শেখ হাসিনার পদত্যাগ ঘিরে অজানা তথ্য ফাঁস

নিজস্ব প্রতিবেদক: চানখাঁরপুল গণহত্যা মামলায় প্রসিকিউশনের চার্জশিটে উঠে এলো ৪-৫ আগস্টের গোপন বৈঠক ও সেনা-পুলিশ দ্বন্দ্বের গল্প
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা একটি মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও ২০২৪ সালের রাজনৈতিক ভূমিকম্প ঘিরে উঠে এসেছে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই নথিতে বলা হয়েছে, চানখাঁরপুল গণহত্যার পেছনে ছিল তৎকালীন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশ—যা আন্দোলন দমন করতে রক্তক্ষয়ী পথ বেছে নেওয়ার প্রমাণ দেয়।
চার্জশিটে বিস্তারিতভাবে উঠে এসেছে ২০২৪ সালের ৪ ও ৫ আগস্টের সেই নাটকীয় ২৪ ঘণ্টার রাজনৈতিক কাহিনি—যা বদলে দেয় বাংলাদেশের ইতিহাসের মোড়।
‘আমাকে গুলি করে কবর দাও’: প্রধানমন্ত্রীর গোপন বৈঠকের অজানা কথা
প্রসিকিউশনের দাখিল করা নথি অনুসারে, ৪ আগস্ট রাতে গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে একটি উচ্চ পর্যায়ের গোপন বৈঠকে সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা আন্দোলন দমন করতে চেয়েছিলেন সরাসরি গুলি চালিয়ে। কিন্তু সামরিক কর্মকর্তারা পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে তাকে পদত্যাগের পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রী তখন ক্ষোভে বলে ওঠেন, ‘আমাকে গুলি করে মেরে ফেলো, গণভবনে কবর দিয়ে দাও।’ উপস্থিত কর্মকর্তারা হতবাক হন তার এমন বক্তব্যে।
গ্যাং অব ফোর: সিদ্ধান্তের আড়ালে চার পরামর্শদাতা
নথিতে অভিযোগ করা হয়, শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থানে যান তথাকথিত ‘গ্যাং অব ফোর’—ওবায়দুল কাদের, আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পরামর্শে। তারাই শেখ হাসিনাকে আন্দোলন দমন করতে উৎসাহ দেন এবং সেনা-পুলিশ যৌথ অভিযান চালানোর পরিকল্পনা নেন।
সামরিক বৈঠকে বিভাজন: গুলি চালাতে বলায় ক্ষোভ
চার্জশিট অনুযায়ী, ৫ আগস্ট সকালে একটি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিকী প্রস্তাব দেন, হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালিয়ে আন্দোলন দমন করা হোক। এতে একজন সামরিক কর্মকর্তা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘এই লোকটি আপনাকে ডুবিয়েছে, আরও ডুবাবে।’
এই মুহূর্তে হঠাৎ করে এক অপরিচিত ব্যক্তির প্রবেশে বৈঠক থেমে যায়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সেনাবাহিনী শেখ হাসিনার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে—প্রভাব ফেলে তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ওপর।
শেখ রেহানার পা ধরেও মন গলেনি
নথি অনুসারে, শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা নিজ হাতে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগে অনুরোধ করেন। এমনকি তার পা পর্যন্ত ধরেন। কিন্তু হাসিনা তাতেও রাজি হননি। শেষপর্যন্ত ছেলে জয়ের চাপেই তিনি পদত্যাগে সম্মত হন।
বিদায়ী ভাষণের অনুমতি মেলেনি, ভারতে চলে যান হাসিনা
শেখ হাসিনা পদত্যাগের আগে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে একটি বিদায়ী ভাষণ প্রচার করতে চেয়েছিলেন। তবে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা তাতে অনুমতি দেননি। ৫ আগস্ট দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র জমা দেন এবং পরে ভারতে চলে যান।
নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের গুলিতে ঝরল স্কুলছাত্রদের প্রাণ
নথিতে সবচেয়ে ভয়ংকর তথ্যটি উঠে এসেছে চানখাঁরপুল গণহত্যা নিয়ে। বলা হয়, শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এতে প্রাণ হারান স্কুলছাত্র শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিয়ার।
পলাতক পুলিশ কমিশনার ও ঘৃণ্য পরিকল্পনা
এ মামলার অন্যতম অভিযুক্ত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী। অভিযোগে বলা হয়, তিনি ১ থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিক্ষোভ দমন করতে একাধিকবার গুলির আদেশ দেন। ৫ আগস্ট সকাল ৬টায় শাহবাগ থানায় উপস্থিত হয়ে নির্দেশ দেন যেন কেউ শহীদ মিনারের দিকে না যেতে পারে—এবং পুলিশ সরাসরি গুলি চালায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার নেপথ্যে কারা?
নথি অনুসারে, ১৪ জুলাই রাতেও শেখ হাসিনার নির্দেশে যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। হামলা সফল করতে পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান ‘সহযোগিতা’ করেন।
আন্তর্জাতিক আদালতে ‘অপরাধী’ প্রমাণে যথেষ্ট নথি: প্রসিকিউশন
প্রসিকিউশনের ভাষ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এমন তদন্ত ও প্রমাণ রয়েছে, যা বিশ্বের যে কোনো আদালতে উপস্থাপন করলে তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা সম্ভব।
এই মামলার রায় কী হয়—তা সময়ই বলবে। তবে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা এ নথি যেন খুলে দিল এক গভীর ও অন্ধকার অধ্যায়ের পর্দা।
FAQs (প্রশ্নোত্তর বিভাগ)
প্রশ্ন ১: শেখ হাসিনার পদত্যাগ কীভাবে ঘটেছিল?
উত্তর: ট্রাইব্যুনালের নথি অনুযায়ী, সামরিক কর্মকর্তাদের চাপে এবং পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের হস্তক্ষেপে শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট পদত্যাগে বাধ্য হন।
প্রশ্ন ২: চানখাঁরপুল গণহত্যায় কারা জড়িত ছিল?
উত্তর: অভিযোগপত্রে বলা হয়, শেখ হাসিনার নির্দেশে নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায়, যাতে প্রাণ হারায় ৬ কিশোর ছাত্র।
প্রশ্ন ৩: কী কারণে সেনা কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন?
উত্তর: হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ হয়ে সামরিক কর্মকর্তারা শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের পরামর্শ দেন।
প্রশ্ন ৪: শেখ রেহানা পদত্যাগে কী ভূমিকা রাখেন?
উত্তর: তিনি নিজের বোন শেখ হাসিনার পা ধরে অনুরোধ করেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয়ই ছিলেন বড় চাপের উৎস।
মো: রাজিব আলী/
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- মাত্র ২০০ টাকায় স্টারলিংক! কীভাবে সম্ভব হলো জানলে চমকে যাবেন
- আজ এক ভরি ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ১,১১,৮১৬ টাকা!
- শেয়ারবাজারে চাঙ্গাভাব ফেরাতে বড় উদ্যোগ অর্থ মন্ত্রণালয়ের
- ভিন্সের উইকেট নেওয়ার পরও সাকিবকে বোলিংয়ে না আনায় ক্ষোভে সমর্থকরা
- পুঁজিবাজারে বড় সাত সিদ্ধান্ত: ডেরিভেটিভ লেনদেনের যুগে প্রবেশ, কমল বিও হিসাব ফি
- ছক্কার বদলে এক রান, আম্পায়ারকে একহাত নিলেন প্রীতি
- আইপিএল শেষে দুঃসংবাদ দিলেন মুস্তাফিজ
- রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন ড. ইউনূস
- আইপিএলে সাকিবকে ছাড়িয়ে শীর্ষে মুস্তাফিজ, স্টার্কও পিছনে
- মহার্ঘ ভাতার পাশাপাশি চাকরিজীবীদের দু:সংবাদ দিল অর্থ উপদেষ্টা
- ডিএসই সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজের নিবন্ধন বাতিল করল বিএসইসি
- শাহীনের আগুনে ভস্ম ইসলামাবাদ, ফাইনালে লাহোর
- ম্যাচ হেরে আইপিএল থেকে বিদায়, ফাফ ডু প্লেসিসের কড়া মন্তব্য
- সৌদি আরব ও বাংলাদেশে ঈদুল আজহার সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা
- শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১৪টি কোম্পানি লাইসেন্স বাতিলেরউদ্যোগ