহের মধ্যে দুটি হ্যাটট্রিক—একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে স্টুটগার্টের বিপক্ষে এবং আরেকটি লিগ আঁতে ব্রেস্তের বিপক্ষে—তাঁর ফর্মের চূড়ান্তে পৌঁছানোর প্রমাণ দেয়। ২০২৫ সালের প্রথম ২০ ম্যাচে তাঁর গোল সংখ্যা ছিল ২৪, যা ছিল অবিশ্বাস্য।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পিএসজির জয়ে দেম্বেলের অবদান ছিল অসামান্য। তিনি ৮ গোল ও ৬ অ্যাসিস্টসহ মোট ১৪টি গোলে সরাসরি অবদান রেখেছিলেন, যা ফরাসি কোনো ক্লাবের হয়ে এক মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সর্বোচ্চ। এই প্রতিযোগিতায় তিনি ৩৮টি সুযোগ তৈরি করেছিলেন, যা বার্সেলোনার রাফিনিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ। লিগ আঁতেও ২১ গোল ও ৮ অ্যাসিস্টসহ মোট ২৯টি গোলে তাঁর সরাসরি অবদান ছিল। ক্লাব বিশ্বকাপ বাদ দিলে ২০২৪-২৫ মৌসুমে তাঁর মোট ৪৮টি গোলে সরাসরি অংশগ্রহণ ছিল।

দেম্বেলের ভূমিকা শুধু গোল করা বা করানোতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি মাঠে তাঁর বহুমুখীতা দিয়ে কোচকে অনেক বিকল্প দিয়েছেন এবং তাঁর পারফরম্যান্স সতীর্থদেরও সেরাটা দিতে অনুপ্রাণিত করেছে। একসময় যখন ইউরোপের সেরা দলগুলোর তালিকা থেকে পিএসজির নাম বাদ দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছিল, ঠিক তখনই দেম্বেলে ত্রাতা হয়ে দলকে সাফল্যের শিখরে নিয়ে যান।

আজ রাতে ব্যালন ডি’অরের সোনালি ট্রফি যদি দেম্বেলের হাতে ওঠে, তবে তা কেবল তাঁর ব্যক্তিগত সাফল্যেরই স্বীকৃতি হবে না, এটি পিএসজির ইতিহাস বদলে দেওয়া এক মৌসুমের উপর সিলমোহরও দেবে। বার্সেলোনার কঠিন বাতাসে মানিয়ে নিতে না পারলেও, প্যারিসের আকাশে দেম্বেলে ডানা মেলে উড়েছেন সাফল্যের সঙ্গে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ