ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিচারপতি শামসুল হুদা মানিক আর নেই

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ২৬ ২২:৪৬:৪২
বিচারপতি শামসুল হুদা মানিক আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা, রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ নাম—বিচারপতি শামসুল হুদা মানিক। জীবনভর যিনি ন্যায়, আদর্শ ও সংগ্রামের পতাকা বহন করেছেন, সেই মানুষটি চলে গেলেন না–ফেরার দেশে। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)

রবিবার রাত সাড়ে ১১টায় ঢাকার ইব্রাহীম মেমোরিয়াল কার্ডিয়াক হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ধীরে ধীরে থেমে যায় এই প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিত্বের হৃদস্পন্দন।

সোমবার জোহরের নামাজের পর গোপালগঞ্জ কোর্ট মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিকেলে নিজ গ্রাম টুঙ্গিপাড়ার গিমাডাঙ্গা রাবেয়া খাতুন হাফেজিয়া মাদ্রাসা মাঠে দ্বিতীয় জানাজার পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে। রাষ্ট্রীয় সালাম ও ভালোবাসায় বিদায় জানানো হয় এক সময়ের সংগ্রামী সংগঠক, ত্যাগী রাজনীতিক ও ন্যায়ের প্রতীক বিচারপতিকে।

শামসুল হুদা মানিক ছিলেন শুধুই একজন বিচারপতি নন, ছিলেন এক বর্ণাঢ্য ইতিহাসের যাত্রী। ১৯৭১ সালে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন একজন সংগঠক হিসেবে। তার নেতৃত্বে গোপালগঞ্জ ও আশপাশের অঞ্চলে সংগঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি ও প্রতিরোধ। স্বাধীনতার পরও থেমে থাকেননি তিনি—আদর্শ ও উন্নয়নের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন সক্রিয়ভাবে। আশির দশকে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন, পরে হন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে বিচারপতি মানিককে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তার ন্যায়বিচারের জন্য পরিচিতি ও সততার কারণে পরে তিনি পদোন্নতি পান আপিল বিভাগে। অবসর গ্রহণের পরও দায়িত্ব থেকে সরে যাননি; শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সুনামের সঙ্গে।

তার মৃত্যুতে দেশের বিচারাঙ্গন হারাল এক অভিভাবককে, রাজনীতি হারাল এক আদর্শবান পথপ্রদর্শককে, আর জাতি হারাল এক মুক্তিযুদ্ধের সংগঠককে।

যাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় ছিল কর্মে, আদর্শে ও নিষ্ঠায় ভরপুর—তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করছে জাতি। বিচারপতি শামসুল হুদা মানিকের মতো মানুষ আসেন কেবল ইতিহাস গড়তে, পথ দেখাতে। তিনি চলে গেলেন, কিন্তু রেখে গেলেন অসংখ্য প্রেরণার বাতিঘর।

শ্রদ্ধাঞ্জলি, বিচারপতি মানিক।

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ