ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

বৈঠকে নেই জামায়াত, বিএনপির ঘোষণায় ‘অবজ্ঞা’র অভিযোগ

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ১৭ ১৪:৪৫:৫৯
বৈঠকে নেই জামায়াত, বিএনপির ঘোষণায় ‘অবজ্ঞা’র অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াসে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের যে আলোচনা চলছে, সেখানে আজকের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে দেখা যায়নি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদের। যেখানে বিএনপিসহ দেশের বেশিরভাগ দলই উপস্থিত থেকে নিজেদের মতামত উপস্থাপন করেছে, সেখানে জামায়াতের এই অনুপস্থিতি নতুন করে রাজনৈতিক জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়েছে।

মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে বেলা পৌনে ১২টার দিকে বৈঠক শুরু হয়। অথচ শুরু থেকেই সেখানে নেই জামায়াত। দলের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের স্পষ্ট ভাষায় জানান, তারা ইচ্ছা করেই আলোচনা থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। কারণ, সম্প্রতি লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে এক বৈঠকের পর যে যৌথ ঘোষণা দেওয়া হয়, সেখানে জামায়াতকে এক প্রকার ‘উপেক্ষা’ করা হয়েছে বলে মনে করছে দলটি।

জামায়াতের ভাষায়, এই ‘ইগনোর’ করার আচরণ ছিল অনভিপ্রেত ও অশোভন। তাই রাজনৈতিক সৌজন্য ও সম্মানের জায়গা থেকেই তারা আজকের বৈঠকে অংশ নেয়নি—এ যেন এক ধরনের মৌন প্রতিবাদ।

কমিশনের পক্ষ থেকে যদিও বৈঠক শুরুর দুই ঘণ্টা পর জামায়াতকে অংশ নিতে অনুরোধ জানানো হয়, কিন্তু ততক্ষণে দলটির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। আলোচনা টেবিলে তাদের অনুপস্থিতি যেন কণ্ঠস্বরহীন এক প্রতিবাদের চিহ্ন হয়ে রয়ে যায়।

এর আগে ঈদের আগের বৈঠকে জামায়াত সরব উপস্থিতি দেখিয়েছিল। তখন ডা. তাহেরের নেতৃত্বে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আজাদ অংশ নেন আলোচনায়। সেই আলোচনায়ও তারা দলীয় অবস্থান সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেন।

আজকের বৈঠকে জামায়াত ছাড়া অন্যান্য দল যেমন—বিএনপি, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, নাগরিক ঐক্য, গণ অধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন প্রমুখ উপস্থিত থেকে আলোচনা করেন। সেখানে আলোচনায় উঠে আসে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে সভাপতির নিরপেক্ষ মনোনয়ন, নারী প্রতিনিধিত্বের প্রসারসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পাশাপাশি, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের সম্ভাবনা, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের স্বচ্ছতা, ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বিষয়েও আলোচনা হয়।

কমিশনের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সদস্যবৃন্দ—আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামানসহ আরও অনেকে।

এই বৈঠক ছিল ১৭, ১৮ ও ১৯ জুন তিন দিনের ধারাবাহিক আলোচনার প্রথম দিন। তবে শুরুতেই জামায়াতের এমন অনুপস্থিতি ঐকমত্যের পথে একটি বড় ধাক্কা বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এখন দেখার বিষয়, জামায়াত ভবিষ্যৎ বৈঠকে অংশ নেয় কি না—নাকি এই অনুপস্থিতিই হয়ে ওঠে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের পথে স্থায়ী এক ফাটলের ইঙ্গিত। সময়ই বলে দেবে, জাতীয় ঐকমত্য কি সত্যিকার অর্থেই সবার অংশগ্রহণে গঠিত হবে, নাকি কেউ কেউ সেখানে থেকে যাবে প্রান্তিক ও উপেক্ষিত।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ