ঢাকা, বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫, ৫ ভাদ্র ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

মালয়েশিয়ার বড় ঘোষণা: বিনা খরচে কর্মী নেবে বাংলাদেশ থেকে

প্রবাসী ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ২০ ১৭:২৭:০৭
মালয়েশিয়ার বড় ঘোষণা: বিনা খরচে কর্মী নেবে বাংলাদেশ থেকে

নিজস্ব প্রতিবেদক: পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে বিদেশে পাড়ি জমানো লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশীর স্বপ্ন প্রায়শই দালাল চক্র এবং ভিসা সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। জমি ও বাড়ি বিক্রি করে ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা খরচ করেও প্রতারণার শিকার হওয়ার ঘটনা যেখানে অহরহ, সেখানে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা হতে চলেছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে। মালয়েশিয়া সরকার এখন থেকে সম্পূর্ণ বিনা খরচে বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে, যা অভিবাসন খাতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

শূন্য খরচে অভিবাসন:

এখন থেকে মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের আর কোনো খরচ বহন করতে হবে না। নিয়োগকর্তারাই কর্মীদের ভিসা, মেডিকেল এবং বিমান ভাড়া সহ যাবতীয় খরচ প্রদান করবেন। অতীতে যেখানে একজন কর্মীকে ৪ থেকে ৫ হাজার মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা গুনতে হতো, সেখানে এখন অভিবাসন ব্যয় কার্যত শূন্যে নেমে আসবে। তবে, নতুন ব্যবস্থায় কর্মীর প্রথম মাসের বেতন থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সার্ভিস চার্জ কেটে নেওয়া হবে।

আধুনিক ও দালালমুক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া:

এই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে মালয়েশিয়া সরকার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ILO) নীতিমালা অনুসরণ করে একটি আধুনিক নিয়োগ ব্যবস্থা চালু করেছে। "ইউনিভার্সাল রিক্রুটমেন্ট প্রসেস (URP)" এবং "ডাইরেক্ট লেবার রিক্রুটমেন্ট (DLR) প্লাস" নামক দুটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া পরিচালিত হবে।

সম্পূর্ণ ব্যবস্থাটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে, যার ফলে শ্রমিক এবং নিয়োগকর্তার মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। কর্মীরা নিজেরাই অনলাইনে চাকরির জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন এবং নিয়োগকর্তারাও সরাসরি সেই তালিকা থেকে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে পারবেন। এর ফলে পুরো প্রক্রিয়া থেকে দালাল বা কোনো মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেট বাদ পড়বে।

কূটনৈতিক সাফল্য:

ভিডিও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই অভাবনীয় সুযোগ সৃষ্টির পেছনে রয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক তৎপরতা। তার এই উদ্যোগের ফলেই বাংলাদেশী অভিবাসী শ্রমিকরা এই সুবিধা পেতে চলেছেন।

সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ:

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রক্রিয়া সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে এটি বাংলাদেশের অভিবাসন ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। এর ফলে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ যেমন বাড়বে, তেমনই আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে।

তবে এই সম্ভাবনার পথে কিছু বড় চ্যালেঞ্জও রয়ে গেছে। দেশের ভেতরের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, দুর্নীতি দমন কমিশনের চলমান মামলা এবং অতীতের মানব পাচারের অমীমাংসিত অভিযোগগুলো এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এই জটিলতাগুলো দ্রুত সমাধান করা না গেলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে প্রবেশাধিকার আবারও সীমিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আশার আলো:

সবকিছুর পরেও আশার আলো দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। মালয়েশিয়া সরকার ইতোমধ্যে কৃষি, বাগান, নির্মাণ এবং সার্ভিস সেক্টরসহ মোট ১৩টি খাতে বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য প্রায় সাড়ে ২৪ লক্ষ কলিং ভিসা উন্মুক্ত করেছে। যদি সত্যিই শূন্য খরচে কর্মী পাঠানোর এই প্রক্রিয়া সফল হয়, তবে এটি শুধু মালয়েশিয়ার অভিবাসন খাতেই নয়, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটেও এক নতুন বিপ্লবের সূচনা করবে।

মো: রাজিব আলী/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ