ঢাকা, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

সরকারি চাকরিজীবীদের ৫০% মহার্ঘ ভাতা দাবি, আন্দোলনে উত্তাল সচিবালয়

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ১৮ ১৯:০৯:৩১
সরকারি চাকরিজীবীদের ৫০% মহার্ঘ ভাতা দাবি, আন্দোলনে উত্তাল সচিবালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার সচিবালয়ে আজ যেন উত্তাপ ছড়িয়েছে ভাতার দাবিতে। সরকারের হাজারো দপ্তরের প্রাণকেন্দ্র যখন বাজেট-পরবর্তী বিশ্লেষণে ব্যস্ত, তখনই ফুঁসে উঠলেন সরকারি চাকরিজীবীরা—তাদের একটাই সুর, ‘চাই ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা, আর কোনো প্রতিশ্রুতি নয়।’

আজ বুধবার (১৮ জুন) সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের নিচে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জোরালো কণ্ঠে এই দাবি জানান।

তিনি বলেন,

‘আলোচনার নামে আমাদের আস্থা ভাঙা হয়েছে, বিশ্বাস ভেঙেছে সরকারের উচ্চপদস্থরা। এবার আর ঘরে ফেরার সময় নয়, এবার চাই ন্যায্য অধিকার।’

নতুন কর্মসূচির ঘোষণা, নতুন রূপরেখা

নুরুল ইসলাম সমাবেশে আরও জানান, আন্দোলন আর শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ থাকবে না—সারা দেশের আট বিভাগেই সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গেছে।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সচিবালয়ের ৪ নম্বর ভবনের সামনে নতুন করে সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলনরত কর্মচারীরা একটি মিছিল বের করেন, যা সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের কয়েকটি ফ্লোর প্রদক্ষিণ করে ভবনের নিচে এসে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তারা সরকারকে স্পষ্ট বার্তা দেন—

১৮ জুনের মধ্যে দাবি না মানলে ২২ জুন থেকে লাগাতার ও কঠোর কর্মসূচি শুরু হবে। আর সেই কর্মসূচিতে যুক্ত করা হবে দেশের সব সরকারি চাকরিজীবীকে।

‘বিশেষ প্রণোদনা’ নয়, চাই ‘মহার্ঘ ভাতা’

সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তৃতায় বেতন কাঠামো সংস্কার বা মহার্ঘ ভাতার কথা বলেননি।

বরং তিনি বলেন,

‘২০১৫ সালের পর থেকে কোনো নতুন বেতন কাঠামো হয়নি, তাই সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাব করছি।’

কিন্তু কর্মচারীদের ভাষ্য, বিশেষ সুবিধার কথা বলে সরকার মূল দাবি থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা করছে।তাদের দাবি একটাই—৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দিতে হবে অবিলম্বে।

আস্থাহীনতার ছায়ায় প্রশাসন

আন্দোলনকারীদের মতে, শুধু দাবিই নয়, সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কেও প্রশ্ন উঠেছে।

নুরুল ইসলাম বলেন,

‘আমরা যারা মাঠে পরিশ্রম করি, আমাদের প্রাপ্য নিয়ে প্রতারণা চলছে। আর যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে কাজ করেন, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’

সরকারি বেতন কাঠামোতে দীর্ঘদিন ধরে কোনো বড় পরিবর্তন আসেনি। নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্য আর জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চাকরিজীবীরা। এমন বাস্তবতায় তাদের দাবি এখন আর শুধুই দাবি নয়—তা রূপ নিচ্ছে আন্দোলনের ঝড়ে।

সামনে কী?

প্রশাসনের ভেতরে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের এই ঢেউ আগামী দিনে কতটা দুর্ভাবনার জন্ম দেয়, এখন সেই প্রশ্নই সামনে। সরকার যদি সময়মতো দাবি না মেনে নেয়, তবে যে আন্দোলনের রূপরেখা আজ সচিবালয়ে আঁকা হলো, তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় নেবে না।

আর তখন শুধু মহার্ঘ ভাতা নয়—আস্থা আর বিশ্বাসের প্রশ্নে চাপে পড়তে পারে পুরো প্রশাসনিক কাঠামো।

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ