ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫, ২২ আশ্বিন ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সুখবর: নতুন পে স্কেল আসছে কবে জানা গেল

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৭ ১৯:০১:৩০
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সুখবর: নতুন পে স্কেল আসছে কবে জানা গেল

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সুখবর! অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী জানুয়ারি মাস থেকেই নতুন পে স্কেল কার্যকর করার বিষয়ে দৃঢ়ভাবে অগ্রসর হচ্ছে। এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে আগামী ডিসেম্বরে চলতি বাজেট সংশোধনকালে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ এবং নতুন বেতন কাঠামো কার্যকরে একটি অধ্যাদেশ জারির পরিকল্পনা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে 'সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি'র বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, "বর্তমান সরকারের মেয়াদেই নতুন পে স্কেল বাস্তবায়ন করা হবে। আগামী বছরে এটি কার্যকর করতে হলে চলতি অর্থবছরের বাজেটেই অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে। ডিসেম্বরে বাজেট সংশোধনের সময় নতুন পে স্কেল কার্যকরের বিধান যুক্ত করা হবে।"

অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, নতুন বছরের শুরু থেকেই এই নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর করতে চায় সরকার।

পে কমিশনের অগ্রগতি: মতামত সংগ্রহ ও সুপারিশ চূড়ান্তকরণ

সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণে গত ২৪ জুলাই গঠিত পে কমিশন বর্তমানে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। কমিশন অনলাইনে বিভিন্ন ক্যাটাগরির চাকরিজীবীদের মতামত সংগ্রহ করছে, যা সুপারিশ প্রণয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

এক নজরে সরকারি কর্মীর সংখ্যা:

মোট সরকারি কর্মচারী: প্রায় ১৫ লাখ।

সশস্ত্র বাহিনী, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীসহ: প্রায় ২৪ লাখ।

বাজেটে বেতন-ভাতা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি:

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য ৮৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের (৮২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা) তুলনায় ১ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা বেশি।

নতুন পে স্কেলের সম্ভাব্য কাঠামো ও সুবিধা:

পে কমিশনের সূত্রগুলো জানিয়েছে, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গ্রেডের বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিদ্যমান পে স্কেলের তুলনায় বেতন বৃদ্ধির হারও চূড়ান্ত হয়নি, তবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই কমিশন তাদের সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দেবে।

গ্রেড ও অনুপাতের সম্ভাব্য চিত্র:

বর্তমানে সর্বোচ্চ (গ্রেড-১) ও সর্বনিম্ন (গ্রেড-২০) পদের বেতনের অনুপাত প্রায় ১০:১।

নতুন কাঠামোতেও এই অনুপাত ৮:১ থেকে ১০:১-এর মধ্যে থাকতে পারে।

গ্রেডের সংখ্যা কমানো হলেও এই অনুপাত বজায় রাখার সুপারিশ করা হবে।

ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির প্রস্তাবনা:

চিকিৎসা ভাতাসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হতে পারে।

অবসরোত্তর সময়ে কর্মচারীদের জন্য বাড়তি সুবিধার সুপারিশ করা হতে পারে।

কর্মচারীদের সন্তানদের শিক্ষা ভাতাও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল: নতুন ভাবনা

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের বেতন কাঠামো অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীরা বর্তমানে বেতন পাচ্ছেন, যেখানে ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সুপারিশে সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বাতিল করে ১০ বছর পর স্বয়ংক্রিয় পদোন্নতির ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। বর্তমান কমিশনও সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বাতিল করে পদোন্নতির প্রক্রিয়াকে আরও সরল করার প্রস্তাব দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা:

নতুন বেতন কাঠামোতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে গবেষণায় নিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী ও গবেষকদের জন্য বিশেষ ভাতার সুপারিশ করা হতে পারে। এই প্রণোদনামূলক ভাতা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির বিশেষজ্ঞদের জন্য প্রযোজ্য হবে, যা সামরিক বা বেসামরিক অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে না।

এই নতুন পে স্কেল সরকারি কর্মচারীদের আর্থিক সচ্ছলতা ও কর্মস্পৃহা বৃদ্ধিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে সংশ্লিষ্ট মহল আশা করছে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ