ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

১০৩ কোম্পানির রেকর্ড পতন: ১০ টাকার শেয়ার এখন মাত্র ৯০ পয়সায়

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২৩ ০৮:৩৪:৫৬
১০৩ কোম্পানির রেকর্ড পতন: ১০ টাকার শেয়ার এখন মাত্র ৯০ পয়সায়

বুধবার (২২ অক্টোবর) দেশের পুঁজি বাজারে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (পিএলএফএসএল) এক নজিরবিহীন নিম্নস্তরের রেকর্ড স্থাপন করেছে। কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার মাত্র ৯০ পয়সায় লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে, যা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর দীর্ঘ ইতিহাসে সর্বনিম্ন দরের ঘটনা।

ডিএসই-এর অভ্যন্তরীণ তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই দিনে পিএলএফএসএল-এর প্রায় ১৬ লাখ শেয়ার ৯০ পয়সা দরে হাতবদল হয়, যার মোট বাজার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২৫ কোটি টাকা। বাজারের পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের সার্বিক আস্থা বর্তমানে এক উদ্বেগজনক অবস্থানে নেমে এসেছে। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব এবং বাজারে তারল্যের ঘাটতি বিনিয়োগকারীদের মনস্তত্ত্বে চরম নেতিবাচক পরিবর্তন এনেছে।

১০৩ কোম্পানি এখন ফেস ভ্যালুর নিচে

এই একক কোম্পানির রেকর্ড পতন দেশের শেয়ারবাজারের গভীর সংকটের ইঙ্গিত দেয়। বাজারের তথ্য যাচাই করলে দেখা যায়, বর্তমানে মোট ১০৩টি তালিকাভুক্ত সংস্থা এবং মিউচুয়াল ফান্ড তাদের অভিহিত মূল্য (ফেজ ভ্যালু ১০ টাকা) থেকে কম দামে হাতবদল হচ্ছে।

এই ১০৩টির মধ্যে ব্যাংক, বীমা, নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বস্ত্র, খাদ্য, পরিষেবা এবং প্রকৌশল খাতের মতো ৬৯টি কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত। অবশিষ্ট ৩৪টি হলো বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ড। আরও মারাত্মক বিষয় হলো, এর মধ্যে ৫৪টি কোম্পানি ও ফান্ডের শেয়ারদর এখন ৫ টাকারও নিচে নেমে এসেছে, যা বাজারের আস্থায় চরম হতাশার প্রতিফলন ঘটায়। যে বিনিয়োগকারীরা একসময় এই শেয়ারগুলি ১০ টাকা বা কখনও প্রিমিয়াম দিয়ে কিনেছিলেন, তাদের কাছে এখন এটির মূল্য নামমাত্র।

অর্থনৈতিক দুর্বলতা ও আস্থার সংকট

বাজার বিশেষজ্ঞরা সামগ্রিক অর্থনৈতিক দুর্বলতা, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ক্রমাগত বিনিয়োগকারীদের লোকসানের কারণে সৃষ্ট গভীর হতাশার চিত্র তুলে ধরেছেন। দীর্ঘমেয়াদী লোকসানের আশঙ্কায় বহু বিনিয়োগকারী তাদের সঞ্চিত অর্থ বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন এবং নতুন মূলধন প্রবাহ প্রায় বন্ধ।

তারা এই পরিস্থিতির জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাব, আইনি সংস্কারের বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দুর্বল অংশগ্রহণ এবং বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগকেও দায়ী করছেন। বিশ্লেষকরা বাজারকে স্বাভাবিক ধারায় ফেরাতে নীতিনির্ধারকদের প্রতি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়া পদক্ষেপ এবং আমানতকারীদের আশঙ্কা

এই চরম পতনের মাঝে, বাংলাদেশ ব্যাংক (BB)-এর একটি পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। এই মাসের শুরুতে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রমতে, গুরুতর আর্থিক দুর্দশা এবং অপর্যাপ্ত জামানতের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস লিজিং সহ মোট ৯টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) লাইসেন্স বাতিল করার উদ্যোগ নিয়েছে।

যদিও পিপলস লিজিং কর্তৃপক্ষ ডিএসই-কে জানিয়েছে যে, তারা এখনও লাইসেন্স বাতিলের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি বা সরকারি নির্দেশনা পায়নি, তবে এই খবরে আর্থিক খাতের অন্যান্য শেয়ারের দামও হ্রাস পায় এবং আমানতকারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, এই ৯টি এনবিএফআইতে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানত হিসাবে মোট ১৫ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা আটকা পড়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা ক্ষুদ্র ব্যক্তিগত আমানতকারীদের এবং বাকি ১১ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যাংক ও কর্পোরেট সত্তার। এই প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে পিপলস লিজিংয়ে ব্যক্তিগত আমানতকারীদের সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা আটকে থাকার তথ্য প্রতীয়মান।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ