ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫, ২২ আশ্বিন ১৪৩২

MD Zamirul Islam

Senior Reporter

শেয়ারবাজারে শৃঙ্খলা: বিএসইসি চেয়ারম্যানের ৭টি সাহসী পদক্ষেপ!

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৭ ১৯:১৮:২০
শেয়ারবাজারে শৃঙ্খলা: বিএসইসি চেয়ারম্যানের ৭টি সাহসী পদক্ষেপ!

বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এক ঐতিহাসিক সংস্কারের পথে হাঁটছে। বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ সম্প্রতি 'বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ' উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই যুগান্তকারী পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি দৃঢ়ভাবে জানান, বাজারের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং সব ধরনের অপব্যবহার বা প্রতারণা বন্ধ করতে সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত সকল বিধিমালাকে একটি একক ও সুসংহত কাঠামোর অধীনে নিয়ে আসা হচ্ছে।

আইনি জটিলতা নিরসন ও শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক কাঠামো

চেয়ারম্যান মাকসুদ জোর দিয়ে বলেছেন, "বর্তমান কমিশন দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকেই বাজারে সকল প্রকার প্রতারণা রোধে অঙ্গীকারবদ্ধ।" এই প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে, বাজারে আইনি স্বচ্ছতা বাড়াতে কমিশন ইতোমধ্যে 'বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩' এবং 'সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯'—এই দুটি প্রধান আইনকে একীভূত করার কাজ শুরু করেছে। একই সাথে, সিকিউরিটিজ-সম্পর্কিত সমস্ত বিধিমালা ও নির্দেশাবলীকে এক জায়গায় সংকলন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে আইনি জটিলতা কমবে এবং বাজারে একটি স্বচ্ছ ও কার্যকর নিয়ন্ত্রক পরিবেশ তৈরি হবে, যা বাজারের ভিত্তিকে আরও মজবুত করবে।

অতীতের অনিয়মে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে বিএসইসি অতীতের সব ধরনের অনিয়ম মোকাবিলায় প্রস্তুত। চেয়ারম্যান জানান, দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বর্তমান কমিশন বাজারে ঘটে যাওয়া অতীতের অনিয়ম ও কেলেঙ্কারিগুলো খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করে। এই কমিটির দাখিল করা ১২টি প্রতিবেদনের মধ্যে সাতটি ক্ষেত্রে জড়িতদের বিরুদ্ধে কমিশন ইতোমধ্যে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। এই পদক্ষেপ বাজারে একটি সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, অনিয়মের দিন শেষ এবং অপরাধীরা আর পার পাবে না, যা বাজারের সততা ও জবাবদিহিতাকে নিশ্চিত করবে।

বিচার বিভাগের সহযোগিতা কামনা: আইনি প্রতিবন্ধকতা নিরসন

তবে, এসব কঠোর পদক্ষেপ বাস্তবায়নের পথে কিছু আইনি চ্যালেঞ্জও রয়েছে বলে বিএসইসি চেয়ারম্যান স্বীকার করেন। তিনি উল্লেখ করেন, "বেস্ট হোল্ডিংস এবং কোয়েস্ট বিডিসি-এর মতো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলায় চলমান রিট পিটিশন এবং আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বাস্তবায়ন আটকে আছে।" এই পরিস্থিতিতে, দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং তদন্তের ফলাফল কার্যকর করতে তিনি সরকার ও বিচার বিভাগের সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করেছেন। এর ফলে বাজারের সুশাসন প্রতিষ্ঠা আরও গতি পাবে।

প্রযুক্তি ও সুশাসনের সমন্বয়: তহবিল সুরক্ষাই মূল লক্ষ্য

বিএসইসি শুধু আইনি সংস্কারেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বাজারের গঠনগত উন্নতিতেও জোর দিচ্ছে। চেয়ারম্যান জানান, মিউচুয়াল ফান্ড খাতকে আরও শক্তিশালী করতে ট্রাস্টি, কাস্টোডিয়ান এবং অ্যাসেট ম্যানেজারদের ভূমিকা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। একই সাথে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে স্বতন্ত্র পরিচালকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সুশাসন ও স্বচ্ছতা আনা হচ্ছে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রতারণার মাধ্যমে তহবিল আত্মসাৎ রোধ করতে সমস্ত ব্রোকারেজ ফার্মকে একটি ট্যাম্পার-প্রুফ সমন্বিত ব্যাক-অফিস সফটওয়্যার সিস্টেমের আওতায় আনা হয়েছে। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে যে, গ্রাহকের তহবিল থাকবে সুরক্ষিত এবং কোনো রকম অপব্যবহারের সুযোগ থাকবে না।

বিএসইসি চেয়ারম্যান আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, "আমরা যদি এই বাজারকে প্রতারণামুক্ত করতে পারি এবং বিনিয়োগকারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারি, তবে এর সম্ভাবনা হবে সুদূরপ্রসারী।" বিএসইসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বর্তমান কমিশনের এই বহুমুখী উদ্যোগ একটি স্বচ্ছ, শক্তিশালী এবং আস্থাশীল শেয়ারবাজার প্রতিষ্ঠার দিকে স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ