
Alamin Islam
Senior Reporter
বড়াইবাড়ি সংঘর্ষ ২০০১: ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যাওয়া যুদ্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতের চারপাশে রয়েছে যেসব প্রতিবেশী দেশ—চীন ও পাকিস্তান, তাদের সঙ্গে ভারতের বহুবার সীমান্ত সংঘর্ষ হয়েছে। কিন্তু প্রতিবেশী বাংলাদেশ, যার চারদিকই প্রায় ভারত দিয়ে ঘেরা, তাদের সঙ্গে এমন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের কথা খুব কমই শোনা যায়। তবে ২০০১ সালে কুড়িগ্রামের বড়াইবাড়িতে ঘটে যায় এমন এক সংঘর্ষ, যা ভারতের দম্ভের জবাব হয়ে আজও স্মরণীয়। সাহসিকতা, দেশপ্রেম ও সীমান্তরক্ষার এক অনন্য দৃষ্টান্ত গড়ে তুলেছিল বাংলাদেশ।
পদুয়া: উত্তেজনার সূচনা
ঘটনা শুরু হয় সিলেটের পদুয়ায়। সেখানে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ বাংলাদেশের ভেতরে একটি ক্যাম্প স্থাপন করে এবং আরেক ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা চালায়। বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) এর আপত্তি উপেক্ষা করে বিএসএফ নির্মাণ কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। তখন বিডিআর নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য তিনটি ক্যাম্প স্থাপন করে। এতে উত্তেজনা বাড়ে। বিএসএফ গুলি চালালে বিডিআর পাল্টা জবাব দেয়। পরিস্থিতি এমন হয় যে প্রায় ৭০ জন বিএসএফ সদস্য আত্মসমর্পণ করে এবং পদুয়া বিডিআরের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
বড়াইবাড়ি: প্রতিশোধের রাত
এই অপমানের প্রতিশোধ নিতে ১৮ এপ্রিল ২০০১ সালের রাতের আঁধারে ভারতের বিএসএফ কুড়িগ্রামের বড়াইবাড়ি সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে পড়ে। ভোরে স্থানীয় কৃষক সাইফুল ইসলাম লাল ধানক্ষেতে অস্ত্রধারী সৈন্যদের দেখতে পান। তাদের কথা-বার্তায় বুঝে যান যে এরা ভারতের সৈন্য। তিনি সঙ্গে সঙ্গে খবর দেন বিডিআর ক্যাম্পে, যেখানে তখন মাত্র ৮ জন সদস্য ছিল। তারা মুহূর্তে প্রস্তুতি নিয়ে প্রতিরোধে নেমে পড়ে।
৪২ ঘণ্টার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ
ভোর ৫টা থেকে শুরু হয় তীব্র গোলাগুলি। চার ঘণ্টা পর্যন্ত ওই ৮ জন সদস্য একাই প্রতিরোধ চালান। পরে আরও দুটি ক্যাম্প থেকে ২০ জন বিডিআর সদস্য এসে যোগ দেন। গ্রামের আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্যরাও বিডিআরের পাশে দাঁড়ান। সম্মিলিত প্রতিরোধে বিএসএফ পিছু হটতে বাধ্য হয়।
শহীদদের রক্তে লেখা সাহসিকতার গল্প
এই সংঘর্ষে ১৬ জন বিএসএফ সদস্য নিহত হয় এবং ৩ জন বিডিআর সদস্য শহীদ হন—নায়েক সুবেদার ওয়াহিদ মিয়া, সিপাহী মাহফুজুর রহমান ও সিপাহী আব্দুল কাদের। বড়াইবাড়ি ছিটমহলের ১৭৯টি ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয় বিএসএফ। কিন্তু তাতেও তারা বাংলাদেশি জনতার প্রতিরোধ ভাঙতে পারেনি। ৪২ ঘণ্টার যুদ্ধ শেষে বিজয় ছিনিয়ে আনেন সীমান্ত রক্ষীরা।
ভারতীয় বাহিনীর আতঙ্ক ও কূটনৈতিক সমাপ্তি
সংঘর্ষের পর ২০ এপ্রিল বিএসএফ-এর মরদেহ এবং আটক সৈন্যদের বাংলাদেশ ফেরত পাঠায়। ২১ এপ্রিল দুই পক্ষ অস্ত্র সংবরণে সম্মত হয়। এই পরাজয় ভারতীয় বাহিনীর মাঝে এক ধরণের আতঙ্ক তৈরি করে। অনেকেই বলেন, এই অভিজ্ঞতাই ভারতকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভবিষ্যতে সরাসরি সীমান্ত যুদ্ধ থেকে বিরত রেখেছে।
অবহেলিত সাহসিকতা
দুঃখজনকভাবে, তৎকালীন সরকার এই সাহসিকতা ও শহীদদের ত্যাগকে যথাযথভাবে সম্মান জানায়নি। বরং এই জাতীয় আত্মত্যাগ আড়ালে পড়ে থাকে ইতিহাসের পাতায়। অথচ বড়াইবাড়ির মতো ঘটনা জাতির তরুণ প্রজন্মের জন্য হতে পারে গর্ব, প্রেরণা ও আত্মমর্যাদার প্রতীক।
বড়াইবাড়ির সীমান্তযুদ্ধ ছিল শুধু একটি সংঘর্ষ নয়, এটি ছিল বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জনগণ ও বাহিনীর সম্মিলিত সাহসিকতার এক অনবদ্য প্রমাণ। শহীদদের রক্তে লেখা সেই গল্প আজও আমাদের মনে করিয়ে দেয়—বাংলাদেশ কখনো মাথা নিচু করে না।
আল-আমিন ইসলাম/
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- চুপ্পুকে সরিয়ে জাতীয় নির্বাচনে আগে নতুন রাষ্ট্রপতি চান পিনাকি
- বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা: প্রথম ওয়ানডেতে লড়াকু টার্গেট দিল শ্রীলঙ্কা
- ৮ গোল: শেষ হলো বাংলাদেশ বনাম বাহারাইনের মধ্যকার ম্যাচের ৯০ মিনিটের খেলা
- নারী এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব পয়েন্ট টেবিল: গ্রুপ সি-তে উড়ছে বাংলাদেশ
- মাহিয়া মাহির মৃত্যু গুজব: সত্য ও মিথ্যার বিশ্লেষণ
- জেতা ম্যাচ হেরে যা বললেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মিরাজ
- ফাফ ডু প্লেসির ডাবল সেঞ্চুরি রেকর্ডে কাঁপছে ক্রিকেট বিশ্ব
- চেলসি বনাম পালমেইরাস কোয়ার্টার-ফাইনাল: ১-০ গোলে প্রথমার্ধ শেষ
- পিএসজি বনাম ইন্টার মায়ামি: ৪-০ গোলে শেষ হলো ম্যাচ
- শান্তর পদত্যাগ, নতুন টেস্ট অধিনায়কত্বে এগিয়ে যিনি
- কফিনবন্দি হয়ে ফিরলেন ফখরুল, চোখের জলে ভেসে গেল শেষ বিদায়
- বাংলাদেশ বনাম মিয়ানমার: আবারও গোল, ৯০ মিনিটের খেলা শেষ
- বাংলাদেশ বনাম মিয়ানমার: লাইভ দেখবেন যেভাবে
- অ-১৮ এশিয়া কাপে জাপানের কাছে ১১-০ গোলে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ
- শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশের একাদশে দুই পরিবর্তন