ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্তের পর প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পোস্ট ঘিরে বিতর্ক

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ২২ ১৮:৫০:৩০
মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্তের পর প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পোস্ট ঘিরে বিতর্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর উত্তরা এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর পরিস্থিতি ছিল চরম উদ্বেগজনক। হতাহত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। এমন এক সংকটময় মুহূর্তে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া একটি পোস্ট নতুন করে বিতর্কের জন্ম দেয়।

আজ দুপুর ২টার কিছু পর প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে জানানো হয়, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য যারা সাহায্য করতে চান, তারা “প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল”-এ অর্থ জমা দিতে পারেন। পোস্টে ব্যাংক হিসাব নম্বর ও শাখার নাম-ঠিকানাও উল্লেখ করা হয়।

ফেসবুক পোস্টে যা লেখা ছিল:

“মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য যারা অর্থ সাহায্য করতে চান, তারা উপরোক্ত ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলের উল্লেখিত নম্বরে তা জমা দিতে পারেন।

হিসাবের নাম: প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল

হিসাব নম্বর: ০১০৭৩৩০০৪০৯৩

ব্যাংক: সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় করপোরেট শাখা।”

এই পোস্টটি একই সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও শেয়ার করা হয়, যার প্রেরক ছিলেন প্রেস উইংয়ের সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ।

কেন শুরু হলো বিতর্ক?

দুর্ঘটনার পরে ত্রাণ তহবিলে অর্থ চাওয়ার এই পোস্টকে ঘিরেই সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবহারকারীরা বিষয়টিকে সরকারের অদক্ষতা এবং দায়বদ্ধতার অভাব বলে মন্তব্য করেন।

একজন ব্যবহারকারী, খাদিজাতুল কোবরা, লেখেন—

“আমি এত দিনে বুঝতে পেরেছি, বন্যার সময় টাকা তুলব না বলাতে মানুষ কেন জিনিসটা মানতে পারে নাই। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা টাকা চাচ্ছে বাচ্চাদের চিকিৎসার জন্য! মাশা আল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! আমার আসলেই আর কিছু বলার নাই।”

আরেকজন কটাক্ষ করে লেখেন—

“মানে একদিন না যাইতেই সরকারের ক্রাউড ফান্ডিংয়ে যাওয়া উচিত—এই বুদ্ধিটা কোন উজবুক সরকারকে দিল?”

পোস্ট সরিয়ে নেওয়া, কিন্তু প্রশ্ন থেকেই গেল

সমালোচনার তীব্রতা বাড়তেই কিছু সময় পর পোস্টটি সরিয়ে ফেলা হয় প্রধান উপদেষ্টার পেজ থেকে। তবে কেন পোস্টটি দেওয়া হয়েছিল, আর কেন সেটি সরানো হলো—এ নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

এদিকে, পোস্টটি ফেসবুক থেকে মুছে ফেলা হলেও প্রেস উইংয়ের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এখনও সেটি দৃশ্যমান রয়েছে, যা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। কেউ কেউ বলছেন, “সরকারের সংকট মোকাবেলায় প্রস্তুতি কি এই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সাধারণ মানুষের কাছেই হাত পাততে হয়?”

ঘটনার প্রেক্ষাপট

উল্লেখ্য, উত্তরার এই দুর্ঘটনায় বিমান বিধ্বস্ত হয়ে আশপাশের ভবন, গাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন বলে জানা যায়। উদ্ধারকাজে অংশ নেয় ফায়ার সার্ভিস, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিমানবাহিনীর বিশেষ দল।

এ ঘটনায় জনসাধারণের প্রত্যাশা ছিল—সরকার দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, প্রয়োজনীয় সহায়তা সরবরাহ করবে। কিন্তু এর পরিবর্তে ফেসবুক পোস্টে অর্থ চাওয়ার আহ্বান মানুষকে বিস্মিত করেছে এবং সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ