ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫, ৯ শ্রাবণ ১৪৩২

শেয়ারবাজারে আস্থা সংকটে ৪৫ হাজার বিও অ্যাকাউন্ট শেয়ারশূন্য

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ১৩ ১২:১১:২৮
শেয়ারবাজারে আস্থা সংকটে ৪৫ হাজার বিও অ্যাকাউন্ট শেয়ারশূন্য

বিনিয়োগে হতাশা, দরপতনের ধারা ও রিটার্ন না পাওয়ায় কমছে শেয়ারধারী অ্যাকাউন্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজারে চলমান নিম্নমুখী প্রবণতা বিনিয়োগকারীদের আস্থার উপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। একের পর এক কোম্পানির দরপতন, কাঙ্ক্ষিত রিটার্ন না পাওয়া এবং বাজারের অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির প্রবণতা বাড়িয়ে তুলেছে। এর প্রেক্ষাপটে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৪৫ হাজারের বেশি বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) অ্যাকাউন্ট সম্পূর্ণ শেয়ারশূন্য হয়ে পড়েছে।

সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত শেয়ারশূন্য বিও হিসাব ছিল ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৪২৭টি। ৪ জুন ২০২৫-এ এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৯৬টিতে। অর্থাৎ, এই পাঁচ মাসে শেয়ারশূন্য অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ৪৫ হাজার ৩৬৯টি।

শেয়ারধারী অ্যাকাউন্টও কমেছে লক্ষণীয়ভাবে

শুধু শেয়ারশূন্য অ্যাকাউন্ট নয়, উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে শেয়ারধারী বিও হিসাবের সংখ্যাও। ১ জানুয়ারিতে যেখানকার সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৯টি, তা ৪ জুনে এসে দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৩১ হাজার ১৬৮টিতে। এই সময়ের মধ্যে মোট ৪০ হাজার ৩৮১টি শেয়ারধারী অ্যাকাউন্ট হ্রাস পেয়েছে, যা বাজার থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার স্পষ্ট ইঙ্গিত।

মোট বিও অ্যাকাউন্ট ও লিঙ্গভিত্তিক পরিসংখ্যান

যদিও শেয়ারধারী অ্যাকাউন্ট কমেছে, সামগ্রিকভাবে বিও হিসাবের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। ১ জানুয়ারিতে মোট বিও হিসাব ছিল ১৬ লাখ ৬৫ হাজার ১৩৪টি, যা ৪ জুন শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৬৭ হাজার ৮৯৭টিতে। এই সময় নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ২ হাজার ৭৬৩টি।

লিঙ্গভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, পুরুষ বিও হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে ৬ হাজার ৫০৭টি এবং নারী হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে ২৫৬টি।

স্থানীয় ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের তথ্য

স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের অ্যাকাউন্ট ৭ হাজার ১০৮টি বেড়ে ১৬ লাখ ২৫ হাজার ৫৫১টিতে দাঁড়িয়েছে। তবে প্রবাসীদের বিও অ্যাকাউন্ট কমেছে ৩০৫টি, বর্তমানে যা ৪৬ হাজার ৩৮৬টি।

বাজার পরিস্থিতি ও সূচকের অবনতি

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৫০৯ পয়েন্ট কমেছে। বছরের শুরুতে সূচক ছিল ৫,২১৮ পয়েন্ট, ৪ জুনে এসে তা দাঁড়ায় ৪,৭০৯ পয়েন্টে।

গত ছয় মাসে দৈনিক লেনদেনের গড়ও ছিল উল্লেখযোগ্যভাবে কম। সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ৬০৭ কোটি টাকার, আর সর্বনিম্ন ছিল মাত্র ২২৪ কোটি টাকা।

বাজার বিশ্লেষকদের মত

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারের দীর্ঘমেয়াদি দুর্বলতা, একাধিক কোম্পানির নাজুক আর্থিক পারফরম্যান্স এবং বিনিয়োগে প্রত্যাশিত রিটার্ন না পাওয়াই এই নেতিবাচক প্রবণতার মূল কারণ। এর ফলে নতুন বিনিয়োগকারীরা পিছিয়ে যাচ্ছে এবং পুরনো বিনিয়োগকারীরাও বাজার ছাড়ছেন।

বাজেটের প্রণোদনা ও ভবিষ্যতের প্রত্যাশা

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সরকার শেয়ারবাজার চাঙ্গা করতে কর্পোরেট করের ব্যবধান বাড়ানো, সিকিউরিটিজ ট্রেডিংয়ে অগ্রিম আয়কর হ্রাস এবং মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর কর হার কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই প্রণোদনাগুলো যদি দ্রুত ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হয়, তবে বাজারে তারল্য বাড়বে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে পারে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ