ঢাকা, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২ কার্তিক ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

মার্জিন ঋণ বিধিমালায় আমূল সংস্কার: আবারও অস্থির শেয়ারবাজার

শেয়ারনিউজ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ২৭ ১৭:১৯:৩৪
মার্জিন ঋণ বিধিমালায় আমূল সংস্কার: আবারও অস্থির শেয়ারবাজার

নেতিবাচক ইকুইটি (Negative Equity) দূর করার প্রচেষ্টায় উল্টো আস্থার সংকট

শেয়ারবাজারকে দীর্ঘকাল ধরে পঙ্গু করে রাখা ‘নেগেটিভ ইকুইটি’র ফাঁদ থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) মার্জিন ঋণ সংক্রান্ত নীতিমালায় এক ব্যাপক পরিবর্তন আনতে চলেছে। তবে এই কঠোর নীতিগত পরিবর্তনের সংবাদ বাজারে ভয়াবহ অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। বিনিয়োগকারীদের বড় অংশ বলছেন, বাজারকে সুস্থির করার বদলে এই আকস্মিক পদক্ষেপ উল্টো ভীতি সঞ্চার করেছে, যার ফলে তীব্র বিক্রয় চাপে সূচক ক্রমাগত নিম্নমুখী হচ্ছে।

বিএসইসি নিশ্চিত করেছে যে, সংশোধিত মার্জিন ঋণ বিধিমালা শীঘ্রই গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে। কমিশনের দাবি, নতুন বিধানের মাধ্যমে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান এবং বিনিয়োগকারী— উভয় পক্ষের নিরাপত্তাই সুনিশ্চিত হবে। কিন্তু বাজারের বাস্তব চিত্র ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে।

বাজারের সংখ্যাতত্ত্ব: ২৯ হাজার কোটি টাকা মূলধন বিলীন

বিএসইসি'র সুরক্ষার দাবির বিপরীতে, বাজারের পতনের সংখ্যাগুলো উদ্বেগজনক। মাত্র এক মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে, প্রধান সূচক ৫,৪৪৭ পয়েন্টের (যা ৫ সেপ্টেম্বর ছিল) সেই অবস্থান থেকে ৫,০০০-এর নিচে নেমে এসেছে। এই স্বল্প বিরতিতে সূচক প্রায় ৩৬১ পয়েন্ট হারিয়েছে।

সূচকের এই বড় পতনের সঙ্গে সঙ্গে বাজার মূলধনেও বড় ধরনের ক্ষত তৈরি হয়েছে। এই সময়ে বাজার মূলধন থেকে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা বিলীন হয়ে গেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মার্জিন ঋণ সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও মনোবলে বড় ধাক্কা দিয়েছে।

নীতিমালা প্রণয়নে অংশীদারদের বাদ দেওয়ার অভিযোগ: তৈরি হচ্ছে আস্থার ফাটল

বিনিয়োগকারী এবং ব্রোকারেজ হাউসগুলোর পক্ষ থেকে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে যে, যাদের ওপর এই নিয়ম সরাসরি কার্যকর হবে, তাদের কাউকেই নীতিমালা প্রণয়নের আলোচনা প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। একাধিক ব্রোকার উল্লেখ করেন, বিএসইসি নীতিগতভাবে স্থিতিশীলতা চাইলেও, বাস্তবে এই ধরনের হঠাৎ পরিবর্তনগুলো বাজারে গভীর আস্থার সংকট তৈরি করছে।বিনিয়োগকারীরা হতাশা প্রকাশ করে বলছেন, “বিনিয়োগকারীর সুরক্ষা”র কথা বলা হলেও, বিএসইসি এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে যা বাস্তবে তাদের আরও দুর্বল অবস্থানে ঠেলে দিচ্ছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার ব্যাখ্যা: দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকিবিহীন ও টেকসই বাজার

তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা ভিন্নমত পোষণ করছেন। তারা বলছেন, নতুন বিধিমালা হয়তো স্বল্পমেয়াদে বাজারে কিছুটা চাপ সৃষ্টি করবে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটি বাজারকে ‘ঝুঁকিমুক্ত ও টেকসই’ করে তুলবে। তাদের দাবি, এই নীতিমালা কার্যকর হলে ব্রোকারদের অতিরিক্ত ঋণনির্ভর ট্রেডিং বন্ধ হবে, বিনিয়োগকারীরা তাদের বাস্তব আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তিতে বিনিয়োগে ফিরবেন এবং বাজারে দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।

তবে বাজারের অংশীদারদের একটি বড় অংশ বলছে, এই সংস্কারের ইতিবাচক প্রভাব দেখা দেওয়ার আগেই বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

সোমবারের বাজার চিত্র: সূচকে বড় ধস, লেনদেন কমলো ১৫ শতাংশ

মার্জিন ঋণ পরিবর্তন নিয়ে চলমান অস্থিরতার মধ্যে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস সোমবার ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেনে বড় ধরনের পতন লক্ষ্য করা গেছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই):

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪০.১২ পয়েন্ট হ্রাস পেয়ে ৫ হাজার ৮৬.৮৫ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে।

শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ১১.০৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৭২.৬৯ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৭.৪৯ পয়েন্ট হারিয়ে ১ হাজার ৯৬৯.১৯ পয়েন্টে নেমেছে।

আজ ডিএসইতে মোট ৩৯৬টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নেয়। এর মধ্যে ২৬০টির দাম কমেছে, বিপরীতে দাম বেড়েছে মাত্র ৮১টির, এবং ৫৫টির দর ছিল অপরিবর্তিত।

লেনদেন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ:

সারা দিনে ডিএসইতে ৩৯৪ কোটি ১৮ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়। এটি আগের কার্যদিবসের ৪৬১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার তুলনায় প্রায় ৬৭ কোটি টাকা কম, অর্থাৎ এক দিনে লেনদেন প্রায় ১৫ শতাংশ কমেছে।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই):

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। সেখানে মোট ১৭ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়, যা আগের দিনের ১১ কোটি ৪৭ লাখ টাকার তুলনায় বেশি।

সিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয় ১৮৯টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ১০৬টির দাম কমেছে, ৫৭টির বেড়েছে এবং ২৬টির কোনো পরিবর্তন হয়নি।

দিন শেষে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৬৮.২৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৩৭০.৯৯ পয়েন্টে, যা বাজারের অস্থিরতা বৃদ্ধিরই ইঙ্গিত দেয় (আগের কার্যদিবসে পতন ছিল ১৭.৩৫ পয়েন্ট)।

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ