ঢাকা, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৭ আশ্বিন ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

পিআর ছাড়া ভোট নয়? জামায়াতের ৫ দাবি, শঙ্কা বাড়ছে

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২২ ১৬:১৭:২০
পিআর ছাড়া ভোট নয়? জামায়াতের ৫ দাবি, শঙ্কা বাড়ছে

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে, তখন সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি একটি কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এই পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে, অন্যদিকে বিএনপি এর বিরোধিতা করছে। এই পরিস্থিতিতে, ফেব্রুয়ারিতে সম্ভাব্য নির্বাচন ঘিরে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

জামায়াতের কৌশল ও আন্দোলনের রূপরেখা

জামায়াতে ইসলামী সম্প্রতি ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের সাফল্যের পর আসন্ন নির্বাচনেও ভালো ফল করার বিষয়ে আশাবাদী। দলটি জুলাই সনদের ভিত্তি ও পিআর পদ্ধতিসহ ৫ দফা দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছে। এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হলো জনমত তৈরি করা এবং ভোটের মাঠে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করা। জামায়াতের নীতিনির্ধারকরা কোনো অবস্থাতেই এই নির্বাচন হাতছাড়া করতে চাইছেন না। এজন্য রাজপথে আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনি প্রচারণার ওপরও জোর দিচ্ছেন। দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীরা এ বিষয়ে নির্দেশনা পেয়েছেন।

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জামায়াতের দৃঢ় অবস্থান

দলটির অন্তত পাঁচজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জামায়াত আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এর বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। এরই অংশ হিসেবে, ৩০০ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ, মতবিনিময় সভা এবং উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে প্রচারে ব্যস্ত রয়েছেন। তরুণ ভোটারদের লক্ষ্য করে অনলাইন ক্যাম্পেইনের প্রস্তুতিও চলছে জোরেশোরে। জামায়াতের আমির ও সেক্রেটারি জেনারেলসহ শীর্ষ নেতারা নির্বাচনি মাঠে সক্রিয় সময় পার করছেন। তাদের ৫ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনকে নির্বাচনেরই একটি কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।

পিআর পদ্ধতি ও সংস্কারের দাবি: নেতাদের বক্তব্য

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ জোর দিয়ে বলেছেন, "আমরা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্যই এতকিছু করছি। জনগণের ও দেশের স্বার্থে রাজপথে আন্দোলন জরুরি।" তিনি সংস্কারের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, "পুরোনো আইনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। যদি সংস্কার না হয়, তবে নির্বাচন কিসের ওপর হবে?" দাবি আদায় না হলে নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, "এটা সময়ের ওপর নির্ভর করবে। জনগণ যা চাইবে, সরকার তো তা-ই করবে।"

জামায়াতের অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জানান, "ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হবে এবং আমাদের সব প্রস্তুতি আছে। জুলাই সনদের ভিত্তিতে ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আমাদের মূল দাবি।" দাবি আদায় না হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, "আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি। অবস্থার আলোকে ও জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী যেকোনো সিদ্ধান্ত জামায়াত নিতে পারে।" নির্বাচন বয়কটের সম্ভাবনা নাকচ করে তিনি বলেন, "নির্বাচনই তো সমাধান। বয়কটের প্রশ্নই ওঠে না।"

জোট গঠনের তোড়জোড় ও বিশ্লেষকদের মতামত

সূত্রমতে, জামায়াতসহ কয়েকটি ইসলামী দল জোট গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার আগে এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর সম্ভাবনা কম।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক মাসুদ কামাল মনে করেন, জামায়াতের আন্দোলন নির্বাচনের আগে একটি রাজনৈতিক আওয়াজ তোলার কৌশল। তিনি বলেন, "পিআর পদ্ধতি এই মুহূর্তে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তবে জামায়াত পিআর নিয়ে প্রচার চালাবে। আমার ধারণা, আন্দোলন করলেও জামায়াত এই নির্বাচনে অংশ নেবে।"

জামায়াতের ৫ দফা দাবিগুলো হলো:

জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন।

সংসদের উভয়কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু।

অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা।

ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা।

স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ