ঢাকা, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে সস্তা সয়াবিন তেল, তবু ভোক্তার জন্য নেই স্বস্তি

অর্থনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ২৪ ১৯:২৮:১৩
তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে সস্তা সয়াবিন তেল, তবু ভোক্তার জন্য নেই স্বস্তি

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও দেশে তেলের দাম বাড়ার রহস্য

নিজস্ব প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম নেমেছে তলানিতে—এমন দাম গত তিন বছরে দেখা যায়নি। অথচ বাংলাদেশে বোতল খুললেই লিটারে গুনতে হচ্ছে ১৮৯ টাকা। বিশ্বে যখন দরপতনের হাওয়া, তখন দেশের বাজারে যেন চলছে উল্টো স্রোতের পালতোলা। প্রশ্ন উঠছে—এই স্রোতের হাল ধরেছে কে?

বিশ্বব্যাংকের মাসিক প্রতিবেদন বলছে, ২০২২ সালে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১,৬৬৭ ডলার। দুই বছরের ব্যবধানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১,০২২ ডলারে। চলতি বছরের এপ্রিলেও দাম আরও নামতে দেখা গেছে। শুধু সয়াবিন তেল নয়, একই হাল পাম অয়েল ও সয়াবিন বীজের। এমনকি সয়াবিন বীজের দাম তিন বছরে ৪০ শতাংশের বেশি কমেছে।

বাংলাদেশে প্রতিদিন ব্যবহার হয় প্রায় পাঁচ হাজার টন তেল। মাসে দেড় লাখ টন। এত বড় বাজারে দরপতনের সুফল তো পড়ার কথা ছিল গৃহিণীর বাজারের ব্যাগে, প্রবাসীর পাঠানো টাকায় চলা মধ্যবিত্ত পরিবারের রান্নাঘরে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—তেল সস্তা হয়েছে সমুদ্রে, আমাদের দেশে নয়।

কেন এমন বৈপরীত্য?

সয়াবিন তেলের অন্যতম আমদানিকারক টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার তসলিম বলছেন, দাম কমেনি, বরং আবার বাড়ছে। তার দাবি, ডলারের দামে আগুন, ব্যাংকের সহায়তায় জটিলতা, আর সরকারের শুল্ক পুনর্বহালের কারণে তাদের ‘লোকসান’ হচ্ছে। অথচ হিসাব বলছে ভিন্ন কথা।

কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে আমদানিকৃত অপরিশোধিত তেলের শুল্কায়ন মূল্য ছিল কেজিপ্রতি গড়ে ১৩৬ টাকা। পরিবহন, পরিশোধন, শুল্ক, ভ্যাট মিলিয়ে সর্বোচ্চ খরচ পড়ে ১৭৭ টাকা। তবু বিক্রি হচ্ছে ১৮৯ টাকায়। অর্থাৎ লিটারে লাভ অন্তত ১২ টাকা।

এ অবস্থায় কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, এসব ‘লোকসান লোকসান’ খেলার আড়ালে চলছে ভোক্তার পকেট কাটা। ক্যাবের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেই ব্যবসায়ীরা দেন অজুহাতের পাহাড়। কিন্তু বাড়লেই তারা বাতাসের আগে খবর পেয়ে দাম বাড়িয়ে দেন।”

এই বাস্তবতা যেন আমাদের চিরাচরিত বাজারনীতির প্রতিচ্ছবি—উচ্চ দামে আমদানির গল্প যতটা সত্য, কম দামে বিক্রির গল্প ততটাই কল্পনা। সয়াবিন বীজে যেখানে পাওয়া যায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ভোজ্যতেল, সেখানে সেই বীজের দামও রেকর্ড পরিমাণ কমে এসেছে। কিন্তু সেই কমতির প্রতিফলন নেই দোকানের তাক বা বিজ্ঞাপনের প্যাকেটেথাকা দামে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি ভাঙতে হলে দরকার শক্তিশালী বাজার তদারকি, স্বচ্ছ শুল্কনীতি এবং ডলার-নির্ভরতা কমানোর দীর্ঘমেয়াদি কৌশল। না হলে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম যতই নামুক, দেশের বাজারে ভোক্তার জন্য থাকবে না কোনো স্বস্তির নিঃশ্বাস।

শেষ কথায় বলা যায়, তেলের দাম পড়ে গেছে পানির মতো, কিন্তু ভোক্তার গায়ে লাগছে আগুনের আঁচ। বাজারের এই বৈপরীত্য ভাঙতে হলে কেবল ব্যবসায়ীর কথা নয়, শুনতে হবে ভোক্তার কণ্ঠও। কারণ সস্তা পৃথিবীর সুফল কেবল কিছু গুদামে আটকে থাকলে তা তো আর বাজারের নাম হয় না।

FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর)

১. আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কেন কমছে?

২০২২ সাল থেকে বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের উৎপাদন বেড়েছে এবং পাম অয়েলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা তীব্র হওয়ায় দাম নিচে নেমে এসেছে।

২. সত্ত্বেও দেশে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার কারণ কী?

দেশে ডলার দুর্বল হওয়া, শুল্ক পুনর্বহাল, ব্যাংক সেক্টরের অস্থিরতা এবং আমদানির অতিরিক্ত খরচের কারণে দাম বাড়ছে।

৩. ব্যবসায়ীরা কি তেলের দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করছে?

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, লিটারে প্রায় ১২ টাকা লাভ করছে ব্যবসায়ীরা।

৪. ভোক্তারা কীভাবে সস্তা তেলের সুবিধা পেতে পারে?

সরকারের উচিত শুল্ক ও কর কমিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ