ঢাকা, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

তেলের দাম বাড়ছে, ব্রেন্ট ক্রুড ৭০ ডলার ছাড়াল, বাজারে উত্তেজনা

অর্থনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ১৩ ১১:৫৫:০১
তেলের দাম বাড়ছে, ব্রেন্ট ক্রুড ৭০ ডলার ছাড়াল, বাজারে উত্তেজনা

চাহিদা বেড়ে সরবরাহে টান, বিশেষজ্ঞরা বলছেন—মূল্যবৃদ্ধি চলতেই পারে

নিজস্ব প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও ঊর্ধ্বমুখী হলো জ্বালানি তেলের দাম। অপরিশোধিত তেলের সরবরাহ সীমিত হয়ে পড়ায় এবং গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে চাহিদা বাড়তে থাকায় বিশ্ববাজারে তৈরি হয়েছে নতুন উত্তেজনা। এতে ব্যারেলপ্রতি ব্রেন্ট ক্রুডের দাম বেড়ে ৭০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

শুক্রবার (১১ জুলাই) বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি বেড়েছে ১.৭২ ডলার বা ২.৫ শতাংশ। নতুন দামে এটি দাঁড়িয়েছে ৭০.৩৬ ডলার। একই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) তেলের দামও বেড়েছে ১.৮৮ ডলার বা ২.৮ শতাংশ, যা এখন ৬৮.৪৫ ডলার প্রতি ব্যারেল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চাহিদা ও সরবরাহের বর্তমান অসমতা থেকেই মূলত এই মূল্যবৃদ্ধি। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) জানিয়েছে, বাজারে যে পরিমাণ চাহিদা অনুমান করা হচ্ছিল, বাস্তবে তা আরও বেশি। গ্রীষ্মের ভ্রমণ মৌসুম, বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেলনির্ভরতা এবং পরিশোধনাগারগুলোর সম্পূর্ণ সক্ষমতায় চলার কারণে তেলের ব্যবহার বাড়ছে।

প্রাইস ফিউচারস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক ফিল ফ্লিন বলেন, “তেলের বাজার এখন বুঝতে পারছে, সরবরাহের সীমাবদ্ধতা বাস্তব এবং তাৎক্ষণিক সমাধান নেই। ফলে মূল্যবৃদ্ধি স্বাভাবিক।”

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে টানা ১১ সপ্তাহ ধরে তেল ও গ্যাস রিগের সংখ্যা কমেছে। সর্বশেষ ২০২০ সালের জুলাই মাসে এমন পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল, যখন করোনা মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির চাহিদা মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়।

বিশ্লেষণ বলছে, ওপেক প্লাস চাইলেই তেলের সরবরাহ বাড়াতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত সরবরাহের ঝুঁকি থেকে যায়। আপাতত রাশিয়া ও সৌদি আরব সাময়িকভাবে উৎপাদন বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। সৌদি আরব আগস্ট মাসে চীনে ৫১ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করবে, যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার নভাক জানিয়েছেন, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে অতিরিক্ত উৎপাদনের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এদিকে, ইউরোপীয় কমিশন রাশিয়ার ওপর নতুন করে তেল-সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ তৈরির প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

তবে দীর্ঘমেয়াদে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। ওপেক প্লাসের সদ্যপ্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড অয়েল আউটলুক ২০২৫’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৬ থেকে ২০২৯ সালের মধ্যে বৈশ্বিক তেলের চাহিদা কমে যেতে পারে, বিশেষ করে চীনের অর্থনৈতিক ধীরগতির কারণে।

সবমিলিয়ে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জ্বালানি তেলের দামে চলমান ঊর্ধ্বগতি আগামী কয়েক সপ্তাহ বা মাসে স্থায়ী হতে পারে। চাহিদা যদি এমনভাবে বাড়তে থাকে এবং সরবরাহ সীমিত থাকে, তবে দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জামিরুল ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ