ঢাকা, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

সতর্কতা: যেসব মেয়েদের ইমার্জেন্সি পিল খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ

লাইফ স্টাইল ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ২৫ ১৯:৪৫:৩৪
সতর্কতা: যেসব মেয়েদের ইমার্জেন্সি পিল খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ

"ইমার্জেন্সি পিল: পার্শপ্রতিক্রিয়া, ঝুঁকি ও চিকিৎসকদের পরামর্শ"

নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্তমান সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ ঠেকাতে অনেকেই ভরসা রাখেন ইমার্জেন্সি পিলের ওপর। একটিমাত্র পিল—যা সংকট মুহূর্তে হয়তো বাঁচিয়ে দিতে পারে একটি জীবনকে বিশৃঙ্খলতায় যাওয়ার হাত থেকে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ছোট্ট পিলটি সবার জন্য উপযোগী নয়। বরং কিছু নারীর জন্য এটি হতে পারে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ।

চলুন জেনে নিই—কারা ইমার্জেন্সি পিল খাবেন না, কেন ঝুঁকিপূর্ণ, এবং বিকল্প করণীয় কী হতে পারে।

কারা ইমার্জেন্সি পিল খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন?

১. অ্যালার্জির ইতিহাস যাদের রয়েছে

যদি পূর্বে এই ওষুধ গ্রহণ করে শরীরে চুলকানি, ফোলা, র‍্যাশ বা শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়ে থাকে, তাহলে এটি আবার খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। একে বলে হরমোনাল অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন, যা অতিরিক্ত মাত্রায় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

২. গর্ভাবস্থায় যারা রয়েছেন

ইমার্জেন্সি পিল গর্ভনিরোধে কাজ করে সহবাসের আগে বা পরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। এটি গর্ভাবস্থায় কোনো কাজে আসে না। উপরন্তু, গর্ভাবস্থায় খেলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ভ্রূণের ওপর।

৩. অনিয়মিত বা ভারী ঋতুস্রাবে ভোগা নারীরা

যাদের মাসিক চক্র অনিয়মিত বা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়, তাদের ক্ষেত্রে ইমার্জেন্সি পিল খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। এটি শরীরের হরমোন ব্যালান্স আরও নষ্ট করে দিতে পারে, ফলে মাসিক আরও অনিয়মিত হতে পারে।

৪. লিভার বা হরমোন-সংক্রান্ত রোগে আক্রান্তরা

ইমার্জেন্সি পিল লিভারে প্রক্রিয়াজাত হয়। তাই লিভার সমস্যা থাকলে এটি শরীরে জমে গিয়ে বিপদ ডেকে আনতে পারে। এছাড়া যাদের থাইরয়েড বা পলিসিস্টিক ওভারির মতো হরমোনাল রোগ রয়েছে, তাদেরও সাবধান হওয়া জরুরি।

পিল খাওয়ার পর যেসব পার্শপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে

ইমার্জেন্সি পিল একটি শক্তিশালী হরমোনাল ওষুধ। এটি খাওয়ার পর দেখা দিতে পারে:

বমি বা বমি বমি ভাব

মাথাব্যথা ও অবসাদ

পেটের ব্যথা বা ফুলে যাওয়া

ওজন বেড়ে যাওয়া

অনিয়মিত ঋতুস্রাব বা অতিরিক্ত রক্তপাত

দীর্ঘমেয়াদে গর্ভধারণে সমস্যা (যদি ঘন ঘন খাওয়া হয়)

কারা এই পিল খেতে পারেন?

যদি সুরক্ষিত সহবাস না হয় বা জন্মনিয়ন্ত্রণের নিয়মিত পদ্ধতি ব্যর্থ হয়, তখন এই পিল গ্রহণ করা যায়। যেমন:

কনডম ছিঁড়ে গেলে

সহবাসের সময় পিল খেতে ভুলে গেলে

জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কোনো ঘাটতি থাকলে

তবে খেয়াল রাখতে হবে—এই পিল সহবাসের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে খেতে হয়। যত দ্রুত খাবেন, তত কার্যকারিতা বেশি হবে।

জরুরি কিছু নির্দেশনা

একটি ঋতুচক্রে একবারের বেশি খাওয়া ঠিক নয়

এটি কোনো স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নয়

ঘন ঘন খেলে হরমোন ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়

নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বিকল্প নয়

বিকল্প কী?

নিয়মিত গর্ভনিরোধক পিল, কনডম, ইনজেকশন, কিংবা দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতি (যেমন IUD) ব্যবহার অনেক বেশি নিরাপদ ও কার্যকর। ইমার্জেন্সি পিল শুধু শেষ অবলম্বন হওয়া উচিত, অভ্যাস নয়।

ইমার্জেন্সি পিল নিঃসন্দেহে একটি জরুরি ও কার্যকর ওষুধ। কিন্তু এটি সব মেয়ের জন্য নয়। তাই এটি গ্রহণের আগে নিজের শারীরিক অবস্থা, পূর্ববর্তী চিকিৎসা ইতিহাস এবং পার্শপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া জরুরি। প্রয়োজনে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আপনার নিজের শরীরের জন্য আপনি নিজেই সবচেয়ে বড় দায়িত্ববান। সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।

তথ্যসূত্র: গাইনোকোলজিস্ট, ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (WHO)

FAQ (প্রশ্ন ও উত্তরসহ):

Q1: ইমার্জেন্সি পিল কী?

উত্তর: ইমার্জেন্সি পিল একটি হরমোনাল ওষুধ, যা অনিরাপদ সহবাসের পর গর্ভধারণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

Q2: কারা ইমার্জেন্সি পিল খাবেন না?

উত্তর: যাদের অ্যালার্জি আছে, গর্ভবতী, ঋতুস্রাব অনিয়মিত বা লিভার/হরমোন সমস্যায় ভোগেন, তাদের এই পিল এড়িয়ে চলা উচিত।

Q3: ইমার্জেন্সি পিল খেলে কী পার্শপ্রতিক্রিয়া হতে পারে?

উত্তর: বমি, মাথাব্যথা, ঋতুচক্রে পরিবর্তন, ওজন বৃদ্ধি, গর্ভধারণে সমস্যা ইত্যাদি হতে পারে।

Q4: কবে ইমার্জেন্সি পিল খাওয়া যায়?

উত্তর: অনিরাপদ সহবাসের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পিল খেতে হবে, তবে যত দ্রুত সম্ভব তত ভালো।

Q5: ইমার্জেন্সি পিল কি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি?

উত্তর: না, এটি নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বিকল্প নয়—শুধু জরুরি ব্যবহারের জন্য।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ