ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

দুবাই ও ভারতের চেয়ে অতিরিক্ত দামে সোনা বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশে, জানুন কারন

অর্থনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২৩ ১৮:৪৫:২৬
দুবাই ও ভারতের চেয়ে অতিরিক্ত দামে সোনা বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশে, জানুন কারন

দেশের জুয়েলারি বাজারে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার মূল্য এখন ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৮২ টাকা। যা বাজারের ইতিহাসে এক নতুন উচ্চতা। এই মূল্যবৃদ্ধি এমন এক সময়ে ঘটলো, যখন আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে দেশের অভ্যন্তরীণ দামের বিশাল ফারাক দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে দুবাই এবং ভারতের তুলনায় সোনার দর যথাক্রমে ৪২ হাজার ১২৮ টাকা ও ২১ হাজার ৭ টাকা বেশি। এই অতিরিক্ত মূল্যের মূল কারণ হিসেবে জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা বৈধ পথে সোনা আমদানির অপ্রতুলতাকে দায়ী করছেন।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে মূল্য বৈষম্য

পাশের দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সোনার দামের তুলনামূলক চিত্র:

সংযুক্ত আরব আমিরাত (দুবাই): গত বুধবার ২২ ক্যারেট সোনার ভরি ছিল বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার ২৫৪ টাকা (ভ্যাট ও মজুরি বাদে)।

ভারত: একই দিনে গয়নার প্রতি ভরির দাম ছিল ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬৩ টাকা।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে দরপতনের কারণে বৃহস্পতিবার থেকে বাংলাদেশে প্রতি ভরি সোনার দাম ৮ হাজার ৩৮৬ টাকা কমে প্রায় ২ লাখ ৯ হাজার টাকা হয়েছে।

সোনার দাম নির্ধারণ পদ্ধতি: পোদ্দার সমিতির হাত ধরে বাজুসের সমন্বয়

বাংলাদেশে সোনার দাম নির্ধারণ প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) দ্বারা, যদিও এর মূল ভিত্তি তৈরি হয় পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারকেন্দ্রিক বাংলাদেশ পোদ্দার সমিতির পাইকারি বাজারে।

কার্যপ্রণালী:

পাইকারি দর: পোদ্দার সমিতি: এই সমিতি প্রতিদিন দুপুর ৩টার দিকে সোনার (পিওর গোল্ড) দাম নির্ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে তারা কলকাতার দর, ব্যাগেজ রুলসে আসা সোনা এবং পুরোনো অলংকারের সরবরাহ বিবেচনায় নেয়।

বাজুসের সমন্বয়: পোদ্দার সমিতির নির্ধারিত পাইকারি দামের সঙ্গে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের জন্য ৫ হাজার টাকা মুনাফা যোগ করে বাজুসের 'স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং' চূড়ান্ত দর ঘোষণা করে।

আগে বাজুসের কমিটি পাইকারি দরের ১.২৫ গুণ করে সোনার মূল্য নির্ধারণ করত, যা বর্তমানে বাতিল করে কেবল ভ্যাট ও অলংকার তৈরির মজুরি নেওয়ার বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

উচ্চ মূল্যের কারণ: মুনাফার স্তর ও আমদানির প্রতিবন্ধকতা

পোদ্দার সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন উচ্চ মূল্যের কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, বিদেশ থেকে যাত্রীরা ব্যাগেজ রুলসে সোনা নিয়ে এসে যে মুনাফা করেন, তার সাথে পাইকারি ও জুয়েলার্স পর্যায়ের মুনাফা যুক্ত হয়ে দাম কয়েক ধাপে বেড়ে যায়। একজন যাত্রী ৫ হাজার টাকা শুল্ক দিয়েও ১০ ভরির মতো সোনা দেশে আনতে পারেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২০১৮ সালের স্বর্ণ নীতিমালার পর ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৮টি প্রতিষ্ঠানকে সোনা আমদানির লাইসেন্স দিলেও, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট এবং আমদানি অনুমোদনে সময়ক্ষেপণের কারণে ব্যবসায়ীরা আগ্রহ হারিয়েছেন। ফলে বার্ষিক ২০-৪০ টন চাহিদার বড় অংশই ব্যাগেজ রুলস ও অবৈধ পথে আসা সোনা দ্বারা পূরণ হয়।

বিশ্লেষকদের মতামত ও ভবিষ্যতের পথ

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এই মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়াকে ত্রুটিপূর্ণ এবং বৈশ্বিক বাজারের সঙ্গে দুর্বল সম্পর্কযুক্ত বলে অভিহিত করেছেন। তিনি মনে করেন, বাজুস কোনো ফর্মুলা মেনে চললেও তা প্রকাশ করে না। মূল্য নির্ধারণে স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে তিনি প্রতিযোগিতা কমিশন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নজরদারি কামনা করেন।

তবে বাজুসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বৈশ্বিক দরে সোনা কেনার ব্যবস্থা না হচ্ছে, ততক্ষণ এই পদ্ধতিকে যৌক্তিক বলা ছাড়া উপায় নেই।

সোনার ব্যবসায় আন্তর্জাতিক মান আনতে 'কমোডিটি এক্সচেঞ্জ' ব্যবস্থা চালু করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে, যা ব্যবসায়ীদের বৈশ্বিক মূল্যে সোনা ক্রয়ের সুযোগ দেবে এবং ক্রেতাদের জন্য দাম কমিয়ে আনতে সহায়ক হবে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ