ঢাকা, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৬ আশ্বিন ১৪৩২

MD Zamirul Islam

Senior Reporter

বিএসইসি'র বড় পদক্ষেপ: ব্রোকার-বিনিয়োগকারীর বিরোধ মীমাংসায় খুলল নতুন অধ্যায়

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১১ ১৭:৫৩:৪৩
বিএসইসি'র বড় পদক্ষেপ: ব্রোকার-বিনিয়োগকারীর বিরোধ মীমাংসায় খুলল নতুন অধ্যায়

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা ও আস্থা বাড়াতে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ব্রোকার হাউজ এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সৃষ্ট দীর্ঘদিনের বিরোধ দ্রুত ও কার্যকরভাবে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে দুটি নতুন প্রবিধানমালা অনুমোদন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের শেয়ারবাজারে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো।

অনুমোদিত নতুন প্রবিধানমালা:

সম্প্রতি বিএসইসি’র এক গুরুত্বপূর্ণ সভায় 'ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (বিরোধ নিষ্পত্তি) প্রবিধানমালা, ২০২৫' এবং 'চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (বিরোধ নিষ্পত্তি) প্রবিধানমালা, ২০২৫' অনুমোদিত হয়েছে। এই প্রবিধানমালাগুলো সরকারি গেজেটে প্রকাশের পরপরই কার্যকর হবে, যা পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য এক দারুণ খবর।

মূল লক্ষ্য ও সুবিধা:

বিএসইসি সূত্র মতে, এই উদ্যোগের প্রধান উদ্দেশ্য হলো:

দ্রুত সালিশ প্রক্রিয়া: সালিশ প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত এবং সহজতর করা।

অভিযোগ হ্রাস: ব্রোকার ও তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগের সংখ্যা কমানো।

তদন্তের চাপ কমানো: বিএসইসি’র ওপর থেকে তদন্তের চাপ কমিয়ে আনা, যাতে কমিশন আরও গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারে।

পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘদিন ধরে ব্রোকারেজ হাউজ বা তালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে ছোটখাটো জটিলতায় ভোগেন। অনেক সময় অভিযোগ নিষ্পত্তি হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়, যা তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি করে। নতুন প্রবিধানমালা এই সমস্যাগুলোর দ্রুত ও কার্যকর সমাধান দেবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

সালিশ প্যানেল ও রেজিস্ট্রারের ভূমিকা:

নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, প্রতিটি স্টক এক্সচেঞ্জে একটি করে 'সালিশ প্যানেল' বা 'বিরোধ নিষ্পত্তি বোর্ড' গঠন করা হবে। এই প্যানেলে থাকবেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, অভিজ্ঞ আইনজীবী এবং পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা। প্রতিটি এক্সচেঞ্জে একজন রেজিস্ট্রারও নিয়োগ দেওয়া হবে, যিনি এক্সচেঞ্জের নিয়ন্ত্রণ বিভাগের ডিজিএম অথবা তার চেয়ে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হবেন।

বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া:

বিনিয়োগকারীরা নির্দিষ্ট ফরমে তাদের অভিযোগ দাখিল করবেন। প্রাথমিক পর্যায়ে, রেজিস্ট্রার উভয় পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন। যদি আলোচনায় সমাধান না হয়, তবে বিষয়টি সালিশ প্যানেলের কাছে যাবে। উভয় পক্ষ অনুমোদিত তালিকা থেকে নিজেদের সালিশকারী বেছে নিতে পারবেন। সাক্ষ্য ও নথি যাচাই-বাছাই শেষে সালিশকারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে রায় দেবেন, যা চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। প্রয়োজন হলে, যেকোনো পক্ষ বিএসইসি বা আদালতে আপিল করতে পারবে।

অভিযোগ দাখিলের সহজলভ্যতা:

এখন বিনিয়োগকারীরা চাইলে বিএসইসি'র অনলাইন অভিযোগ মডিউল অথবা স্টক এক্সচেঞ্জের সালিশ ইউনিট—উভয় জায়গাতেই অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন। ছোটখাটো বিরোধগুলো এক্সচেঞ্জের সালিশ বিভাগেই নিষ্পত্তি করা হবে। এর ফলে এক্সচেঞ্জগুলো বিনিয়োগকারীদের সমস্যাগুলো আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবে এবং নিজেদের প্রশাসনিক কাঠামোও উন্নত করতে সক্ষম হবে।

দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সংস্কারের সুফল:

স্টক এক্সচেঞ্জ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ধরনের সালিশ কাঠামো প্রণয়নের প্রস্তাব ২০১৯ সাল থেকেই ঝুলে ছিল। অবশেষে এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হতে চলেছে, যা দেশের পুঁজিবাজারের সুশাসন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।

বিএসইসি মুখপাত্র মো. আবুল কালামের মতে, সালিশ প্যানেল কার্যকর হলে অনেক অভিযোগ প্রাথমিক পর্যায়েই মীমাংসা হয়ে যাবে, যা কমিশনের তদন্তের চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাবে। তিনি আরও বলেন, এই ব্যবস্থা আগে থাকলে অসাধু ব্রোকারদের অনেক তছরুপের ঘটনা আগেই রোধ করা যেত। তার ব্যাখ্যা অনুযায়ী, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ অনুযায়ী এক্সচেঞ্জগুলো তাদের নিজস্ব প্রবিধান তৈরির ক্ষমতা রাখে, ফলে সালিশ প্যানেলের রায় আইনি বৈধতা পাবে এবং বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে এটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ