ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

হুট করে দেশের সব বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৯ ১৯:০৮:৩৮
হুট করে দেশের সব বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি

বিশ্বজুড়ে কয়েকটি প্রধান বিমানবন্দরে সাইবার হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) দেশের সব বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে। বিমান পরিবহন কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে এবং সম্ভাব্য সাইবার হুমকি মোকাবিলায় বেবিচক ১০টি জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে।

কেন এই সতর্কতা?

সাম্প্রতিক সময়ে সাইবার হামলার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় বিমানবন্দরগুলোর ডিজিটাল নিরাপত্তা জোরদার করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। যেমন, লন্ডনের কিছু বিমানবন্দরে সাইবার হামলার কারণে ফ্লাইট পরিচালনা সাময়িকভাবে বন্ধ করতে হয়েছিল। এমন পরিস্থিতি বাংলাদেশে যেন না ঘটে, সেজন্য আগাম সতর্কতা হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত মাসেই বেবিচকের নিজস্ব ওয়েবসাইটে একটি সাইবার হামলা হয়েছিল। যদিও এতে বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি, তবু কর্মকর্তাদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পরামর্শের ভিত্তিতে বেবিচক এই সতর্কতা জারি করেছে।

বেবিচকের ১০টি নির্দেশনা:

বেবিচকের সদস্য (পরিকল্পনা ও পরিচালনা) এয়ার কমডোর আবু সাঈদ মেহবুব খান স্বাক্ষরিত একটি নির্দেশনাপত্র দেশের সকল বিমানবন্দর প্রধান এবং সিভিল এভিয়েশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এই নির্দেশনার মূল লক্ষ্য হলো সাইবার হামলা প্রতিরোধে শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। নির্দেশনায় যে ১০টি বিষয়ে বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, সেগুলো নিচে দেওয়া হলো:

১. শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার: সকল কর্মীকে অবশ্যই জটিল এবং সুরক্ষিত পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে।

২. সন্দেহজনক ই-মেইল ও লিংক পরিহার: অজানা বা সন্দেহজনক উৎস থেকে আসা ই-মেইল এবং কোনো লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

৩. সফটওয়্যার ও অ্যান্টিভাইরাস নিয়মিত আপডেট: কম্পিউটার ও অন্যান্য ডিভাইসের অপারেটিং সিস্টেম, সফটওয়্যার এবং অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে।

৪. পাইরেটেড সফটওয়্যার বর্জন: লাইসেন্সবিহীন বা পাইরেটেড কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করা যাবে না।

৫. অফিসিয়াল ডিভাইসে ব্যক্তিগত অ্যাপ বর্জন: অফিসের কাজে ব্যবহৃত ডিভাইসে ব্যক্তিগত অ্যাপ ইনস্টল করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

৬. মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (MFA) ব্যবহার: সব অনলাইন অ্যাকাউন্টের সুরক্ষার জন্য মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন সক্রিয় রাখতে হবে।

৭. নিয়মিত ডেটা ব্যাকআপ: গুরুত্বপূর্ণ ডেটা নিয়মিতভাবে ব্যাকআপ করে সুরক্ষিত রাখতে হবে।

৮. নেটওয়ার্ক সুরক্ষা ব্যবস্থা: ফায়ারওয়ালসহ অন্যান্য নেটওয়ার্ক সুরক্ষা ব্যবস্থা সঠিকভাবে কনফিগার এবং পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

৯. কর্মীদের সাইবার নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ: সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে কর্মীদের নিয়মিতভাবে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।

১০. তাৎক্ষণিক রিপোর্ট: যেকোনো সাইবার নিরাপত্তা-সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিলে অবিলম্বে বেবিচকের সিএএবি সার্ট টিম, আইটি বিভাগ এবং জাতীয় সাইবার ইন্সিডেন্ট রেসপন্স টিমকে অবহিত করতে হবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:

গত ১৫ সেপ্টেম্বর বেবিচকের প্রধান কার্যালয়ে সাইবার হামলার ঝুঁকি মোকাবিলা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে একটি বিশদ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি বেবিচকের সাইবার ঝুঁকি মূল্যায়ন করে একটি অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছে, যা সাইবার নিরাপত্তা কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করবে।

এই সতর্কতা এবং সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাগুলো বাংলাদেশের বিমান পরিবহন খাতকে সাইবার হুমকি থেকে সুরক্ষিত রাখতে একটি অত্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি দেশের বিমানবন্দরগুলোর ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ