ঢাকা, রবিবার, ৩ আগস্ট ২০২৫, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২

বাংলাদেশ ব্যাংকে বড় পরিবর্তন: ভেঙে ফেলা হলো ১৪ ব্যাংকের বোর্ড

অর্থনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৩ ১২:১৫:৩৬
বাংলাদেশ ব্যাংকে বড় পরিবর্তন: ভেঙে ফেলা হলো ১৪ ব্যাংকের বোর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদত: ঢাকা, ৩ আগস্ট-দেশের ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের পরিবর্তনের স্বাক্ষর রাখল বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি ১৪টি ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছে, যা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে একীভূত করে একটি সুদৃঢ়, স্বচ্ছ ও সংগঠিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার অংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, দুর্বল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো একীভূত করা হবে যাতে তাদের কার্যক্রম আরও দক্ষ ও স্বচ্ছ হয়। সরকারের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে ছয়টি নতুন আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যার মধ্যে ব্যাংক রেজুলেশন অ্যাক্ট ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ও ব্যাংক কোম্পানি অ্যাক্ট সংশোধনের কাজও চলছে।

নতুন আইনের আওতায় পরিচালকদের আসন একটানা ১২ বছরের পরিবর্তে সর্বোচ্চ ৬ বছরে সীমাবদ্ধ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বোর্ডে স্বতন্ত্র পরিচালকের সংখ্যা ৫০% করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যা পরিবারতন্ত্র কমিয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।

গভর্নর আরও জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকে ব্যক্তিগত লকার রাখার প্রথা বন্ধ করা হবে। বর্তমানে কিছু লকার ফ্রিজ হওয়ায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি, তবে ফ্রিজ উঠলেই এই পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাবে। ভবিষ্যতে ব্যক্তিগত লকারের জন্য বেসরকারি ব্যাংকগুলোই দায়িত্বরত থাকবে, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ঋণের শ্রেণিবিন্যাস ও পরিশোধ সময়সীমা পুনর্গঠনের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতের আর্থিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করা হবে। এখন থেকে ঋণের মান নির্ধারণ করা হবে প্রতি তিন মাসে, যা ঋণ ব্যবস্থাপনাকে আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর করবে।

তবে বর্তমানে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের কারণে ব্যাংকগুলোর বড় অংকের অর্থ আটকে রয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক সেক্টরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই ধরনের স্থগিতাদেশ নিয়ে পরিবর্তনের প্রস্তাব জানিয়েছেন গভর্নর।

পুরনো ঋণের পুনর্বিন্যাস বন্ধ করতে ব্যাংক রেজুলেশন বিভাগের আইনগত গঠন করা হয়েছে, যা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে একীভূত ও পুনর্মূল্যায়ন করবে। এছাড়া পাচার হওয়া টাকা উদ্ধারের জন্য চারটি প্রতিষ্ঠানভিত্তিক টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, ইতোমধ্যে ১১টি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং আরও মামলা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি ধরে রাখা হয়েছে, যা মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রানীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসলে সুদের হার কমানোর প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে।

এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশের ব্যাংকিং খাত রাজনৈতিক ও গোষ্ঠীগত চাপ থেকে মুক্ত হয়ে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা শক্তিশালী হবে।

আল-আমিন ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ