ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

সেন্টমার্টিন ভ্রমণে কড়া নিয়ম! ১২ নির্দেশনা জারি

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২৩ ১০:০০:৩৯
সেন্টমার্টিন ভ্রমণে কড়া নিয়ম! ১২ নির্দেশনা জারি

দেশের একমাত্র প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। গতকাল বুধবার উপসচিব আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দ্বীপে পরিবেশবান্ধব পর্যটন নিশ্চিত করতে মোট ১২টি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নতুন সময়সীমা কার্যকর হতে চলেছে। পর্যটকদের জন্য নভেম্বর মাসে শুধুমাত্র দিনের বেলায় ভ্রমণের অনুমতি থাকবে। তবে, প্রত্যাশিতভাবে ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি এই দুই মাসে পর্যটকরা দ্বীপে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, দ্বীপের পরিবেশকে পুরোপুরি বিশ্রাম দিতে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে পর্যটকদের প্রবেশাধিকার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন এই সিদ্ধান্তের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, দ্বীপটির অনন্য প্রকৃতি ও প্রতিবেশের সুরক্ষায় এই ১২ দফা নির্দেশনা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা হবে।

পর্যটকদের জন্য নতুন প্রবেশাধিকার ও বিধিনিষেধ

সেন্টমার্টিনকে দায়িত্বশীল পর্যটনের উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে বেশ কিছু নতুন নিয়মাবলী কার্যকর করা হয়েছে:

অনলাইন ট্রাভেল পাস: দ্বীপে ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অনুমোদিত ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করা বাধ্যতামূলক। প্রতিটি টিকিটে একটি ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। এই কোড ছাড়া টিকিট অবৈধ বলে গণ্য হবে।সর্বোচ্চ পর্যটক সীমা: দৈনিক সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটককে দ্বীপে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হবে, যা অতিরিক্ত চাপ কমাতে সাহায্য করবে।

নৌযান নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা: এখন থেকে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি ছাড়া অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সেন্টমার্টিনের পথে কোনো নৌযান চলাচলের অনুমোদন দিতে পারবে না।

পরিবেশ দূষণ রোধে কঠোর সতর্কতা

দ্বীপের প্রাকৃতিক সম্পদ, বিশেষ করে প্রবাল এবং সামুদ্রিক জীব রক্ষা করতে পর্যটকদের কার্যক্রমে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে:

রাতে সৈকতে কৃত্রিম আলো জ্বালানো, উচ্চ শব্দ তৈরি করা এবং বারবিকিউ পার্টির আয়োজন করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

পর্যটকদের কেয়া বনে প্রবেশ করা, সামুদ্রিক জীব বা প্রবাল সংগ্রহ করা থেকে কঠোরভাবে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

মোটরসাইকেল, সি-বাইক বা অন্য কোনো মোটরচালিত যান সৈকতের ওপর দিয়ে চলাচল করতে পারবে না।

পর্যটকদের দ্বীপে পলিথিন বহন না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিকের চামচ, স্ট্র, শ্যাম্পুর মিনি-প্যাকের মতো একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহারকেও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

পর্যটকদের সুবিধার জন্য নিজেদের পানির ফ্লাস্ক সাথে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এই নির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন দ্বীপের ভঙ্গুর পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য সুরক্ষিত হবে বলে সরকার আশা করে। এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে দেশের পরিবেশবান্ধব পর্যটন বিকাশে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং ই-টিকেটিং ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এই সভাতেই চূড়ান্ত নির্দেশাবলী বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ