ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ২ কার্তিক ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

ঘরে বসেই অনলাইনে জেনে নিন বাবা দাদা আপনার নামে কোথায় কতটুকু জমি আছে

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ১৭ ১১:৫৯:০৬
ঘরে বসেই অনলাইনে জেনে নিন বাবা দাদা আপনার নামে কোথায় কতটুকু জমি আছে

মূল্যবান জমি: প্রতারণা এড়ান! ঘরে বসে অনলাইনে আপনার নামে কতটুকু জমি আছে, জেনে নিন সহজ উপায়ে

জমি নিঃসন্দেহে দেশের অন্যতম মূল্যবান সম্পদ। অথচ অনেকেই জানেন না যে তাদের নামে আদৌ কোনো জমি নিবন্ধিত আছে কি না। উত্তরাধিকারের সূত্রে পাওয়া বা কেনা সম্পত্তির মালিকানা নিশ্চিত না থাকার কারণে তৈরি হয় নানা জটিলতা।

তবে সুসংবাদ হলো, ডিজিটাল ভূমি সেবা চালু হওয়ায় এই তথ্য এখন আর গোপন নেই। বাংলাদেশ সরকার ভূমি মন্ত্রণালয়ের সব সেবা এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসেছে। ফলে, ঘরে বসেই অনলাইনে জমির মালিকানা, খতিয়ান বা পর্চা সংক্রান্ত সব তথ্য সহজভাবে জানা সম্ভব।

কেন জমির মালিকানা যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি?

জমি সংক্রান্ত প্রতারণা এড়াতে অনলাইন যাচাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় দেখা যায়—

বাবা-মা বা দাদা-দাদির নামে জমি থাকলেও পরবর্তী উত্তরাধিকারীরা তার খবর পান না।

জমি ক্রয়-বিক্রয়ের সময় একশ্রেণির দালাল ক্রেতাদের প্রতারণার শিকার করে।

অনেক প্রতারক মৃত ব্যক্তির নামে জমি বিক্রির চেষ্টা করে বা ভুয়া দলিল তৈরি করে।

এই সমস্যাগুলো এড়াতে এবং জমি কেনা-বেচার আগে অনলাইনে মালিকানা যাচাই করে নিশ্চিত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জমির মালিকানার মূল দলিল: খতিয়ান বা পর্চা

খতিয়ান (বা পর্চা) হলো সরকারিভাবে প্রস্তুতকৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল, যা কোনো একটি নির্দিষ্ট জমির বৈধ মালিকানা প্রমাণ করে। এই দলিলে জমির বিষয়ে নিম্নলিখিত বিস্তারিত তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে:

জমির দাগ নম্বর, মৌজা নম্বর, ও খতিয়ান নম্বর।

জমির মোট পরিমাণ ও তার সীমা।

জমির দখলদারের নাম ও ঠিকানা।

সরকারকে প্রদেয় খাজনার পরিমাণসহ বিস্তারিত তথ্য।

বাংলাদেশে প্রচলিত খতিয়ানের প্রকারভেদ

জমির সঠিক মালিকানা জানতে হলে বর্তমানে প্রচলিত চার ধরনের খতিয়ান সম্পর্কে জানা থাকা ভালো:

১) সিএস খতিয়ান (CS): এটি ব্রিটিশ আমলে (প্রায় ১৯৪০ সালের দিকে) প্রস্তুত করা হয়েছিল।

২) এসএ খতিয়ান (SA): ১৯৫৬ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে এই খতিয়ানগুলো প্রস্তুত করা হয়।

৩) আরএস খতিয়ান (RS): এটি ১৪৪ ধারা অনুযায়ী পরিচালিত আধুনিক জরিপের ফল।

৪) বিএস খতিয়ান (BS): ১৯৯৮ সাল থেকে চলমান বর্তমান আধুনিক জরিপ।

মাত্র ৪টি ধাপে অনলাইনে জমির মালিকানা জানার সহজ পদ্ধতি

আপনার নামে কতটুকু জমি আছে বা জমিটির মালিকানা কার—এই তথ্য জানতে আপনার কেবল একটি স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ প্রয়োজন।

পদ্ধতিটি অনুসরণ করুন:

১. ওয়েবসাইটে প্রবেশ: প্রথমে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন: http://www.dlrs.gov.bd/site/view/notices

২. অপশন নির্বাচন: ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করার পর "খতিয়ান তথ্য অনুসন্ধান" অপশনটি খুঁজে বের করে নির্বাচন করুন।

৩. প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ: এখানে সংশ্লিষ্ট জেলা, মৌজা, দাগ নম্বর ও খতিয়ান নম্বরসহ নির্ধারিত ফরমটি নির্ভুলভাবে পূরণ করুন।

৪. ফলাফল দেখুন: তথ্যগুলো জমা দেওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আপনি জানতে পারবেন—জমিটি কার নামে, কত পরিমাণ এবং এর অবস্থান কোথায়।

গুরুত্বপূর্ণ: যাচাইকরণ

যদি অনলাইনে প্রদর্শিত তথ্যের সঙ্গে আপনার হাতে থাকা কাগজপত্রের কোনো অমিল থাকে, তাহলে যেকোনো ঝামেলা এড়াতে দ্রুততম সময়ে নিকটস্থ ভূমি অফিসে যোগাযোগ করে বিষয়টি যাচাই করে নিতে হবে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ কেবল দৈনন্দিন জীবন নয়, জমি ব্যবস্থাপনাতেও স্বচ্ছতা এনেছে। তাই জমির মালিকানা বা খতিয়ানের তথ্য জানার জন্য দালাল বা ভূমি অফিসে অহেতুক দৌড়াদৌড়ির প্রয়োজন নেই। ঘরে বসেই নিজের মূল্যবান সম্পদের মালিকানা নিশ্চিত করুন এবং আপনার সম্পদ রাখুন সম্পূর্ণ নিরাপদে।

আমিনুল ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ