ঢাকা, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

বিএসইসির শেয়ারধারণ নীতি মানছে না ৮ তালিকাভুক্ত কোম্পানি

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ২৯ ১৫:৫৫:২৪
বিএসইসির শেয়ারধারণ নীতি মানছে না ৮ তালিকাভুক্ত কোম্পানি

বিএসইসির ন্যূনতম শেয়ার ধারণ নির্দেশনা লঙ্ঘন, ঝুঁকিতে কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ কাঠামো

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আটটি কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ার বর্তমানে ১০ শতাংশেরও নিচে অবস্থান করছে। এটি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিদ্যমান নির্দেশনার লঙ্ঘন, যেখানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও আমারস্টক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, যেসব কোম্পানিতে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে, সেগুলো হলো: সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল, ফ্যামিলি টেক্স, ফু-ওয়াং ফুডস, ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) এবং ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ।

কোম্পানিভিত্তিক বর্তমান শেয়ার ধারণ চিত্র:

সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস:

মোট শেয়ার: ১১ কোটি ৯৮ লাখ। উদ্যোক্তাদের কাছে: ৭.৬৭%।

সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল:

মোট শেয়ার: ২৩ কোটি ৯৩ লাখ। উদ্যোক্তাদের কাছে: ৭.১০%।

ফ্যামিলি টেক্স:

মোট শেয়ার: ৩৫ কোটি ৪১ লাখ। উদ্যোক্তাদের কাছে: ৪.০২%।

ফু-ওয়াং ফুডস:

মোট শেয়ার: ১১ কোটি ৮ লাখ। উদ্যোক্তাদের কাছে: ৭.৮৫%।

ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংক:

মোট শেয়ার: ১২০ কোটি ৮১ লাখ। উদ্যোক্তাদের কাছে: ৫.৯০%।

আইএফআইসি ব্যাংক:

মোট শেয়ার: ১৯২ কোটি ২০ লাখ। উদ্যোক্তাদের কাছে: ০.০০%।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল):

মোট শেয়ার: ১১৪ কোটি ১ লাখ। উদ্যোক্তাদের কাছে: ১১.৬২%।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ:

মোট শেয়ার: ১৬০ কোটি ৯৯ লাখ। উদ্যোক্তাদের কাছে: ০.১৮%।

শেয়ারের মালিকানা কাঠামোতে পরিবর্তনের কারণ

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ—এই তিনটি প্রতিষ্ঠানে আলোচিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের মালিক এস আলম উদ্যোক্তা শেয়ারধারক ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক তার পরিচালক পদ বাতিল এবং আদালত কর্তৃক শেয়ার জব্দের আদেশের ফলে ওই শেয়ার এখন উদ্যোক্তা হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে না। এতে করে প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোক্তা শেয়ারের পরিমাণ কমে গেছে এবং নিয়ন্ত্রণ কাঠামোতে দুর্বলতা তৈরি হয়েছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা ও সম্ভাব্য পদক্ষেপ

বিএসইসি ইতিপূর্বে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে উল্লিখিত কোম্পানিগুলো তা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ায় কমিশন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের পরিচালক পদ বাতিল, ডিভিডেন্ড গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা কিংবা ভোটাধিকার স্থগিত করার মতো ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত।

বাজারে প্রভাব ও বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিকোণ

বিশ্লেষকদের মতে, উদ্যোক্তা পরিচালকদের স্বল্প শেয়ার ধারণ কোম্পানির ওপর নিয়ন্ত্রণ দুর্বল করে, যা কোম্পানির সুশাসন ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। একইসঙ্গে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকটে পড়ে। নিয়ন্ত্রণের ঘাটতি বাজারে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে, যা শেয়ারমূল্যে অস্থিরতা বাড়াতে পারে।

উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ধারণে ঘাটতি শুধু একটি নির্দেশনা লঙ্ঘন নয়, বরং এটি কোম্পানির প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও বাজার স্থিতিশীলতার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার জন্য বিষয়টি এখন নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপযুক্ত সময়।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ