ঢাকা, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

তিন সেঞ্চুরি করেও সর্বনিম্ন ইনিংসের রেকর্ড গড়ল ভারত

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ২২ ১০:৫৮:১৮
তিন সেঞ্চুরি করেও সর্বনিম্ন ইনিংসের রেকর্ড গড়ল ভারত

নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্রিকেট এমনই এক খেলা, যেখানে রেকর্ড তৈরি হয় ব্যাটে-বলে, আবার ভেঙে যায় মুহূর্তেই। অনেক সময় এমন কিছু ঘটে যায়, যা পরিসংখ্যানের পাতায় চিরস্থায়ী হয়ে থাকে। হেডিংলির সবুজ উইকেটে ভারতের ব্যাটিং ইনিংস ছিল ঠিক তেমনই—সাফল্যের আলো ও ব্যর্থতার ছায়া একসাথে মিশে যাওয়া এক অদ্ভুত গল্প।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চলমান টেস্ট সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ভারতীয় দল করে ৪৭১ রান। শুরুটা ছিল দারুণ, ব্যাটিং লাইনআপের প্রথমাংশে দেখা যায় তিনটি ব্যক্তিগত সেঞ্চুরি। কিন্তু ইনিংসের দ্বিতীয়ার্ধে হঠাৎ এক ধস নামে। মাত্র ৪১ রানে শেষ সাতটি উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত। ফলাফল—তিন শতকের পরও গড়া হলো সবচেয়ে কম রানের ইনিংসের রেকর্ড, যেখানে অন্তত তিন ব্যাটার শতক পূর্ণ করেছিলেন।

সেঞ্চুরির জোয়ারে ভেসে চলা সূচনা

দিনের শুরুটা ভারতীয়দের জন্য ছিল রঙিন। টপ অর্ডারে প্রথম আলো ছড়ান ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল। তরুণ এই বাঁহাতি ব্যাটার ঠান্ডা মাথার ইনিংস খেলে করেন ১০১ রান। তাঁকে অনুসরণ করেন অধিনায়ক শুভমান গিল, যিনি নেতৃত্বের ভারকে চাপ নয়, বরং আত্মবিশ্বাসে পরিণত করেন। গিলের ব্যাট থেকে আসে ১৪৭ রানের এক ধৈর্যশীল ইনিংস।

সবচেয়ে বিস্ময়কর ছিল উইকেটকিপার ব্যাটার ঋষভ পান্তের ব্যাটিং। ইনিংসের মাঝপথে ক্রিজে এসে তিনি খেলেছেন অত্যন্ত আগ্রাসী ভঙ্গিতে। মাত্র ১৩৪ বলে ১৩৪ রান করে ভারতের ইনিংসকে নিয়ে যান উঁচু এক জায়গায়। একসময় মনে হচ্ছিল ভারতের স্কোর অনায়াসে ছুঁয়ে ফেলবে ৫৫০-৬০০ রানের সীমা। কিন্তু ক্রিকেট যে অনিশ্চয়তার খেলা, সেটাই যেন প্রমাণ করে দিল শেষ ঘণ্টাগুলো।

ধসের শুরু এবং রেকর্ডের জন্ম

ঋষভ পান্ত যখন আউট হন, ভারতের স্কোর ছিল ৪৩০। তখনও হাতে ছিল ৬টি উইকেট। কিন্তু এরপরই শুরু হয় বিপর্যয়। পরের ব্যাটারদের কেউই দাঁড়াতে পারেননি ইংলিশ বোলারদের সামনে। একে একে সাজঘরে ফেরেন ভারতের মিডল অর্ডার ও লোয়ার অর্ডার ব্যাটাররা।

মাত্র ৪১ রানের ব্যবধানে শেষ ৭ উইকেট হারিয়ে ভারত থেমে যায় ৪৭১ রানে। টেস্ট ইতিহাসে তিন সেঞ্চুরি করা দলের সবচেয়ে কম রান এখন ভারতের এই ইনিংস। এর আগে রেকর্ডটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার, যারা ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন সেঞ্চুরি করেও করেছিল ৪৭৫ রান।

শূন্য রানে বিদায়, পরিসংখ্যানে বিরল দৃশ্য

এই ইনিংসে ভারতের আরও একটি দিক বিশেষ নজর কাড়ে। সেঞ্চুরির পাশাপাশি এই ইনিংসেই দেখা গেছে তিন ব্যাটারের শূন্য রানে বিদায়।

অভিষেকে নামা তরুণ সাই সুদর্শন

দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা করুন নায়ার

পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ—তিনজনই রান না করেই ফিরেছেন ড্রেসিংরুমে

একই ইনিংসে তিন সেঞ্চুরি ও তিন শূন্য রানে আউট হওয়ার ঘটনা টেস্ট ইতিহাসে এটি ষষ্ঠবার ঘটল। তবে ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম। এর আগে এই অনন্য রেকর্ড দেখা গেছে ১৯৩২ সালে ইংল্যান্ড, ২০০২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০২৪ সালে আফগানিস্তানসহ আরও কয়েকটি ঘটনায়। এবার সেই তালিকায় নাম লেখাল ভারত।

ইংল্যান্ডের জবাব এবং ম্যাচের বর্তমান চিত্র

ভারতের ইনিংস শেষ হওয়ার পর ব্যাট করতে নামে ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় দিন শেষে তারা করেছে ৩ উইকেটে ২০৯ রান। ওপেনার বেন ডাকেট ৬২ রান করে আউট হলেও অপর প্রান্তে ওলি পোপ ছিলেন দৃঢ়। তিনি করেছেন অপরাজিত ১০০ রান। ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের মূল চ্যালেঞ্জ ছিল জাসপ্রিত বুমরাহকে সামলানো, যিনি বল হাতে একের পর এক ধাক্কা দিয়েছেন প্রতিপক্ষকে। তিনি নিয়েছেন ইংল্যান্ডের তিনটি উইকেটই।

এর আগে ভারতের ইনিংসে বল হাতে সফল ছিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস ও জশ টাং, দুজনেই চারটি করে উইকেট শিকার করেন।

পরিসংখ্যানের আয়নায় ভারতীয় ইনিংস

বিষয়তথ্য
দলীয় রান ৪৭১
সেঞ্চুরি যশস্বী (১০১), গিল (১৪৭), পান্ত (১৩৪)
শূন্য রানে আউট সুদর্শন, নায়ার, বুমরাহ
শেষ ৭ উইকেট ৪১ রানে
বল হাতে সফল স্টোকস (৪), টাং (৪)
ইংল্যান্ডের স্কোর (২য় দিন শেষে) ৩ উইকেটে ২০৯
পোপ অপরাজিত ১০০
বুমরাহ ৩ উইকেট

তিন সেঞ্চুরি মানেই যে বড় সংগ্রহ হবে, এমন কোনো নিশ্চয়তা ক্রিকেটে নেই—হেডিংলি টেস্টে ভারতীয় ইনিংস সেটাই যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। শুরুটা যতটা গৌরবময়, শেষটা ছিল ততটাই হতাশার। ইতিহাসের পাতায় জায়গা পাওয়া এই ইনিংস দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় থাকবে—সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে ব্যর্থতার দৃষ্টান্ত হিসেবেও।

ভারতের এই উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণ হলো, ক্রিকেট কেবল রান বা উইকেটের খেলা নয়, এটা একেকটি মুহূর্তে লেখা হয় নতুন করে, নতুন গল্পে। এখন দেখার বিষয়, ভারতীয় দল কীভাবে এই ধাক্কা সামলে ম্যাচে ফিরতে পারে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

দাবি না মানলে রবিবার ‘ঢাকা ব্লকেড’

দাবি না মানলে রবিবার ‘ঢাকা ব্লকেড’

নিজস্ব প্রতিবেদক: আন্দোলন এখন আর শুধু ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীদের একক প্রতিবাদ নয়। এটি পরিণত হয়েছে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর... বিস্তারিত