ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫ আশ্বিন ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

বিএসইসির ২৩ কর্মকর্তার বিভাগীয় মামলা তদন্তে নতুন বোর্ড: বিতর্ক ও স্বচ্ছতার প্রশ্ন

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ৩০ ২৩:৫২:৪০
বিএসইসির ২৩ কর্মকর্তার বিভাগীয় মামলা তদন্তে নতুন বোর্ড: বিতর্ক ও স্বচ্ছতার প্রশ্ন

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তার ২৩ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনিত বিভাগীয় মামলা তদন্তের জন্য একটি নতুন তদন্ত বোর্ড গঠন করেছে। এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, যেখানে বিএসইসি সরকারের কাছে কমিশনের বাইরের কর্মকর্তাদের দিয়ে বোর্ড গঠনের অনুরোধ জানিয়েছিল।

এর পরিপ্রেক্ষিতে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) সম্প্রতি তিন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বোর্ডের সদস্য হিসেবে মনোনীত করেছে। তাঁরা হলেন—অতিরিক্ত সচিব মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস, যুগ্ম সচিব সানিয়া আকতার এবং উপসচিব মোহাম্মদ অতুল মন্ডল। এই সিদ্ধান্তটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন বিএসইসি অভ্যন্তরীন অস্থিরতা ও প্রতিবাদের মুখোমুখি হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ সংকট ও কর্মকর্তাদের আন্দোলন:

চলতি বছরের মার্চ মাসে বিএসইসির কর্মকর্তারা চেয়ারম্যান ও তিনজন কমিশনারের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন করেন। এই আন্দোলনের এক পর্যায়ে কর্মকর্তারা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে এবং সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে পুরো অফিস অবরুদ্ধ করে রাখেন, যার ফলে কমিশন কার্যত অচল হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, কমিশন সদস্যদের শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সহায়তায় অফিস ত্যাগ করতে হয়।

আইনি পদক্ষেপ ও বরখাস্তের ঘটনা:

এই গুরুতর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয় এবং বিএসইসি জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ২৩টি বিভাগীয় মামলা রুজু করে। এপ্রিল মাসে, মার্চ মাসের প্রতিবাদে পরিষেবা বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে একজন নির্বাহী পরিচালক, তিনজন পরিচালক, অতিরিক্ত পরিচালক ও উপ-পরিচালকসহ মোট ২১ জন কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।

তদন্ত বোর্ডের প্রয়োজনীয়তা ও কমিশনের অবস্থান:

গত ৩১ আগস্ট এফআইডি-কে পাঠানো বিএসইসির একটি চিঠি অনুযায়ী, ২৭ জুলাই এক জরুরি বৈঠকে কমিশন এই সিদ্ধান্ত নেয় যে, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন এড়াতে বিএসইসির বাইরের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি তদন্ত বোর্ড গঠন করা আবশ্যক। চিঠিতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, "৫ ও ৬ মার্চ ২০২৫ তারিখের ঘটনা, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রকৃতি ও ধরন, তাদের পদবি এবং ন্যায্য ও স্বচ্ছভাবে বিভাগীয় তদন্ত পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে—ভয়ভীতিহীন ও নিরপেক্ষভাবে তদন্তের দায়িত্ব পালনের জন্য তদন্ত বোর্ডে সরকার থেকে উপযুক্ত সদস্য মনোনয়ন করা অপরিহার্য মনে করা হয়েছে।"

কমিশন আরও জানায় যে, পরিষেবা বিধি লঙ্ঘনের কারণে অভিযুক্ত ২৩ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ২৩ ও ২৪ জুলাই অভিযুক্তদের ব্যক্তিগতভাবে তাদের বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ দেওয়া হয়। শুনানি শেষে ২৭ জুলাই কমিশন জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, প্রতিটি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পর্যাপ্ত ভিত্তি রয়েছে।

কমিশন মনে করে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তি আরোপের পর্যাপ্ত কারণ রয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে প্রতিটি বিভাগীয় মামলার জন্য পৃথক তদন্ত কর্মকর্তা বা বোর্ড নিয়োগ না করে একটি একক তদন্ত বোর্ড নিয়োগ করাকেই যথাযথ ও প্রয়োজনীয় মনে করা হয়।

আন্দোলনের পেছনের কারণ:

মার্চ মাসের আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে ৪ মার্চ, যখন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান-কে কার্যকালের অনিয়মের প্রমাণ দেখিয়ে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। একই সময়ে, কমিশন আরও কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে এবং অনেকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এই সকল সিদ্ধান্ত বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে। সাইফুর রহমানের বাধ্যতামূলক অবসরের পরের দিনই কর্মকর্তারা চেয়ারম্যান-কমিশনারদের ফ্লোরে একত্রিত হন।

চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের অভিযোগ ছিল যে, কর্মকর্তারা তাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন, যার ফলস্বরূপ তাদের সেনাবাহিনীর সহায়তায় অফিস ছাড়তে হয়। এর পরদিন, ৬ মার্চ বিএসইসি কর্মকর্তারা ধর্মঘট পালন করেন। একই দিনে বিএসইসি চেয়ারম্যান তার সহকারী আশিকুর রহমানের মাধ্যমে শেরেবাংলা নগর থানায় ১৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

এই নতুন তদন্ত বোর্ড গঠনের মাধ্যমে বিএসইসি অভ্যন্তরীন এই জটিল পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার একটি পথ খুঁজছে। আশা করা যায়, এর মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ