ঢাকা, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

অশ্রুসিক্ত বিদায়ের ৪ বছর পর মেসির পাওনা শোধ করছে বার্সা

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ২৯ ১০:১৫:৫০
অশ্রুসিক্ত বিদায়ের ৪ বছর পর মেসির পাওনা শোধ করছে বার্সা

নিজস্ব প্রতিবেদক: চার বছর আগে এক অশ্রুসিক্ত বিদায়ের মাধ্যমে কাতালান ক্লাব বার্সেলোনা থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন লিওনেল মেসি। অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, চুক্তি নবায়নে ব্যর্থতা, এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতার জেরে বার্সাকে বিদায় জানাতে বাধ্য হন ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ তারকা। তখন শুধু বার্সা ভক্তরাই নয়, কেঁদেছিলেন মেসিও। সম্পর্কটা যদিও শেষ হয়েছিল কাগজে-কলমে, কিন্তু প্রাপ্য ছিল আরও কিছু—আর সেটাই ছিল বকেয়া পারিশ্রমিক।

অবশেষে সেই পাওনার হিসাব মেটাতে যাচ্ছে বার্সেলোনা। স্প্যানিশ ক্রীড়া গণমাধ্যম ‘স্পোর্ত’ নিশ্চিত করেছে, মেসিকে প্রায় ৬ মিলিয়ন ইউরো—বাংলাদেশি টাকায় ৮৫ কোটি টাকার বেশি—পরিশোধে সম্মত হয়েছে ক্লাবটি।

২০২০ সালে মেসির সঙ্গে হওয়া শেষ চুক্তি অনুযায়ী, ধাপে ধাপে ৪৮ মিলিয়ন ইউরো পাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির সময় শুরু হওয়া অর্থনৈতিক সংকটে শেষ কিস্তির অর্থ দিতে ব্যর্থ হয় বার্সা। বিদায় নেওয়ার পরেও দীর্ঘ চার বছর ধরে ঝুলে ছিল ওই প্রাপ্য।

মেসিই ছিলেন না একমাত্র, যাঁর বেতন বকেয়া ছিল। একই সময়ে বেতন না পাওয়া তালিকায় ছিলেন স্যামুয়েল উমতিতি, সার্জিও বুসকেটস, ফিলিপে কৌতিনিয়ো, উসমান দেম্বেলে ও রোনাল্ড কোমানের মতো তারকারাও। সেই সময় বার্সার সভাপতি ছিলেন জোসেপ মারিয়া বার্তোমেউ, যিনি মেসির বিদায়ের অন্যতম কারণ হিসেবেও সমালোচিত হন।

তবে মেসি বিদায়ের পর বার্সেলোনার জন্য পথটা খুব মসৃণ ছিল না। অর্থনৈতিক টানাপোড়েন কমেনি, বরং সময়ের সঙ্গে বেড়েছে। সদ্য সমাপ্ত মৌসুমের শুরুতেও দানি ওলমো ও পাউ ভিক্টরের মতো খেলোয়াড়দের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে লা লিগার সঙ্গে ঝামেলায় জড়াতে হয় বার্সাকে, যা শেষ পর্যন্ত আদালতের রায়ে মীমাংসা হয়।

অন্যদিকে, বিদায়ের পর মেসি যোগ দেন প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি) ক্লাবে। তবে ফ্রান্সের এই অধ্যায় খুব সুখকর ছিল না। এরপর ২০২৩ সালে তিনি নাম লেখান যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকার (এমএলএস) ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে। বর্তমানে সেখানেই তিনি কাটাচ্ছেন ক্যারিয়ারের শেষ সময়, তবে রেকর্ড পারিশ্রমিক নিয়ে আবারও হয়েছেন শিরোনামে।

বার্তা সংস্থা এপি’র তথ্যমতে, ইন্টার মায়ামিতে মেসির বার্ষিক আয় ২০.৪৪ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৪৮ কোটি টাকা)—যা এমএলএসের সব খেলোয়াড়ের সম্মিলিত বেতনের চেয়েও বেশি! এই বিশাল অঙ্কের কারণে তার দল মায়ামিও এখন খরচের দিক থেকে লিগের শীর্ষে।

এদিকে, বর্তমানে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে ব্যস্ত সময় পার করছেন মেসি। প্রথমবারের মতো এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ইন্টার মায়ামি উঠেছে দ্বিতীয় রাউন্ডে। আজ (রোববার) বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় তারা মুখোমুখি হবে মেসিরই সাবেক ক্লাব পিএসজির বিপক্ষে। কাকতালীয় হলেও, ফুটবল যেন ঠিক সময়েই গল্প লেখে।

চার বছর আগে চোখের পানি নিয়ে বার্সা ছেড়েছিলেন মেসি। সেই অশ্রুবিন্দুর রেশ থেকে গড়ে উঠেছিল অগণিত প্রশ্ন, ক্ষোভ আর অভিমান। আজ, চার বছর পর বার্সেলোনা যখন তার পাওনা বুঝিয়ে দিতে প্রস্তুত, তখন হয়তো ক্ষতগুলো পুরোপুরি শুকায়নি, কিন্তু অন্তত একটি অসমাপ্ত অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি যেন ঘটছে। হয়তো এই ঋণশোধ বার্সা ও মেসির সম্পর্কের মাঝে একটা নিঃশব্দ সমঝোতা হয়ে থাকবে—যেখানে ভালোবাসা ছিল, আছে, থাকবে... শুধু রংটা বদলে গেছে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ