ঢাকা, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

সোনা কেনার আগে জরুরি সতর্কতা: যেসব বিষয় যাচাই করে সোনা কিনলে ঠকবেন না

অর্থনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৩ ১৬:৫৮:০৪
সোনা কেনার আগে জরুরি সতর্কতা: যেসব বিষয় যাচাই করে সোনা কিনলে ঠকবেন না

বাংলাদেশে সোনার দাম এখন ঊর্ধ্বমুখী। শুধু গহনা হিসেবেই নয়, প্রয়োজনে এটি আর্থিক সুরক্ষার ঢাল হিসেবেও কাজ করে। কিন্তু দোকানে গিয়ে বিভিন্ন ক্যারেটের সোনা দেখে অনেকেই বিভ্রান্ত হন। কীভাবে বুঝবেন কোনটি খাঁটি, কোনটি আপনার জন্য সেরা? এই নিবন্ধে আমরা সেইসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, যা আপনাকে সোনা কেনার সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে এবং ঠকে যাওয়া থেকে বাঁচাবে।

১. ক্যারেট রহস্য উন্মোচন: বিশুদ্ধতা কতটুকু?

সোনা কেনার সময় প্রথমেই জানতে হবে 'ক্যারেট' সম্পর্কে। ক্যারেট হলো সোনার বিশুদ্ধতা পরিমাপের একক।

২৪ ক্যারেট সোনা: এটি ১০০% বিশুদ্ধ বা নিখাদ সোনা। তবে এটি এত নরম যে গহনা তৈরির জন্য উপযোগী নয়। সাধারণত সোনার বার বা কয়েনের ক্ষেত্রে ২৪ ক্যারেট দেখা যায়।

২২ ক্যারেট সোনা: গহনা তৈরির জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। এতে প্রায় ৯১.৬% বিশুদ্ধ সোনা থাকে (২২ ভাগ সোনা ও ২ ভাগ অন্য ধাতু)। এর রঙ উজ্জ্বল সোনালি হয়।

১৮ ক্যারেট সোনা: এতে প্রায় ৭৫% বিশুদ্ধ সোনা থাকে (১৮ ভাগ সোনা ও ৬ ভাগ অন্য ধাতু)। ২২ ক্যারেটের তুলনায় এর উজ্জ্বলতা কিছুটা কম হয়।

১৪ ক্যারেট সোনা: এতে প্রায় ৫৮.৩% বিশুদ্ধ সোনা থাকে (১৪ ভাগ সোনা ও ১০ ভাগ অন্য ধাতু)। এর রঙ কিছুটা লালচে বা গোলাপি আভার হয়ে থাকে, কারণ এতে তামা বা অন্যান্য ধাতুর পরিমাণ বেশি থাকে।

আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ক্যারেট বুঝে সোনা কেনা উচিত। দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য ২২ ক্যারেট বা ১৮ ক্যারেট ভালো, কারণ এতে মিশ্র ধাতু থাকার কারণে এটি মজবুত হয়।

২. ওজন ও বাজেট: আপনার বিনিয়োগের পরিকল্পনা

সোনার বারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ওজনের বিকল্প রয়েছে, যেমন ০.৫ গ্রাম থেকে শুরু করে ১ কেজি পর্যন্ত। এর মধ্যে ৮ গ্রাম, ১০ গ্রাম এবং ১ কেজি ওজনের বারগুলি বেশ জনপ্রিয়।

বাজেট নির্ধারণ: সোনা কেনার আগে আপনার বাজেট কত, তা স্থির করুন।

বিনিয়োগের উদ্দেশ্য: আপনি কি ছোট বিনিয়োগ করতে চান নাকি বড় অঙ্কের? এটি দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয় না স্বল্পমেয়াদী?

নগদীকরণের লক্ষ্য: ভবিষ্যতে কত দ্রুত বা সহজে আপনি সোনা বিক্রি করে টাকায় রূপান্তর করতে চান, সেটিও বিবেচনায় রাখুন।

এই বিষয়গুলো আপনাকে সঠিক ওজনের সোনা বেছে নিতে সাহায্য করবে।

৩. বিশুদ্ধতার শংসাপত্র: আপনার সুরক্ষার চাবিকাঠি

বিনিয়োগের জন্য সোনা কেনার সময় বিশুদ্ধতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যে অর্থ ব্যয় করছেন, তার সঠিক মূল্য পাচ্ছেন কিনা, তা নিশ্চিত করতে একটি বিশুদ্ধতার শংসাপত্র (Purity Certificate) অবশ্যই নিন।

এটি সোনার মান এবং ক্যারেটের প্রমাণপত্র হিসেবে কাজ করে।

ভবিষ্যতে যখন আপনি সোনা বিক্রি করতে যাবেন, তখন এই শংসাপত্র আপনাকে সঠিক মূল্য পেতে সাহায্য করবে।

শংসাপত্র ছাড়া সোনা কিনলে ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৪. নির্ভরযোগ্য বিক্রেতা ও মূল্য যাচাই: সেরা ডিল খুঁজুন

সোনা কেনার আগে কয়েকটি বিশ্বস্ত দোকান ঘুরে দাম এবং মান তুলনা করা বুদ্ধিমানের কাজ।

বিভিন্ন দোকানে খোঁজ নিয়ে আপনি বাজারের সেরা মূল্য সম্পর্কে ধারণা পাবেন।

এটি আপনাকে অপ্রয়োজনীয় প্রিমিয়াম দেওয়া থেকে বাঁচাবে।

পরিচিত ও সুনামধন্য জুয়েলার্স থেকে সোনা কিনুন, যারা বিশুদ্ধতার গ্যারান্টি দেয়।

৫. সোনা কি আপনার জন্য একটি লাভজনক বিনিয়োগ?

যারা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের কথা ভাবছেন এবং এমন একটি সম্পদ খুঁজছেন যা সহজে টাকায় রূপান্তর করা যায়, তাদের জন্য সোনার বার একটি অত্যন্ত লাভজনক বিকল্প হতে পারে।

আর্থিক নিরাপত্তা: সোনা পরিবারের আর্থিক সুরক্ষায় বড় ভূমিকা রাখে। যেকোনো সংকটের সময় এটি দ্রুত টাকায় রূপান্তর করা যায়।

দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা: ঐতিহাসিকভাবে সোনা সবসময়ই একটি নিরাপদ এবং লাভজনক বিনিয়োগ হিসেবে প্রমাণিত। মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে এটি একটি চমৎকার হেজ (hedge)।

সহজ বিক্রয়যোগ্যতা: সোনার বার বা গহনা বিক্রি করা অপেক্ষাকৃত সহজ, যা এটিকে একটি 'তরল' সম্পদে পরিণত করে।

সোনা কেনার আগে এই পাঁচটি বিষয় সঠিকভাবে যাচাই করে নিলে আপনি কেবল ঠকে যাওয়া থেকেই বাঁচবেন না, বরং একটি সুরক্ষিত এবং লাভজনক বিনিয়োগও নিশ্চিত করতে পারবেন।

৪. FAQ (প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী) উত্তরসহ:

প্রশ্ন ১: সোনা কেনার আগে সবচেয়ে জরুরি কী যাচাই করা উচিত?

উত্তর: সোনা কেনার আগে সবচেয়ে জরুরি হলো ক্যারেট (বিশুদ্ধতা), ওজন এবং বিশুদ্ধতার শংসাপত্র (Purity Certificate) যাচাই করা।

প্রশ্ন ২: গহনা তৈরির জন্য কত ক্যারেট সোনা সবচেয়ে ভালো?

উত্তর: গহনা তৈরির জন্য সাধারণত ২২ ক্যারেট সোনা সবচেয়ে ভালো ও উপযোগী। এতে প্রয়োজনীয় মজবুতির জন্য অন্য ধাতু মেশানো থাকে, কিন্তু বিশুদ্ধতাও বজায় থাকে।

প্রশ্ন ৩: ২২ ক্যারেট ও ১৮ ক্যারেট সোনার মধ্যে মূল পার্থক্য কী?

উত্তর: ২২ ক্যারেট সোনায় ৯১.৬% বিশুদ্ধ সোনা থাকে, যেখানে ১৮ ক্যারেট সোনায় ৭৫% বিশুদ্ধ সোনা থাকে। ১৮ ক্যারেটের তুলনায় ২২ ক্যারেট সোনা বেশি উজ্জ্বল হয়।

প্রশ্ন ৪: সোনা কেনার সময় বিশুদ্ধতার শংসাপত্র কেন দরকার?

উত্তর: বিশুদ্ধতার শংসাপত্র সোনার ক্যারেট ও মানের প্রমাণপত্র। এটি নিশ্চিত করে যে আপনি সঠিক মানের সোনা কিনছেন এবং ভবিষ্যতে বিক্রি করার সময় সঠিক মূল্য পেতে সাহায্য করে।

প্রশ্ন ৫: সোনার বারে বিনিয়োগ কি লাভজনক?

উত্তর: হ্যাঁ, সোনার বারে বিনিয়োগ একটি লাভজনক ধারণা, বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য। এটি মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয় এবং সহজে টাকায় রূপান্তর করা যায়।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ