ঢাকা, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

এশিয়া কাপ ২০২৫: বাংলাদেশ স্কোয়াডের ১৪ জন প্রায় নিশ্চিত

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ৩০ ১৩:৫২:৫৭
এশিয়া কাপ ২০২৫: বাংলাদেশ স্কোয়াডের ১৪ জন প্রায় নিশ্চিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: এশিয়া কাপ ২০২৫ ঘিরে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল গুছিয়ে নিচ্ছে তাদের চূড়ান্ত স্কোয়াড। দীর্ঘ আলোচনার পর টিম ম্যানেজমেন্ট, সিলেকশন প্যানেল, ক্রিকেট অপারেশনস বিভাগ এবং অধিনায়ক মিলেই গঠন করেছে সম্ভাব্য ১৫ সদস্যের তালিকা। এই তালিকায় ১৪ জন ক্রিকেটার কার্যত চূড়ান্ত। এখন কেবল একটি পজিশন ঘিরে রয়ে গেছে জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং মতবিরোধ।

ওপেনিং কম্বিনেশন নিয়ে পরিস্কার বাংলাদেশ

বাংলাদেশ দল এবার ব্যাকআপ ওপেনার না নিয়েই স্কোয়াড সাজানোর পরিকল্পনা করছে। মানে, যারা মূল ওপেনার, তারাই দায়িত্ব পালন করবেন। এই তালিকায় রয়েছেন তানজিদ হাসান তামিম এবং পারভেজ হোসেন ইমন। লিটন কুমার দাস থাকছেন তিন নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে, তবে প্রয়োজনে তিনি ওপেন করতে পারবেন। ব্যাকআপ হিসেবে নাইম শেখের নাম সামনে আসলেও, তাকে স্কোয়াডে নেয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই।

বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে তিনটি ম্যাচে তিন ভিন্ন ওপেনিং কম্বিনেশন ব্যবহার করা হলেও কাঙ্ক্ষিত ফল আসেনি। তাই এবার তামিম-ইমন জুটিকে স্থায়ীভাবে এগিয়ে নিতে চায় ম্যানেজমেন্ট। ওপেনিং কম্বিনেশনে স্থিতি আনতেই ব্যাকআপ বাদ দিয়ে মূল দুজনকে বারবার সুযোগ দেয়ার কৌশল নির্ধারণ হয়েছে।

মিডল অর্ডারে নতুন মুখ, পুরোনো প্রশ্ন

বাংলাদেশের মিডল অর্ডার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন উঠছে। এই বিভাগে পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা এবং স্ট্রাইক রেট দুই নিয়েই বিতর্ক আছে। তবে তারপরও এই বিভাগে তিনজন ক্রিকেটারকে স্কোয়াডে রাখা প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে—তাওহিদ হৃদয়, শামীম হোসেন পাটোয়ারী এবং জাকের আলী অনিক।

তাওহিদ হৃদয় গত কয়েকটি সিরিজে ধারাবাহিক না হলেও, স্ট্রাইক রেট ও আগ্রাসী মানসিকতার জন্য তাকে রাখা হচ্ছে। শামীম হোসেনের শক্তি তার ক্লিন হিটিং এবং মিডল অর্ডারে পাওয়ার হিটার হিসেবে দ্রুত রান তোলার ক্ষমতা। জাকের আলী অনিককে ধরা হচ্ছে একজন কার্যকর ফিনিশার হিসেবে। তার লেট মিডল অর্ডারে খেলার দক্ষতা ও শান্ত মাথায় ইনিংস শেষ করার অভ্যাস দলের ব্যাটিং লাইনআপে ভারসাম্য আনতে পারে।

স্পিন বিভাগেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

এশিয়ান কন্ডিশনের কথা মাথায় রেখে তিন ভিন্ন ঘরানার স্পিনারকে রাখা হচ্ছে স্কোয়াডে। এরা হলেন—নাসুম আহমেদ (লেফট আর্ম অর্থোডক্স), রিশাদ হোসেন (লেগ স্পিনার) এবং মেহেদী হাসান মিরাজ (অফ স্পিনার)। শেখ মেহেদী হাসানকে নিয়ে পূর্বে আলোচনা থাকলেও, আপাতত তাকে স্কোয়াডে রাখা হচ্ছে না।

রিশাদ হোসেনের অন্তর্ভুক্তি স্পষ্টভাবে টিম ম্যানেজমেন্টের আক্রমণাত্মক মানসিকতার প্রতিফলন। বাংলাদেশ দলে দীর্ঘদিন ধরে একজন কার্যকর লেগ স্পিনারের অভাব ছিল। রিশাদ সেই ঘাটতি পূরণ করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।

পেস ইউনিট নিয়ে নির্ভরযোগ্য গঠন

পেস বোলিং বিভাগে মোট পাঁচজন ক্রিকেটারকে রাখা হচ্ছে, যার মধ্যে একজন অলরাউন্ডার। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন এই বিভাগে অলরাউন্ডার হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন। তার সঙ্গে থাকছেন—তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম এবং তানজিম হাসান সাকিব।

সাইফউদ্দিনের বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিং সামর্থ্য দলকে বাড়তি সুবিধা দেবে। মিডল অর্ডারে অনভিজ্ঞতার কারণে এই ধরনের অলরাউন্ডার দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

একটি পজিশন নিয়ে উত্তাল প্রতিযোগিতা

স্কোয়াডের ১৫তম এবং শেষ পজিশন ঘিরে চলছে তুমুল লড়াই। এই একটি জায়গার জন্য বিবেচনায় আছেন—নুরুল হাসান সোহান, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন এবং সৌম্য সরকার। তবে সৌম্য সরকার একাধিক কারণে দৌড় থেকে ছিটকে পড়েছেন। ব্যাকআপ ওপেনার নেয়া হচ্ছে না, মিডিয়াম পেসের অতিরিক্ত চাহিদাও নেই, ফলে সৌম্যর প্রয়োজন পড়ছে না।

প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখন সোহান বনাম অঙ্কন। সোহান গত কয়েকটি ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে নিয়মিত ভালো পারফর্ম করে যাচ্ছেন। তিনি দলের একজন পরীক্ষিত ফিনিশার, পাশাপাশি উইকেটকিপিং দক্ষতাও আছে। অন্যদিকে, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনও সাম্প্রতিক বিপিএলে চমৎকার ইনিংস খেলেছেন, তবে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার ঘাটতি তাকে কিছুটা পিছিয়ে রেখেছে।

বিসিবির সিলেকশন প্যানেলে কিছু কর্মকর্তা আছেন যারা ব্যক্তিগত কারণে সোহানকে এড়িয়ে চলেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে। যদিও দলগত স্বার্থে সবচেয়ে প্রস্তুত ও উপযুক্ত খেলোয়াড়কে নির্বাচনের তাগিদ দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।

সম্ভাব্য ১৫ সদস্যের স্কোয়াড (প্রায় চূড়ান্ত)

বিভাগক্রিকেটার
ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন
ওয়ান ডাউন লিটন কুমার দাস
মিডল অর্ডার তাওহিদ হৃদয়, শামীম হোসেন পাটোয়ারী, জাকের আলী অনিক
উইকেটকিপার ব্যাটার নুরুল হাসান সোহান / মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন
স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ, নাসুম আহমেদ, রিশাদ হোসেন
পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব

বাংলাদেশ দলের স্কোয়াড কার্যত চূড়ান্ত। এখন কেবল একটি পজিশন ঘিরে রয়েছে জটিলতা। নির্বাচকরা অভিজ্ঞতা, সাম্প্রতিক ফর্ম এবং টিম কম্বিনেশন বিবেচনা করে শেষ সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এই একটি পজিশন যে এশিয়া কাপের পারফরম্যান্সে বড় প্রভাব ফেলতে পারে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ক্রিকেটপ্রেমীরা এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষায়—কে হচ্ছেন পনেরোতম সদস্য?

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ