ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ৯ কার্তিক ১৪৩২

'শাপলা' ছাড়া বিকল্প নয়: এনসিপি'র অনড় অবস্থান, আসছে বৃহত্তর কর্মসূচি

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২৪ ১৪:৫৮:৪৮
'শাপলা' ছাড়া বিকল্প নয়: এনসিপি'র অনড় অবস্থান, আসছে বৃহত্তর কর্মসূচি

কাঙ্ক্ষিত 'শাপলা' প্রতীক ঘিরে তৈরি হওয়া জটিলতা নিরসনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাজধানী ঢাকায় বৃহত্তর রাজনৈতিক জমায়েতের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি)-এর সঙ্গে দলটির বিবাদ চরমে পৌঁছালেও, শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন—আইনি প্রক্রিয়ার চেয়ে রাজনৈতিক সংঘাতের পথেই এই সমস্যার সমাধান নিহিত। প্রতীকটির বিকল্প নিয়ে কোনো চিন্তাভাবনা না করে, এনসিপি তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে শক্ত অবস্থান তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা ঘোষণা করেছেন যে, শাপলা প্রতীক না পাওয়ার ইস্যুটি কোনো আইনি পথে সমাধান না করে, তারা এটিকে রাজনীতির ময়দানে টেনে আনবেন। তাদের ভাষ্য, শাপলা প্রতীক সংক্রান্ত ইসির এই সিদ্ধান্ত কেবল একটি প্রতীকের বিষয় নয়, এর সাথে দলের রাজনৈতিক অধিকার এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগের মতো গুরুতর প্রশ্ন জড়িয়ে আছে।

সাংগঠনিক দুর্বলতার প্রচেষ্টা ও ইসির জবাবদিহি

এনসিপি-এর একাধিক নেতার মতে, ইসি যদি শাপলা প্রতীক বরাদ্দ না করে, তবে এটিকে তারা দলটিকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করার একটি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক প্রচেষ্টা হিসেবে ধরে নেবে। এই পদক্ষেপের রাজনৈতিক জবাব দিতেই প্রস্তুত এনসিপি। প্রতীকটি বাতিল করার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আইনি ব্যাখ্যা চেয়ে ইসির কাছে চিঠি দেওয়া হলেও, আগামী সপ্তাহ থেকেই শাপলার জন্য কর্মসূচি আসছে বলে জানানো হয়েছে।

দ্বন্দ্ব তীব্র হওয়ায় শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক লড়াই-ই হবে সমাধান—এমনটাই মনে করছেন এনসিপি নেতৃত্ব। প্রতীকটির বিকল্প নিয়ে কোনো চিন্তাভাবনা না করে, একমাত্র শাপলাতেই অনড় থাকার মাধ্যমে রাজপথে শক্ত উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি। তাদের সিদ্ধান্ত হলো, যতদিন 'শাপলা' না মিলছে, ততদিন লড়াই চলবে।

১৯ অক্টোবরের বৈঠক: অনমনীয় এনসিপি

গত ১৯ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের সাথে জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়। এনসিপি-এর দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ এবং যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম সকাল ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলে এই আলোচনায় অংশ নেন। ঘণ্টাখানেকের এই আলোচনায় শুধুমাত্র 'শাপলা' প্রতীক নিয়েই আলোচনা হয়। ইসি অন্য কোনো প্রতীক গ্রহণের কথা বললেও এনসিপি তাদের অবস্থানে অটল থাকে।

মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এখনো শাপলা প্রতীক পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে জানান, নির্বাচন কমিশন একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে বলে জানিয়েছে। এনসিপি সাদা শাপলা বা লাল শাপলা প্রতীক চেয়ে এসেছে। তিনি উল্লেখ করেন, ইসি এই পর্যন্ত প্রতীকটি দেবে না—এমন কথা বলেনি। তবে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কিছুদিন আগে প্রতীক বাড়াতে বা কমাতে পারেন বলে মন্তব্য করেছিলেন। দ্রুত শাপলাকে তালিকাভুক্ত করে জনগণের সামনে বিষয়টির নিষ্পত্তি করার জন্য ইসিকে অনুরোধ করেছে এনসিপি।

হাসনাত আবদুল্লাহর অভিযোগ: 'আইনগত ব্যাখ্যা নেই'

প্রতীকটির বিকল্প নিয়ে কোনো চিন্তাভাবনা নেই বলে জানিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ ইসির কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, 'আমরা বিকল্প কেন নেব? এটার আইনগত তো ব্যাখ্যা লাগবে। আমরা দেখেছি, এখন পর্যন্ত কোনো আইনগত ব্যাখ্যা, কোনো কিছুই নির্বাচন কমিশন আমাদের দিতে পারেনি।'

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, বিভিন্ন সংস্থা ও অন্য রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে এনসিপি-কে ভিন্ন প্রতীক গ্রহণে সম্মত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তার মতে, এনসিপি-কে কী প্রতীক দেওয়া হবে বা হবে না, তা নিয়ে অন্য রাজনৈতিক দলের আগ্রহ থাকা একটি 'শঙ্কার কারণ'।

জাতীয় প্রতীকের নজির ও ইসির 'অভূতপূর্ব' পদক্ষেপ

দলটির একাধিক সিনিয়র নেতা স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, দলীয় প্রতীক 'শাপলা' পেতে রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে বাধ্য করা হবে। শাপলার বিকল্প আর কোনো প্রতীক তারা গ্রহণ করতে রাজি নয়। যদিও তারা প্রথমে শাপলা, কলম ও মোবাইল ফোন—এই তিনটি প্রতীক প্রস্তাব করেছিল। বর্তমানে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শাপলাতেই আটকে আছেন এবং বিকল্প প্রতীক নিয়ে আর ভাবতে চাইছেন না। এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে একাধিকবার চিঠি আদান-প্রদানও হয়েছে।

গত ২২ জুন এনসিপি নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমা দেয় এবং পরে ৩ আগস্ট ও ২৪ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়ে তাদের পছন্দ সংশোধন করে সাদা বা লাল শাপলা প্রতীক হিসেবে চায়।

৩০ সেপ্টেম্বর ইসি দলটিকে চিঠি দিয়ে জানায়, অনুমোদিত প্রতীকের তালিকা থেকে একটি প্রতীক বেছে নিয়ে ৭ অক্টোবরের মধ্যে জমা দিতে হবে। পরবর্তীতে ১৯ অক্টোবরের মধ্যে প্রতীক নির্বাচনের জন্য আরেকটি চিঠি দেওয়া হয়। ওই দিন এনসিপি লিখিতভাবে ইসির কাছে জানতে চায়, প্রতীক তালিকায় রাখা বা বাদ দেওয়ার মানদণ্ড কী।

এর আগে, ৯ জুলাই ইসি সিদ্ধান্ত নেয় যে নির্বাচন পরিচালনা বিধি অনুযায়ী শাপলা প্রতীক তালিকায় রাখা হবে না। এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর কমিশন নির্বাচনী প্রতীকের সংখ্যা ৬৯ থেকে বাড়িয়ে ১১৫টি করলেও শাপলাকে বাদ রাখে। এর মধ্যে ৫১টি নিবন্ধিত দলকে দেওয়া হয় এবং বাকিগুলো স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষিত থাকে।

পরদিন ২৪ সেপ্টেম্বর এনসিপি চিঠি দিয়ে জানায়, কমিশনের যুক্তি 'আইনগতভাবে সঠিক নয়'। তাদের দাবি, কমিশনের প্রত্যাখ্যানের কোনো আইনি ভিত্তি নেই। কারণ, জাতীয় প্রতীকে শাপলা পানির ওপর ভাসমান এবং এর রং হলুদ ও লালচে।এ প্রসঙ্গে দলটির একজন সিনিয়র নেতা বলেন, জাতীয় প্রতীকে চারটি ভিন্ন উপাদান রয়েছে এবং ইসি ইতোমধ্যে 'ধানের শীষ' (বিএনপি) এবং 'তারা' (জাসদ-রব) প্রতীক দিয়েছে। এমন নজির থাকায় ইসি শাপলাকেও তালিকাভুক্ত করে দিতে পারে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, তারা যে প্রতীক চাইছেন, তা দেওয়া হবে না এবং অন্য একটি প্রতীক তাদের ওপর 'চাপিয়ে দেওয়া' হবে—এই ধরনের অভূতপূর্ব এবং নিন্দনীয় মন্তব্য যেই কমিশন করতে পারে, তাদের পক্ষে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়া সম্ভব নয়।

চূড়ান্ত রাজনৈতিক মোকাবিলার ঘোষণা

দলীয় প্রতীক হিসেবে 'শাপলা' না পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে এনসিপি-এর যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেছেন, 'এটা আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব।' তিনি জানান, তারা ইসিকে বলেছেন যে, বিজ্ঞাপনে প্রার্থিতা-প্রতীক বা কাঙ্ক্ষিত প্রতীক উল্লেখ করতে হয় এবং কাউকে জোর করে অন্য প্রতীক চাপিয়ে দেওয়া যায় না, এটি ইসির নিজস্ব আইনেও বলা আছে।

তিনি আরও যোগ করেন, 'আগামী সপ্তাহের পরে আমরা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যাব। তার আগে বেশকিছু বিভাগীয় এবং অন্যান্য সমন্বয় সভা হবে। তবে, আগামী সপ্তাহে ঢাকায় বড় কর্মসূচি করার পরিকল্পনা আছে। শাপলা প্রতীক না দিলে আইনি লড়াই করব না, রাজনৈতিকভাবেই বিষয়টি মোকাবেলা করব।'

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ