ঢাকা, শনিবার, ২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

চাকরির বাজারে সেরা সিভি কিভাবে বানাবেন? পূর্ণাঙ্গ গাইড

চাকরির সংবাদ ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ০২ ১০:৪০:৩৯
চাকরির বাজারে সেরা সিভি কিভাবে বানাবেন? পূর্ণাঙ্গ গাইড

নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্তমান সময়ের চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা তীব্র। আপনার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সঠিকভাবে নিজের পরিচয় উপস্থাপন না করতে পারলে কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সিভি বা Curriculum Vitae হলো সেই প্রথম দৃষ্টিকোণ যা নিয়োগকর্তার কাছে আপনাকে তুলে ধরে। তাই একটি সেরা সিভি তৈরি করা চাকরির সফলতার প্রথম ধাপ।

এই পূর্ণাঙ্গ গাইডে জানানো হবে কীভাবে আপনি নিজের সিভি সাজাবেন যাতে তা চাকরির বাজারে আপনাকে এগিয়ে রাখে।

১. সঠিক ফরম্যাট নির্বাচন করুন

সিভির ফরম্যাট খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানত তিন ধরনের ফরম্যাট রয়েছে—

কালানুক্রমিক (Chronological): সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত, যেখানে সর্বশেষ কাজের অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করে পুরোনো অভিজ্ঞতা পর্যন্ত লেখা হয়।

দক্ষতা ভিত্তিক (Functional): দক্ষতা ও অর্জনের ওপর বেশি ফোকাস, যেখানে কাজের ইতিহাস কম গুরুত্ব পায়।

মিশ্র ফরম্যাট (Combination): অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা দুটোই উপস্থাপন করে।

চাকরির ধরণ ও আপনার অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে সঠিক ফরম্যাট বেছে নিন।

২. ব্যক্তিগত তথ্য পরিষ্কার ও সঠিক রাখুন

সিভির শুরুতেই অবশ্যই থাকতে হবে—

আপনার পূর্ণ নাম

যোগাযোগের ঠিকানা

ফোন নম্বর

প্রফেশনাল ইমেইল ঠিকানা

LinkedIn বা পোর্টফোলিও লিঙ্ক (যদি থাকে)

নোট: জন্ম তারিখ, ধর্ম, বৈবাহিক অবস্থা ইত্যাদি লিখতে বাধ্যতামূলক নয়।

৩. প্রফেশনাল সামারি বা ক্যারিয়ার অবজেকটিভ

একটি ছোট ও প্রাসঙ্গিক অনুচ্ছেদে নিজের ক্যারিয়ার লক্ষ্য এবং দক্ষতা সংক্ষেপে উল্লেখ করুন। উদাহরণস্বরূপ—“আমি একজন অভিজ্ঞ মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ, যিনি ব্র্যান্ড উন্নয়ন ও ডিজিটাল ক্যাম্পেইন পরিচালনায় দক্ষ। নতুন সুযোগ খুঁজছি যেখানে আমি আমার দক্ষতা দিয়ে প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে পারব।”

৪. শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করুন

সর্বশেষ ডিগ্রি থেকে শুরু করে পূর্ববর্তী ডিগ্রির নাম, প্রতিষ্ঠান, পাশের বছর ও ফলাফল উল্লেখ করুন।

যদি বিশেষ সনদ বা ট্রেনিং থাকে, সেগুলোও যোগ করুন।

৫. কর্ম-অভিজ্ঞতা বিস্তারিতভাবে লিখুন

প্রতিটি চাকরির জন্য উল্লেখ করুন—

প্রতিষ্ঠানের নাম ও অবস্থান

পদবী

কাজের সময়কাল

দায়িত্ব ও অর্জন

উদাহরণ:

অ্যাসিস্ট্যান্ট মার্কেটিং ম্যানেজার – ABC কোম্পানি (২০১৯-২০২৩)

সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন, বিক্রয়ে ২৫% বৃদ্ধি।

ক্লায়েন্ট মিটিং ও রিপোর্ট তৈরি।

৬. দক্ষতা (Skills) হাইলাইট করুন

যে সকল দক্ষতায় আপনি পারদর্শী, সেগুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন। যেমন—

টেকনিক্যাল স্কিল (MS Office, গ্রাফিক ডিজাইন, প্রোগ্রামিং ভাষা)

সফট স্কিল (যোগাযোগ, দলগত কাজ, সমস্যা সমাধান)

৭. অর্জন ও প্রশংসাপত্র যুক্ত করুন

বিশেষ সনদপত্র বা প্রশিক্ষণ

পুরস্কার বা সম্মাননা

যেকোনো বিশেষ প্রকল্প বা অর্জন উল্লেখ করতে পারেন।

৮. ভাষাগত দক্ষতা

আপনি যেসব ভাষায় দক্ষ, সেগুলো লিখুন। উদাহরণ:

বাংলা (মাতৃভাষা)

ইংরেজি (দক্ষ)

অন্য ভাষা (যদি থাকে)

৯. সিভি সংক্ষিপ্ত ও প্রফেশনাল রাখুন

১ থেকে ২ পৃষ্ঠা হবে আদর্শ।

ফন্ট হবে সহজে পড়ার মতো, যেমন Arial, Calibri, সাইজ ১০-১২।

অতিরিক্ত গ্রাফিক্স বা রঙ ব্যবহার করবেন না।

১০. বানান ও গ্রামার পরীক্ষা করুন

সঠিক বানান ও ভাষাগত শুদ্ধতা বজায় রাখুন। প্রয়োজনে অন্য কারো চোখে পরীক্ষা করিয়ে নিন।

১১. কাস্টমাইজেশন করুন

প্রত্যেক চাকরির জন্য সিভি একটু পরিবর্তন করুন। চাকরির প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে মিলিয়ে আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরুন।

একটি সেরা সিভি তৈরি মানে আপনার পেশাগত পরিচয়কে স্পষ্ট ও আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা। সঠিক ফরম্যাট, পরিষ্কার তথ্য, প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার সমন্বয়ে তৈরি সিভি নিয়োগকর্তার নজর কাড়তে সাহায্য করবে। মনে রাখবেন, সিভি হলো চাকরির বাজারে আপনার প্রবেশদ্বার—সুতরাং এটি যতটা সম্ভব প্রফেশনাল ও আকর্ষণীয় হওয়া উচিত।

FAQ:

১. সিভি কি?

সিভি হলো আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্ম অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার সংক্ষিপ্ত তথ্য যা চাকরির জন্য আবেদনকালে প্রেরণ করা হয়।

২. কীভাবে সিভি ফরম্যাট নির্বাচন করবেন?

আপনার কাজের অভিজ্ঞতা ও চাকরির ধরণ অনুযায়ী কালানুক্রমিক, দক্ষতা ভিত্তিক বা মিশ্র ফরম্যাট বেছে নিন।

৩. সিভিতে কি কি তথ্য থাকা উচিত?

ব্যক্তিগত তথ্য, ক্যারিয়ার সামারি, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্ম অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, অর্জন ও ভাষাগত দক্ষতা।

৪. সিভি কত পৃষ্ঠা হওয়া উচিত?

সাধারণত ১ থেকে ২ পৃষ্ঠার মধ্যে রাখা ভালো।

৫. সিভি কাস্টমাইজেশন কেন জরুরি?

প্রতিটি চাকরির জন্য সিভি সামান্য পরিবর্তন করলে আপনার আবেদন বেশি প্রাসঙ্গিক ও আকর্ষণীয় হয়।

মো: রাজিব আলী/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ