ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

"তোর পি ‘রি’য়ড শেষ হলে চলে আসিস!" – বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটারকে যৌ‘ন নির্যা‘তন

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৬ ১৯:৪২:৩৩
"তোর পি ‘রি’য়ড শেষ হলে চলে আসিস!" – বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটারকে যৌ‘ন নির্যা‘তন

বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটে উঠে এসেছে এক ভয়াবহ চিত্র। জাতীয় দলের অন্যতম তারকা ক্রিকেটার জাহানারা আলম সম্প্রতি এক গণমাধ্যমে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ধারাবাহিক যৌন হয়রানির মর্মস্পর্শী বয়ান দিয়েছেন, যা দেশের ক্রীড়াঙ্গনে তীব্র ঝাঁকুনি সৃষ্টি করেছে। তার এই অভিযোগ একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির দিকে ইঙ্গিত করছে।

মানসিক যন্ত্রণায় ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর মর্মান্তিক সিদ্ধান্ত

সংবাদ মাধ্যমে নিজের কষ্টের কথা জানাতে গিয়ে জাহানারা আলম অত্যন্ত আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি জানান, একাধিকবার যৌন হয়রানির শিকার হয়ে তিনি তীব্র মানসিক যন্ত্রণার শিকার হয়েছেন এবং এই জঘন্য কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের প্রতি তার কোনো অনুকম্পা নেই। দীর্ঘ ১৬ বছর জাতীয় দলের হয়ে নিরলস সেবা প্রদান এবং আড়াই বছর দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার পরও এমন মানসিক চাপের সম্মুখীন হওয়ায় তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেন।

এই চাপ সহ্য করতে না পেরে তিনি জাতীয় দল থেকে সরে দাঁড়ানোর মর্মান্তিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। এমনকি, ক্রিকেট থেকে বিরতি নেওয়ার ফলে তিনি জাতীয় দলের বেতনও নেননি, কারণ তার বিবেক তাকে পারিশ্রমিক নিতে অস্বীকৃতি জানায়।

২০২১ সালে শুরু হয় হয়রানির খতিয়ান

জাহানারা আলমের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ২০২১ সাল থেকেই তিনি মূলত এই ধরনের ঘটনা দ্বারা সবচেয়ে বেশি বিরক্ত হয়েছেন। তার অভিযোগের তালিকায় রয়েছে— ২০২১ সালে কো-অর্ডিনেটর সারফরাজ বাবুকে ব্যবহার করে 'তৌহিদ ভাই' তাকে একটি গর্হিত প্রস্তাব দেন। জাহানারা বুদ্ধিমত্তার সাথে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পরেই মনজুরুল ইসলাম মনজু নামে এক ব্যক্তি তার প্রতি অশোভন আচরণে প্রবৃত্ত হন।

বিশ্বকাপের ড্রেসিংরুমে আপত্তিকর স্পর্শ এবং কুৎসিত মন্তব্য

২০২২ সালের বিশ্বকাপের সময় মনজু ভাই তাকে আবারও অপ্রীতিকরভাবে অ্যাপ্রোচ করেন। জাহানারা জানান, নেট অনুশীলনের সময় কিংবা শুভেচ্ছা বিনিময়ের উদ্দেশ্যে হ্যান্ডশেক করার সময় মনজু ভাই তাকে অশালীনভাবে নিজের বক্ষে আকর্ষণ করতেন, তার কাঁধে স্বেচ্ছায় হাত রাখতেন এবং কানের কাছে মুখ এনে জিজ্ঞেস করতেন, "তোর পিরিয়ডের আজ কয়দিন চলতেছে?"

একবার তিনি যখন উত্তর দেন "পাঁচ দিন", তখন মনজু ভাই তাকে সরাসরি বলেন, "এতদিন পিরিয়ড থাকে নাকি? মানুষের তো তিন-চার দিনে ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা। আমার দিকটাও তো দেখতে হবে তোর। পিরিয়ড শেষ হলে আমার কাছে চলে আসিস।" এমন পরিস্থিতিতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যেতেন এই তারকা ক্রিকেটার।

ব্যক্তিগত শারীরিক তথ্য অপব্যবহারের অভিযোগ

আন্তর্জাতিক নারী ক্রিকেট দলগুলো সাধারণত ফিজিওথেরাপিস্ট বা ডাক্তারদের মাধ্যমে খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত মাসিক চক্রের তথ্য সংরক্ষণের জন্য একটি অ্যাপ ব্যবহার করে। কিন্তু জাহানারা অভিযোগ করেন যে, মনজু ভাই সেই ব্যক্তিগত তথ্য অবৈধভাবে ব্যবহার করে তাকে নিপীড়ন করতেন।

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, মনজু ভাইয়ের অভ্যাস ছিল যেকোনো মেয়ে খেলোয়াড়কে কাঁধে ধরে নিজের বুকের কাছে টেনে নিয়ে শরীরে জোরপূর্বক চাপ সৃষ্টি করা। অনেক সময় মেয়েরা তাকে এড়ানোর জন্য দূর থেকে হাত বাড়িয়ে দিত। এই ঘটনা দলের মধ্যে উপহাসের বিষয়ে পরিণত হয়, যেখানে বলা হতো, "ওই যে আসতেছে, এখন বুকের মধ্যে নিয়ে নিবে।"

সিইওর কাছে 'অবজারভেশন লেটার' ও বিচার চাওয়া

ক্রিকেট তার রুটি-রুজির একমাত্র পথ হওয়ায় দলে থাকা অবস্থায় তিনি সাহস করে কিছু বলতে বা প্রতিবাদ করতে পারেননি। তবে পরবর্তীতে তিনি একটি "অবজারভেশন লেটার" (যা আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র নয়) সরাসরি বিসিবির প্রধান নির্বাহীর দপ্তরে জমা দেন। সেখানে তিনি হয়রানির সময়কাল, তারিখ ও আপত্তিকর ভাষা সহ পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য প্রদান করেন।

তিনি আরও জানান, একই ধরনের হয়রানির শিকার হওয়া একটি প্রথম বিভাগের মহিলা ক্রিকেটারের কাছ থেকে পাওয়া কণ্ঠস্বর প্রমাণও তিনি সিইওর কাছে পেশ করেছেন। জাহানারা আলম দৃঢ়তার সঙ্গে জানান যে, তিনি এসব মানুষের বিচার চান এবং বিসিবির কাছে নয়, আল্লাহর কাছে এদের ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষা করেছেন।

তার মূল দাবি— নারী ক্রিকেটারদের জন্য কর্মক্ষেত্রে একটি শঙ্কামুক্ত পরিবেশের নিশ্চয়তা দেওয়া হোক, যাতে ভবিষ্যতে কোনো মেয়ে এমন হয়রানির শিকার না হয়।

ভিডিও দেখতে এখানেক্লিক করুন।

তানভির ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ