ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে অনিশ্চয়তা, ১৮ হাজার কর্মী অপেক্ষায়

প্রবাসী ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ১৭ ১২:২৪:২৯
মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে অনিশ্চয়তা, ১৮ হাজার কর্মী অপেক্ষায়

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর কার্যক্রম এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রায় ১৮ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর বিদেশগমন অনিশ্চয়তায় আটকে আছে। অনেকেই ইতোমধ্যে মেডিকেল, ভিসা ও অন্যান্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেও মালয়েশিয়া সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত ও সাম্প্রতিক নিরাপত্তা উদ্বেগ পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে তুলেছে।

অনুমতি পেয়েও যেতে পারেননি হাজারো কর্মী

২০২৪ সালে মালয়েশিয়ার সরকার ৩১ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল বিদেশি কর্মীদের কাজে যোগ দেওয়ার জন্য। সেই সময় বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৮ হাজার কর্মী প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু বিমান টিকিট সংকট, এজেন্সির ধীরগতি ও প্রশাসনিক জটিলতায় নির্ধারিত সময়ে তারা যেতে পারেননি।

পরবর্তীতে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ৭ হাজার ৯২৬ জন কর্মীর জন্য নতুন করে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। তবে তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। বরং সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি আরও জটিল রূপ নিয়েছে।

আইএস সংশ্লিষ্টতায় গ্রেফতার, বাড়ছে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ

মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল সম্প্রতি জানান, সে দেশে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৩৬ বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ গঠন হয়েছে, বাকিদের বিরুদ্ধে অভিবাসন নীতিভঙ্গ ও তদন্ত চলছে।

এই ঘটনা শুধু নিরাপত্তার প্রশ্নই নয়, বরং বাংলাদেশি কর্মীদের প্রতি মালয়েশিয়ার আস্থা সংকটে ফেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা।

কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করছে বাংলাদেশ

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গত সপ্তাহে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন,

“সব ৩৬ জন জঙ্গি নয়। মাত্র কয়েকজনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। বাকিদের ক্ষেত্রে অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ। আমরা মালয়েশিয়াকে অনুরোধ করেছি, কাউকে ফেরত পাঠানোর আগে যেন বাংলাদেশকে জানানো হয়।”

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে অত্যন্ত সচেতন এবং মালয়েশিয়ার সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান চালিয়ে যাচ্ছে।

সিন্ডিকেট ও দুর্নীতির জালে জর্জরিত প্রক্রিয়া

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, সিন্ডিকেট নির্ভর নিয়োগ ও দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদেশের ১২টি রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব এজেন্সি প্রায় ১ হাজার ১২৮ কোটি টাকা অতিরিক্ত আদায় করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

মালয়েশিয়া সরকার এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির আহ্বান জানিয়েছে, কারণ বিষয়টি তাদের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘ট্র্যাফিকিং ইন পারসন্স’ (TIP) রিপোর্টে প্রভাব ফেলছে।

বিশ্লেষকদের পরামর্শ: স্বচ্ছতা ও কৌশলী কূটনীতি প্রয়োজ

অভিবাসন বিশ্লেষক আসিফ মুনীর বলেন,

“শ্রমবাজার খোলার পথ দীর্ঘ হচ্ছে। দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা দরকার। বাংলাদেশকে প্রো-অ্যাকটিভ ভূমিকা রাখতে হবে।”

ওকাপ চেয়ারম্যান শাকিরুল ইসলাম বলেন,

“বিদেশে বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ শ্রমবাজারের জন্য বড় ধাক্কা। মালয়েশিয়া এখন দ্বিগুণ ভাববে শ্রমিক নিতে।”

মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে অনিশ্চয়তা শুধু কর্মীদের দুশ্চিন্তার বিষয় নয়, এটি দেশের রেমিটেন্স ব্যবস্থাকেও চাপের মুখে ফেলেছে। এখন প্রয়োজন, দুর্নীতির দায়মুক্তি নয়—বরং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কূটনৈতিকভাবে বাজার পুনরায় উন্মুক্ত করার উদ্যোগ। নয়তো এই বাজার দীর্ঘ সময়ের জন্য হারিয়ে যেতে পারে।

১৮ হাজার কর্মী এখনও অপেক্ষায়। শুধু সিদ্ধান্তই তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে।

FAQ ও উত্তর (এক লাইনে নয়, আলাদা করে সাজানো)

প্রশ্ন: মালয়েশিয়া শ্রমবাজার এখনো বন্ধ কেন?

উত্তর: জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা, সিন্ডিকেট দুর্নীতি এবং কূটনৈতিক জটিলতার কারণে শ্রমবাজার বন্ধ রয়েছে।

প্রশ্ন: কতজন বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমতি পেয়েও যেতে পারেননি?

উত্তর: প্রায় ১৮ হাজার কর্মী অনুমতি পেলেও মালয়েশিয়া যেতে পারেননি।

প্রশ্ন: মালয়েশিয়া সরকার নতুন করে শ্রমিক নেবে কি?

উত্তর: বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত, তবে কূটনৈতিক আলোচনায় সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রশ্ন: গ্রেফতার হওয়া ৩৬ বাংলাদেশির মধ্যে কয়জনের বিরুদ্ধে জঙ্গি অভিযোগ রয়েছে?

উত্তর: মাত্র ৫ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ সংশ্লিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ