ঢাকা, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

ভূমি মন্ত্রণালয়: ৯ দলিল বাতিল, নামজারিতে নতুন নিয়ম!

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১২ ১৪:৪৪:৪৬
ভূমি মন্ত্রণালয়: ৯ দলিল বাতিল, নামজারিতে নতুন নিয়ম!

ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ভূমি মন্ত্রণালয় এক ঐতিহাসিক নির্দেশনা জারি করেছে। এখন থেকে ৯ শ্রেণির নির্দিষ্ট দলিলের ভিত্তিতে জমির নামজারি করা যাবে না। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এবং ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের বিশেষ নির্দেশনা ও ভূমি সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদের তত্ত্বাবধানে এই কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মূল লক্ষ্য হলো ভূমি সংক্রান্ত জালিয়াতি, প্রতারণা এবং দীর্ঘদিনের জটিলতা নিরসন করা। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশের ভূমি প্রশাসন ব্যবস্থায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

কেন এই নতুন নির্দেশনা?

ভূমি মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনার প্রধান কারণ হলো ত্রুটিপূর্ণ দলিল, প্রতারণামূলক লেনদেন এবং আইনি জটিলতার কারণে সৃষ্ট অসংখ্য নামজারি সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবিলা করা। এতে করে সাধারণ মানুষ যেমন সুরক্ষিত থাকবেন, তেমনি সরকারি ভূমি রেকর্ডের নির্ভুলতাও নিশ্চিত হবে।

যে ৯ শ্রেণির দলিলের নামজারি হবে না:

১. ত্রুটিপূর্ণ সাবকবলা দলিল:

যদি সাবকবলা দলিলে দাগ নম্বর, ক্রেতা-বিক্রেতার নাম-ঠিকানা, সনাক্তকারীর তথ্য, সাক্ষীর নাম বা চৌহদ্দি বর্ণনায় ভুল থাকে, তবে সেই দলিল দিয়ে নামজারি আবেদন মঞ্জুর হবে না। দলিলের মৌলিক তথ্য অবশ্যই নির্ভুল ও সুনির্দিষ্ট হতে হবে।

২. শর্তসাপেক্ষ হেবা দলিল:

রক্ত সম্পর্কীয় ১৪টি উত্তরাধিকার শ্রেণির বাইরে বা শর্তসাপেক্ষ হেবা দলিল যা প্রতারণামূলকভাবে বা অসাধু মহলের যোগসাজশে তৈরি করা হয়েছে, সেগুলোর নামজারি হবে না। হেবা দলিলে স্বচ্ছতা ও আইনি বৈধতা অপরিহার্য।

৩. প্রতারণার মাধ্যমে গৃহীত হেবা:

আত্মীয়স্বজনের অসুস্থতা বা মানসিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে যদি কোনো সম্পত্তি হেবা করা হয় এবং পরবর্তীতে তা প্রমাণিত হয়, তাহলে সেই সম্পত্তির নামজারি বাতিল করা হবে।

৪. পূর্বে নামজারি হওয়া জমির পুনরায় নামজারি:

যে জমি একবার অন্য কারো নামে নামজারি হয়ে গেছে, সেই জমির জন্য একই দলিলের ভিত্তিতে নতুন করে নামজারি দেওয়া হবে না। তবে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে (যেমন: মিসকেস বা খন্ডন) কোনো পরিবর্তন এলে তা ভিন্ন বিষয়।

৫. অর্পিত সম্পত্তি সংক্রান্ত দলিল:

জমি ক্রয়ের সময় যদি দেখা যায় যে সম্পত্তিটি অর্পিত সম্পত্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত, তাহলে সেই জমির নামজারি আবেদন সরাসরি প্রত্যাখ্যান করা হবে। অর্পিত সম্পত্তির উপর কোনো প্রকার মালিকানা দাবি গ্রহণযোগ্য হবে না।

৬. খাস জমি সম্পর্কিত দলিল:

যদি কোনো দলিল অনুযায়ী ক্রয়কৃত জমির মধ্যে খাস জমি অন্তর্ভুক্ত থাকে, তবে সেই দলিল বৈধ বলে গণ্য হবে না এবং নামজারি আবেদন বাতিল করা হবে। খাস জমির মালিকানা সম্পূর্ণভাবে সরকারের।

৭. বিক্রেতার মালিকানার চেয়ে বেশি অংশ বিক্রয়:

বিক্রেতা তার প্রকৃত মালিকানার চেয়ে বেশি পরিমাণ জমি দলিল করে বিক্রি করে থাকলে, সেই অতিরিক্ত অংশের জন্য নামজারি হবে না। কেবল বিক্রেতার বৈধ মালিকানা অনুযায়ীই নামজারি সম্ভব।

৮. বন্টননামা ছাড়া উত্তরাধিকার সম্পত্তি বিক্রয়:

ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি যদি বন্টননামা (বাটোয়ারা দলিল) ছাড়া বিক্রি করা হয় এবং সেই ভিত্তিতে নামজারি চাওয়া হয়, তাহলে তা মঞ্জুর হবে না। একাধিক ওয়ারিশের ক্ষেত্রে সকলের সম্মিলিত বাটোয়ারা দলিল বা যৌথ আবেদন আবশ্যক।

৯. চলমান মামলা আছে এমন সম্পত্তি:

যে জমি বা তার মালিকানা নিয়ে আদালতে কোনো মামলা চলমান আছে, সেই সম্পত্তির নামজারি মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। মালিকানা সুস্পষ্টভাবে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নামজারি সম্ভব নয়।

দুর্নীতি ও প্রভাবমুক্ত নামজারি প্রক্রিয়া:

নির্দেশনায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, উপরোক্ত কোনো ক্ষেত্রেই ঘুষ বা অন্যান্য অবৈধ প্রভাব প্রয়োগ করে নামজারি করানো সম্ভব হবে না। এসিল্যান্ডগণ সংবিধান ও নিয়ম অনুযায়ী এ ধরনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে বাধ্য থাকবেন। ভূমি মন্ত্রণালয় জনগণকে সতর্ক করেছে যে, দলিল তৈরি ও নামজারি করার সময় দলিলের সঠিকতা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করা অত্যাবশ্যক।

ভবিষ্যৎ প্রভাব:

ভূমি মন্ত্রণালয়ের এই কঠোর নির্দেশনাকে বিশ্লেষকরা ভূমি প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে দেখছেন। এটি ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ কমাতে এবং সাধারণ মানুষের ভোগান্তি লাঘবে সহায়ক হবে। তবে, এর প্রকৃত কার্যকারিতা স্থানীয় ভূমি অফিসগুলোর বাস্তব প্রয়োগ এবং জনগণের সচেতনতার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ