ঢাকা, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪ আশ্বিন ১৪৩২

বাবার জমি নিজের নামে! জটিলতা এড়াতে জানুন নামজারি প্রক্রিয়া

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৯ ২০:১১:৪৭
বাবার জমি নিজের নামে! জটিলতা এড়াতে জানুন নামজারি প্রক্রিয়া

বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া যেমন আনন্দের, তেমনি এর যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বাবার জমি নিজের নামে নামজারি বা খারিজ না করে দীর্ঘদিন ফেলে রাখেন, যা ভবিষ্যতে নানা জটিলতার সৃষ্টি করে। এর ফলে জমি বিক্রি, বন্ধক রাখা, মর্গেজ দেওয়া, এমনকি ব্যাংক থেকে হোম লোন বা সিসি লোন নেওয়ার মতো বিষয়গুলো অসম্ভব হয়ে পড়ে।

নামজারি কী?

সহজ ভাষায়, নামজারি হলো একটি সরকারি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে পূর্ববর্তী মালিকের নাম বাদ দিয়ে নতুন মালিকের নাম সরকারি নথিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই প্রক্রিয়াকে অঞ্চলভেদে কর্তন, মিউটেশন বা জমা একত্রীকরণও বলা হয়ে থাকে। জমির মালিকানা বৈধভাবে আপনার নামে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এই প্রক্রিয়া অপরিহার্য।

নামজারির ধাপসমূহ: একটি বিস্তারিত গাইড

বাবার সম্পত্তি নিজের নামে নামজারি করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করতে হয়। নিচে এর বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হলো:

১. আবেদন প্রক্রিয়া:

নামজারির জন্য প্রতিটি উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা অ্যাসিল্যান্ডের কার্যালয়ে আবেদন করতে হয়। এই আবেদন এখন অনলাইন এবং অফলাইন উভয় পদ্ধতিতেই করা যায়, যা প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজলভ্য করেছে।

২. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

আবেদন করার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র জমা দিতে হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:

ওয়ারিশ সনদপত্র: এটি আপনার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা সিটি কর্পোরেশনের কমিশনারের কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করতে হবে।

আবেদনকারী ও ওয়ারিশদের পাসপোর্ট সাইজের ছবি: সাম্প্রতিক তোলা স্পষ্ট ছবি প্রয়োজন।

আবেদনকারী ও ওয়ারিশদের এনআইডি কার্ডের ফটোকপি: জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।

পিতার নামে থাকা দলিলের ফটোকপি: যে জমি নামজারি করতে চান, সেই জমির জন্য পিতার নামে থাকা মূল দলিলের ফটোকপি আবশ্যক।

সর্বশেষ খতিয়ান ও তার সার্টিফায়েড কপি: জমির সর্বশেষ খতিয়ান এবং এর একটি সত্যায়িত কপি সংগ্রহ করতে হবে।

৩. আবেদন ফি:

নামজারি প্রক্রিয়ার জন্য নির্ধারিত সরকারি ফি প্রায় ১১৭০ টাকা। এই ফি সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়।

৪. যাচাই-বাছাই ও শুনানি:

আবেদন জমা দেওয়ার পর অ্যাসিল্যান্ড আপনার কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করবেন। এই ধাপে আবেদনকারী এবং সংশ্লিষ্ট ওয়ারিশদের ডেকে একটি শুনানি গ্রহণ করা হয়, যেখানে কাগজপত্র এবং তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়।

৫. নতুন খতিয়ান ও খাজনার রশিদ:

সবকিছু সঠিক ও নির্ভুল পাওয়া গেলে আপনার নামে একটি নতুন খতিয়ান তৈরি হবে। এই খতিয়ানের সাথে একটি খাজনার রশিদও দেওয়া হবে। জমির ধরন ও পরিমাণ অনুযায়ী এই খাজনার পরিমাণ সাধারণত ২০০ থেকে ৫০০ টাকা হয়ে থাকে।

৬. খাজনা পরিশোধ:

নতুন খতিয়ান এবং খাজনার রশিদ হাতে পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে গিয়ে নির্ধারিত খাজনা পরিশোধ করতে হবে। খাজনা পরিশোধের পর আপনি একটি পাকা রশিদ পাবেন, যা আপনার মালিকানার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।

মালিকানা নিশ্চিতকরণ এবং সুবিধা:

নিয়মিতভাবে খাজনা পরিশোধ করা এবং নামজারি সম্পন্ন করা থাকলে আপনার সম্পত্তি বৈধভাবে আপনার মালিকানায় থাকবে। এর ফলে আপনি যেকোনো সময় নির্দ্বিধায় জমি বিক্রি করতে পারবেন, ব্যাংক থেকে বন্ধক বা মর্গেজ রেখে লোন নিতে পারবেন। এতে সম্পত্তির আইনি বৈধতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।

সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের নিয়ম:

জমি বিক্রির জন্য সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে অবশ্যই নামজারি এবং হালনাগাদ খাজনার রশিদ থাকা আবশ্যক। নামজারিবিহীন জমি বিক্রি করা আইনত সিদ্ধ নয় এবং এটি ভবিষ্যতে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্যই বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে।

সুতরাং, বাবার জমি উত্তরাধিকার সূত্রে পেলে দ্রুততম সময়ে তা নিজের নামে নামজারি করিয়ে নিন এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সকল জটিলতা থেকে মুক্ত থাকুন। একটি বৈধ ও সুরক্ষিত সম্পত্তির মালিকানা আপনার আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ