ঢাকা, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

নতুন পে স্কেলে গ্রেড কমালে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন কারা?

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৮ ২৩:০১:২১
নতুন পে স্কেলে গ্রেড কমালে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন কারা?

সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো তৈরির কাজ শুরু করেছে নবগঠিত পে কমিশন ২০২৫। গত জুলাই মাসে গঠিত এই কমিশনকে ছয় মাসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলেও, বর্তমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ধারণা করা হচ্ছে যে, নির্বাচিত সরকার গঠনের পরই নতুন বেতন কাঠামোটি কার্যকর করা হবে।

গ্রেড কমানোর প্রস্তাবনা ও তার সুফল

পে কমিশনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত কমিয়ে বেতন বৈষম্য হ্রাস করা। এই লক্ষ্য অর্জনে বিদ্যমান ২০টি গ্রেড পুনর্বিন্যাস করে মোট গ্রেডের সংখ্যা কমানোর বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, গ্রেড কমানোর এই প্রক্রিয়ায় পেছনের সারির অর্থাৎ নিচের দিকের সরকারি চাকরিজীবীরাই তুলনামূলকভাবে বেশি সুবিধা পাবেন।

জনসাধারণ ও বিভিন্ন সংস্থার মতামত গ্রহণ

কমিশন বর্তমানে উন্মুক্তভাবে সাধারণ নাগরিক, সরকারি চাকরিজীবী, সরকারি প্রতিষ্ঠান (স্বায়ত্তশাসিত সহ) এবং বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশন ও সমিতির কাছ থেকে নতুন বেতন কাঠামো সম্পর্কে মতামত গ্রহণ করছে। এই প্রক্রিয়ায় গ্রেড পুনর্বিন্যাস বিষয়েও পরামর্শ চাওয়া হয়েছে।

কমিশনের প্রশ্নমালা-৫ এ যে বিষয়গুলো জানতে চাওয়া হয়েছে:

আপনি কি ২০ গ্রেড বেতন কাঠামোর পক্ষে?

আপনার পছন্দের গ্রেড সংখ্যা কত?

আপনার পছন্দের গ্রেড সংখ্যার পেছনে যুক্তি কী?

এছাড়াও, সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মূল বেতনের অনুপাত কেমন হওয়া উচিত এবং বর্তমান বেতন কাঠামোর কী কী অসঙ্গতি রয়েছে, সে বিষয়েও মতামত চাওয়া হয়েছে।

কমিশনের অগ্রাধিকার: বৈষম্য দূরীকরণ ও গ্রেড সংখ্যা হ্রাস

পে কমিশনের একজন সদস্য গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত হ্রাস করে বেতন বৈষম্য দূরীকরণকে কমিশন অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে, বিদ্যমান ২০টি গ্রেডকে নতুন করে সাজিয়ে মোট গ্রেডের সংখ্যা ১৪ থেকে ১৫টিতে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

সম্ভাব্য গ্রেড বিন্যাস:

১ থেকে ১০ম গ্রেডের মধ্যে দুটি গ্রেড একত্রিত করা হতে পারে।

১১ থেকে ২০তম গ্রেডের মধ্যে ৫-৬টি নতুন গ্রেড তৈরি করে পুনর্বিন্যাস করা হতে পারে।

বিভিন্ন সংগঠনের সুপারিশ

বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি, বদিউল কবির, গণমাধ্যমকে বলেছেন যে, তারা ২০টি গ্রেডকে ১২টিতে রূপান্তরের পক্ষে। তাদের প্রস্তাবনায় ১-৯ম গ্রেড অপরিবর্তিত রেখে, ১০-১২তম, ১৩-১৬তম এবং ১৭-২০তম গ্রেডগুলোকে একত্রিত করে তিনটি নতুন গ্রেড গঠনের কথা বলা হয়েছে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ৭ম পে কমিশনে টাইম স্কেল এবং সিলেকশন গ্রেড থাকলেও ৮ম বেতন কমিশনে তা বাদ দেওয়া হয়েছে। তার মতে, যেখানে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি নির্ধারিত সময়ে হয়, সেখানে কর্মচারীদের পদ শূন্য না হলে পদোন্নতি হয় না। তাই, টাইম স্কেল এবং সিলেকশন গ্রেড পুনরায় চালু করা অত্যন্ত জরুরি।

গ্রেড কমালে কারা সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন?

বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্রেড কমানোর ফলে সাধারণত নিচের দিকের গ্রেডের সরকারি কর্মকর্তারাই সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন। এর কারণগুলো হলো:

একটি গ্রেড থেকে অন্য গ্রেডে পদোন্নতির জন্য যে সময় লাগত, তা কমে আসবে।

সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা কয়েক ধাপ এগিয়ে আসার সুযোগ পাবেন।

বিদ্যমান বেতন কাঠামোর অসঙ্গতি

পে স্কেল-২০১৫ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বর্তমান বেতন কাঠামোতে কিছু গ্রেডের মধ্যে বেতনের ব্যবধান খুবই কম। যেমন:৮ম (২২ হাজার টাকা) এবং ৯ম গ্রেডের (২৩ হাজার টাকা) বেতনের পার্থক্য মাত্র ১০০০ টাকা।

২০তম ও ১৯তম গ্রেডের মধ্যে বেতনের পার্থক্য মাত্র ২৫০ টাকা।

১৭তম (৯০০০ টাকা) ও ১৮তম গ্রেডের (৮৮০০ টাকা) মূল বেতনের পার্থক্য ২০০ টাকা।

১২তম ও ১৩তম গ্রেডের বেতনের পার্থক্য মাত্র ৩০০ টাকা।

কমিশন এসব কম ব্যবধানের গ্রেডগুলোকে একত্রিত করে গ্রেড সংখ্যা কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে।

অনলাইন জরিপে অংশগ্রহণের সুযোগ

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে অ্যাসোসিয়েশন/ সমিতিগুলো ছাড়াও সাধারণ নাগরিকরা মতামত জানাতে পারছেন। বাড়িভাড়া, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ভাতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়েও তারা তাদের মতামত দিতে পারবেন।

জাতীয় বেতন কমিশন ২০২৫ একটি অনলাইন জরিপ শুরু করেছে, যা গত ২ অক্টোবর থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। কমিশনের ওয়েবসাইট (paycommission2025.gov.bd) ভিজিট করে দেশের যে কোনো নাগরিক এই জরিপে অংশ নিতে পারবেন। এই জরিপে সাধারণ নাগরিক, সরকারি চাকরিজীবী, সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশন ও সমিতি—এই চারটি বিভাগ থেকে মতামত নেওয়া হচ্ছে।

একটি নতুন দিগন্তে বাংলাদেশের বেতন কাঠামো

নতুন বেতন কাঠামো সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে এবং বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কমিশন আশা করছে, সংগৃহীত মতামত এবং তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে একটি আধুনিক ও সুষম বেতন কাঠামো তৈরি হবে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ