ঢাকা, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০ কার্তিক ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

'সিন্ডিকেট' ভাঙতে মাশরাফিকে চাইছে বিসিবি, সরকার কি বলছে

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২৫ ২১:৪২:৩৬
'সিন্ডিকেট' ভাঙতে মাশরাফিকে চাইছে বিসিবি, সরকার কি বলছে

দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা কাটিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে, এমন জোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। একাধিক ক্রীড়া বিশ্লেষকের মতে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অভ্যন্তরে চলমান সংকট ও বাজে পারফরম্যান্স থেকে মুক্তি পেতে সাবেক সফল ওয়ানডে অধিনায়ক এবং সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ফেরানোর ব্যাপারে সরকার ও বিসিবির উচ্চ মহল থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ক্রিকেটে যে গভীর সংকট চলছে, তার প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্তকে 'দারুণ' হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

সংকট থেকে উত্তরণের বার্তা

বাংলাদেশ দল বর্তমানে ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে তাদের বিগত ১৯ বছরের ইতিহাসে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। ঘরের মাঠে যেখানে একসময় ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের বিপক্ষে সিরিজ জয় ছিল নিয়মিত ঘটনা, সেখানে এখন পরাজয় যেন এক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

ক্রীড়া বিশ্লেষকরা বলছেন, ড্রেসিংরুমের পরিস্থিতিও ভালো নয়। একটি 'সিন্ডিকেট' বা 'কর্কট রোগে' আক্রান্ত অবস্থা চলছে, যা কোনো কোচিং বা থেরাপিতেই কাজ করছে না। এমন পরিস্থিতিতেই মাশরাফিকে নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

সরকারের অবস্থান পরিবর্তন

এই আলোচনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে আসা ইঙ্গিত। জানা গেছে, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া মাশরাফির জাতীয় ক্রিকেট সেটআপে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে 'ইতিবাচক মনোভাব' দেখিয়েছেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালকদের মধ্যে ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিলের (এনএসসি) কোটায় দুজন পরিচালক মনোনীত হন। সম্প্রতি এই কোটায় একজন পরিচালকের নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলে, তাঁকে সরিয়ে অন্য একজনকে বেছে নেওয়া হয়। এই ঘটনাটি বিসিবি'র প্রশাসনে বড় পরিবর্তনের পটভূমি তৈরি করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি মাশরাফি এনএসসি কোটায় বিসিবিতে আসতেন, তবে সেই বিতর্ক অনেকটাই এড়ানো যেত।

ক্রিকেটারদের ভরসা মাশরাফি

মাশরাফির গুরুত্ব কেবল অতীত সাফল্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বমঞ্চে কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল এবং দেশের ইতিহাসে প্রথম ট্রাই-নেশন সিরিজ জয়ের মতো সাফল্য দেখেছিল।

সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, জাতীয় দলের বর্তমান ক্রিকেটারদের অনেকেই এখনও তাঁকে মান্য করেন। দলের তারকা অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ সম্প্রতি প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন যে, ম্যাচের পরিকল্পনা তৈরির ক্ষেত্রে তিনি মাশরাফি বিন মর্তুজার সাথে আলোচনা করেন এবং তাঁর পরামর্শ 'অনেক সাহায্য' করে।

বর্তমানে দলের অধিনায়কও তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ নেন বলে জানা গেছে। এটিই প্রমাণ করে, মাশরাফি শুধু একজন সাবেক অধিনায়ক নন—তিনি এখনও দলের "ক্রিকেটের থিঙ্কিংয়ের গডফাদার"।

'সিন্ডিকেট' ভাঙার চাবি

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জাতীয় দলের ভেতরে 'অমুক পন্থী' ও 'তমুক পন্থী' ক্রিকেটারদের নিয়ে যে ভাগাভাগি এবং দল নির্বাচনে যুক্তিহীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রবণতা তৈরি হয়েছে, মাশরাফিই একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি এই সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেন।

ক্রীড়া বিশ্লেষকরা জোর দিয়ে বলছেন, মাশরাফির মতো একজন ব্যক্তিত্ব, যিনি এখনও দেশের ক্রিকেটে অবস্থান করছেন এবং খেলোয়াড়দের আস্থা ধরে রেখেছেন, তাঁর অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমেই দলের অভ্যন্তরে স্থিতিশীলতা ও শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব।

মাশরাফি কোন নির্দিষ্ট পদে আসবেন তা বলা কঠিন, তবে সরকার, বিসিবি ও ক্রিকেটারদের থেকে আসা সম্মিলিত ইতিবাচক স্পর্শে মনে করা হচ্ছে, খুব শিগগিরই তিনি দেশের ক্রিকেটে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ফিরতে চলেছেন। তাঁর প্রত্যাবর্তন জাতীয় ক্রিকেটকে তার স্বর্ণযুগের পথে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি বোর্ডের অভ্যন্তরে চলমান অসঙ্গতি দূর করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ