ঢাকা, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

২০২১ সালে টাইগারদের আলোচিত ও অবিশ্বাস্য ‘১০’ রেকর্ড

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২১ ডিসেম্বর ২২ ১১:৩৬:২৭
২০২১ সালে টাইগারদের আলোচিত ও অবিশ্বাস্য ‘১০’ রেকর্ড

এছাড়া বছরজুড়ে আলোচিত হয়েছে টাইগার ক্রিকেটারদের ছোট-বড় নানা কীর্তি। অন্যান্য বছরের মত এ বছরও মাঠে নানা রেকর্ড গড়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। একনজরে চোখ রাখা যাক ২০২১ সালে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের ১০টি আলোচিত রেকর্ডে।

১. টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী সাকিব পাকিস্তানের কিংবদন্তি অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদিকে পেছনে ফেলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক এখন সাকিব আল হাসান।

চলতি বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নতুন এই রেকর্ড গড়েন তিনি। বিশ্বকাপের ৩১টি ম্যাচে সাকিবের উইকেট এখন ৪১টি। দুইয়ে থাকা আফ্রিদি ৩৪ ম্যাচে ৩৯টি উইকেটের মালিক। এছাড়া ৩১ ম্যাচে ৩৮টি উইকেট নিয়ে এই তালিকায় তিন নম্বরে আছেন সাবেক লঙ্কান পেসার লাসিথ মালিঙ্গা।

২. টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ উইকেট ও ১০০০ রান সাকিব মানেই যেন রেকর্ড আর রেকর্ড। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে ম্যাথু ওয়েডকে সাজঘরের পথ দেখিয়ে এই ফরম্যাটে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন৷

সব মিলিয়ে দ্বিতীয় ও স্পিনার হিসেবে বিশ্ব ক্রিকেটের প্রথম বোলার হিসেবে ১০০ উইকেটের দেখা পান তিনি। এছাড়া টি-টোয়েন্টিতে আগেই ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করা সাকিব এখন এই ফরম্যাটে ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ১০০০ রান ও ১০০ উইকেটের মালিক।

৩. সাকিব এখন টি-টোয়েন্টির সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বছর হওয়ায় এই সময়ে বাংলাদেশ এই সংস্করণে মাঠে নামার সুযোগও পেয়েছে বেশি। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাকিব বনে গেছেন টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বোলার। সব মিলিয়ে ৯৪ ম্যাচে সাকিবের কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন ১১৭ জন ব্যাটার। দুই ও তিনে থাকা টিম সাউদি ও লাসিথ মালিঙ্গার উইকেট সংখ্যা যথাক্রমে ১১১ ও ১০৭।

৪. সবচেয়ে বেশিবার ৪ বা তার চেয়ে বেশি উইকেট টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ডের শেষ ম্যাচে পিএনজির মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। ঐ ম্যাচে মাত্র ৯ রানের খরচায় ৪ উইকেট তুলে নেন সাকিব আল হাসান।

এই নিয়ে টি-টোয়েন্টিতে ৬ষ্ঠ বারের মতো ৪ কিংবা তার চেয়ে বেশি উইকেট পান তিনি। সাবেক পাকিস্তানি পেসার উমর গুলের পর দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ছয়বার এই মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব। পরে অবশ্য বিশ্বকাপ চলাকালীন আফগান লেগি রশিদ খানও এই তালিকায় যোগ দিয়েছেন।

৫. যে অর্জন কেবলই নাসুমের চলতি বছর ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে দুইটি ওভারে উইকেটসহ মেডেন নেন নাসুম আহমেদ। যে কীর্তি নেই আর কোনো বোলারের। টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে ৩৩তম বোলার হিসেবে এক ম্যাচে দুইটি মেডেন পান নাসুম। তবে ঐ ওভার দুইটিতেই উইকেট পাওয়া একমাত্র বোলার নাসুম। কিউইদের বিপক্ষে সেই ম্যাচে ৪ ওভার বোলিং করে মাত্র ১০ রান খরচায় ৪ উইকেট তুলে নেন নাসুম।

৬. তামিমকে ছাপিয়ে মুমিনুল ফেব্রুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ঘরের মাঠে খেলার সুযোগ পান টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক। তামিম ইকবালের সমান ৯টি টেস্ট সেঞ্চুরির মালিক মুমিনুল দ্বিতীয় ইনিংসে ছাড়িয়ে যান দেশসেরা ওপেনারকে।

এই ইনিংসে ১৪২ বলে ১১৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন টাইগার দলপতি। এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরির সংখ্যা আরও এক বাড়িয়ে নিয়েছেন। টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ডধারী মুমিনুলের শতক এখন ১১টি।

৭. বিদেশের মাটিতে মুমিনুলের প্রথম ও আরেক রেকর্ড চলতি বছরের এপ্রিলে দেশের বাইরে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান মুমিনুল হক। পাল্লেকেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিদেশের মাটিতে প্রথম শতকের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। এর আগে দেশের মাটিতে আরও দশটি সেঞ্চুরি করেন মুমিনুল।

বিদেশের মাটিতে প্রথম সেঞ্চুরির আগে এত বেশি সেঞ্চুরি টেস্ট ক্রিকেটের সুদীর্ঘ ইতিহাসেই কারো নেই। মুমিনুলের আগে এই রেকর্ডের মালিক ছিলেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান অ্যালান ল্যাম্ব। তিনি ক্যারিয়ারের ১৪ সেঞ্চুরির মধ্যে প্রথম ৯টিই করেছিলেন দেশের মাটিতে, তার দশম সেঞ্চুরিটি আসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। ৮. রিয়াদ-তাসকিনের রেকর্ড জুটি জিম্বাবুয়ের মাটিতে হারারে টেস্টে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের আজীবন মনে রাখার মতো এক পার্টনারশিপ উপহার দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও তাসকিন আহমেদ। নবম উইকেটে ১৯১ রানের অসাধারণ একটি জুটি গড়েন এই দুই ব্যাটার।

এটাই এখন নবম উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস৷ টাইগারদের আগের রেকর্ডটিতেও ছিল রিয়াদের অবদান৷ আবুল হাসান রাজুকে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে রিয়াদ গড়েছিলেন ১৮৪ রানের জুটি। রাজু’র পর তাসকিনের সাথে গড়া জুটিতেও রিয়াদের থেকে গেছে পুরোনো সেই আক্ষেপ।

অল্পের জন্য নবম উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রানের বিশ্ব রেকর্ড ছোঁয়া হয়নি কোনোবারই। তাইতো ১৯৯৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ক্রিকেটার মার্ক বাউচার ও প্যাট সিমকক্সের ১৯৫ রানের জুটি এখনও ইতিহাসের সেরা।

৯. আবারও সাকিব, আরেক রেকর্ড চলতি বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ডে পিএনজির বিপক্ষে বাঁচা মরার লড়াইয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে মাত্র ৯ রান খরচায় ৪ উইকেট এবং ব্যাট হাতে ৪৬ রান করে দারুণ এক জয় এনে দেন সাকিব।

পরিসংখ্যান বলছে, সাকিবের এই অলরাউন্ড পারফরম্যান্স টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসের দ্বিতীয় সেরা। ২০০৯ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে অপরাজিত ৬৬ রান ও বোলিংয়ে ৩৮ রান খরচায় ৪ উইকেট নিয়েছিলেন ডোয়াইন ব্রাভো। ব্রাভোর পরই সাকিবের ৪৬ রান ও ৪ উইকেটের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেরা হিসেবে জায়গা করে নেয়।

১০. আইসিসি ইভেন্ট মানেই যেন অন্যরকম সাকিব বড় মঞ্চের বড় তারকা বলে কথা। মঞ্চটা যত বড় হয়, সাকিবের পারফরম্যান্সের গ্রাফ ততই ওপরের দিকে উঠতে শুরু করে। ২০১৭ সালে থেকে আইসিসি ইভেন্টে বাংলাদেশের জয় পাওয়া সবগুলো ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন সাকিব।

যার সর্বশেষ উদাহরণ, ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পিএনজির বিপক্ষে ম্যাচসেরা এই অলরাউন্ডার। এই ম্যাচে ৩৭ বলে ৪৬ রান ও ৯ রান খরচায় ৪ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচসেরা হন। সবমিলিয়ে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের সর্বশেষ ৬টি জয়ী ম্যাচের নায়ক তিনি। টানা এই ছয়টির মধ্যে ২০১৯ ওডিআই বিশ্বকাপে তিনটি, ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুইটি এবং ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ১টি ম্যাচসেরার ট্রফি ওঠে সাকিবের হাতে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ