ঢাকা, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২

গণমাধ্যম নিয়ে তারেক-সারজিসের মন্তব্যে তোলপাড় সামাজিকমাধ্যম

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ১৬ ১২:৫৫:১৬
গণমাধ্যম নিয়ে তারেক-সারজিসের মন্তব্যে তোলপাড় সামাজিকমাধ্যম

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও অপব্যবহার ঘিরে রাজনৈতিক নেতাদের স্পষ্ট অবস্থান, আলোচনায় সরব নেটিজেনরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সংকট এবং তার অপব্যবহার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক (উত্তরাঞ্চল) মো. সারজিস আলমের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে।

১৬ জুন ‘সংবাদপত্র শিল্পের কালো দিবস’ উপলক্ষে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন তারেক রহমান। তিনি লিখেন, “১৯৭৫ সালের এই দিনে তৎকালীন সরকার সব রাজনৈতিক দল বাতিল করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করে, এবং সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করে জাতিকে নির্বাক করে দেয়।” তিনি জানান, এই সিদ্ধান্ত শুধু সাংবাদিকদের জীবনে নয়, গণতন্ত্রের ভিতেও ভয়াবহ ধাক্কা দেয়।

তারেক রহমানের বক্তব্যে উঠে আসে স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনা—গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর আঘাতের কথা। তিনি বলেন, “বাকস্বাধীনতা হরণ মানেই চিন্তা ও বিবেককে বন্দি করা। শেখ মুজিবের মতো তার কন্যা শেখ হাসিনাও একদলীয় ব্যবস্থার পথে হাঁটছেন, নানা কালাকানুন করে সাংবাদিকদের দমন করছেন।”

এই স্ট্যাটাসে সহমত পোষণ করে মন্তব্য করেন সারজিস আলম। তবে তিনি যুক্ত করেন আরও কিছু বাস্তবধর্মী পর্যবেক্ষণ। তার মন্তব্যে উঠে আসে গণমাধ্যমের একটি বড় অংশের পক্ষপাতিত্ব, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ পরিবেশন ও প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর প্রসঙ্গ।

সারজিস আলম লিখেন, “আপনার বক্তব্যের সঙ্গে একমত। কিন্তু কিছু প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া টিআরপি বা রাজনৈতিক স্বার্থে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছে। কেউ কেউ ভিত্তিহীন সংবাদ দিয়ে পরে তা মুছে ফেলেছে, কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার, তা হয়ে গেছে।”

তিনি অভিযোগ করেন, “অনেক মিডিয়া হাউজ রাজনৈতিক অবস্থান অনুযায়ী শিরোনামে পার্থক্য করে। কিছু সাংবাদিক অতীতে আওয়ামী লীগকে প্রকাশ্যে সেবা দিয়েছেন, এখনো তারা সেই পক্ষপাতদুষ্ট মানসিকতা থেকে বের হতে পারেননি।”

সারজিস আরও বলেন, “সংবাদপত্রের স্বাধীনতা যেমন জরুরি, তেমনি স্বাধীনতার নামে অপব্যবহার বন্ধে তদন্ত ও আইনি পদক্ষেপ প্রয়োজন।”

এই দুই নেতার মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নানা প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। কেউ কেউ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে সরকারের দমননীতির সমালোচনা করেন, কেউ আবার মিডিয়ার দায়িত্বহীন আচরণের বিরুদ্ধে সরব হন।

নেটিজেনদের অনেকেই বলেন, “স্বাধীনতা আর স্বাধীনতার অপব্যবহারের মাঝখানে যে সূক্ষ্ম রেখা আছে, সেটি সাংবাদিকদের আগে বুঝতে হবে।” কেউ কেউ মনে করেন, “গণতন্ত্র রক্ষায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অপরিহার্য, তবে সেই স্বাধীনতা যেন বিশ্বাসযোগ্যতার নামে ভণ্ডামি না হয়।”

বিশ্লেষকদের মতে, এই আলোচনা গণমাধ্যম ও গণতন্ত্রের বর্তমান অবস্থাকে আরও স্বচ্ছভাবে বিশ্লেষণের সুযোগ তৈরি করেছে। একজন রাজনৈতিক নেতার পর্যবেক্ষণ ও আরেকজনের বাস্তবচিত্র তুলে ধরার মধ্য দিয়ে আবারও সামনে এসেছে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের আলো-ছায়ার গল্প।

তারেক রহমান ও সারজিস আলমের বক্তব্য কেবল মতপ্রকাশ নয়—এটি যেন এক প্রতিধ্বনি, যা শুনতে পেয়েছে দেশের সচেতন জনগণ। এখন প্রশ্ন একটাই—গণমাধ্যম কি সত্যিই স্বাধীন, নাকি কোনো অদৃশ্য শক্তির ইশারায় পরিচালিত একটি ‘দৃশ্যত স্বাধীন’ প্রতিষ্ঠান? সময় হয়তো উত্তর দেবে, তবে আলোচনার এই ধারা যে গুরুত্বপূর্ণ, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ