ঢাকা, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৯ কার্তিক ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

নতুন পে স্কেল: সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন সুখবর

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৩ ১৭:৫৬:৩৮
নতুন পে স্কেল: সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন সুখবর

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়নের উদ্দেশ্যে নবগঠিত পে কমিশন তার কার্যক্রম শুরু করেছে। বিভিন্ন সরকারি কর্মচারী সংগঠনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই তাদের সুনির্দিষ্ট দাবি ও পরামর্শ কমিশনের কাছে দাখিল করা হয়েছে। বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে সর্বনিম্ন বেতন কত টাকায় স্থির করা হতে পারে সেই প্রশ্নটি। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, অধিকাংশ সরকারি কর্মচারী সংগঠনই সর্বনিম্ন বেতন ৩৫ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বেতন ৭০ শতাংশ থেকে শুরু করে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত উন্নীত হতে পারে এমন সুস্পষ্ট আভাসও পাওয়া গেছে।

সর্বনিম্ন ৩৫ হাজার টাকার দাবি ও যৌক্তিক কারণ

বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন সম্প্রতি পে কমিশনের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় সর্বনিম্ন বেতন ৩৫ হাজার টাকায় নির্ধারণের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছে। সংগঠনগুলো সম্মিলিতভাবে অন্তত ৭০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে।

ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র আব্দুল মালেক এই বিষয়ে একটি জাতীয় গণমাধ্যমকে তার অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী সর্বনিম্ন মজুরি ৩৫ হাজার টাকা হওয়া উচিত এবং বিদ্যমান ২০টি গ্রেড কমিয়ে ১২টিতে নামিয়ে আনা হোক।

আব্দুল মালেক দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে টিকে থাকার বিষয়টি মাথায় রেখেই ৩৫ হাজার টাকার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, সর্বশেষ পে স্কেল প্রণীত হয়েছিল ২০১৫ সালে, কিন্তু ২০২০ সালে এটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। তিনি উল্লেখ করেন, যদি নিয়মিত পে স্কেল চালু থাকত, তবে ২০২০ সালে বেতন দ্বিগুণ হতো এবং ২০২৫ সালে কর্মচারীদের ন্যূনতম পারিশ্রমিক ৩৩ হাজার টাকায় পৌঁছত। এই অনিয়মের কারণে সরকারি কর্মচারীরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

তিনি বেসরকারি খাতেও বেতন বাড়ানোর বিষয়ে ফেডারেশনের গুরুত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, একজন মানুষের দৈনিক তিন বেলা ডাল-ভাত-ভর্তা খেতেই প্রায় ১৫০ টাকা খরচ হয়। ছয় সদস্যের একটি পরিবারের জন্য শুধুমাত্র খাদ্যের পেছনে মাসে কমপক্ষে ২৭ হাজার টাকা প্রয়োজন। এর সঙ্গে বাসাভাড়া, চিকিৎসা ও শিক্ষার মতো অন্যান্য খরচ যোগ হলে ৫০ হাজার টাকাও যথেষ্ট হয় না।

বেতন বৈষম্য হ্রাস ও গ্রেড কাঠামোতে পরিবর্তন

কমিশনের সদস্যদের মতে, নতুন বেতন কাঠামোর প্রাথমিক লক্ষ্য হলো বেতন-ভাতাদির ক্ষেত্রে বিদ্যমান অসামঞ্জস্যতা কমানো। এই উদ্দেশ্যে বিদ্যমান গ্রেড কাঠামো ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আব্দুল মালেক জানান, বর্তমানে বেতন বৈষম্য ১:১০ অনুপাতে রয়েছে, যা কমিয়ে ১:৪ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, পে স্কেল সাধারণত ৫ বছর পর পর হওয়া বাঞ্ছনীয়, কিন্তু ২০২০ এবং ২০২৫—এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তা কার্যকর না হওয়ায় সরকারি কর্মীরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

পে কমিশনের সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, গ্রেড সংখ্যা হ্রাস করা হবে। তবে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে গ্রেডের সংখ্যা কত হবে এবং সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত কী হবে, তা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হবে।

উচ্চমাত্রায় বেতন বৃদ্ধির সংকেত

শিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার জানিয়েছেন, কমিশন আগামী জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে তাদের পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশমালা সরকারের কাছে জমা দিতে পারে। তিনি আরও সংকেত দেন যে, বেতন ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ, এমনকি ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

অন্যদিকে, শিক্ষাসচিব রেহানা পারভীন ঘোষণা করেন যে, জাতীয় বেতন স্কেল অচিরেই প্রকাশ করা হবে। তিনি আরও নিশ্চিত করেন যে, নতুন কাঠামোতে শিক্ষকদের বাড়িভাড়াসহ অন্যান্য ভাতার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

পর্যালোচনা ও সুপারিশমালা প্রণয়ন প্রক্রিয়া

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে অনলাইনে দুই হাজারেরও অধিক সংগঠন তাদের মতামত পেশ করেছে। এই মতামত যাচাই-বাছাই শেষে কমিশন প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০টি সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় সম্পন্ন করেছে। সব প্রস্তাব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করার পর সুপারিশের খসড়া তৈরি করা হবে, যা সদস্যদের সম্মতিতে চূড়ান্ত করে সরকারের কাছে পেশ করা হবে।

৫. প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) এবং উত্তর

১. নতুন পে স্কেলে সর্বনিম্ন বেতন কত নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে?

উত্তর: অধিকাংশ সরকারি কর্মচারী সংগঠন সর্বনিম্ন বেতন ৩৫ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনও একই প্রস্তাব দিয়েছে।

২. নতুন পে স্কেলে বেতন কত শতাংশ পর্যন্ত বাড়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে?

উত্তর: সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে ৭০ শতাংশ থেকে শুরু করে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধির সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

৩. সর্বনিম্ন বেতন ৩৫ হাজার টাকা প্রস্তাবের পেছনে ফেডারেশনের মূল যুক্তি কী?

উত্তর: ফেডারেশনের মুখপাত্র আব্দুল মালেক জানান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং ছয় সদস্যের পরিবারের মাসিক ন্যূনতম ২৭ হাজার টাকার খাদ্য খরচসহ অন্যান্য ব্যয় (বাসাভাড়া, চিকিৎসা, শিক্ষা) বিবেচনা করে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

৪. বিদ্যমান বেতন কাঠামোতে আর কী পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে?

উত্তর: নতুন পে স্কেলে বেতন বৈষম্য (১:১০ অনুপাত) কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং বিদ্যমান গ্রেড সংখ্যা ২০ থেকে কমিয়ে ১২টি বা পুনর্বিন্যাস করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

৫. নতুন বেতন কাঠামোর সুপারিশ কখন জমা দেওয়া হতে পারে?

উত্তর: শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার জানিয়েছেন, নতুন বেতন স্কেলের সুপারিশ আগামী জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে জমা দেওয়া হতে পারে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ