ঢাকা, বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫, ৫ ভাদ্র ১৪৩২

দালালদের দিন শেষ! এখন শূন্য খরচে মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ

প্রবাসী ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ২০ ২০:২৮:২৮
দালালদের দিন শেষ! এখন শূন্য খরচে মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: মালয়েশিয়ায় যেতে আগ্রহী লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশীর জন্য এটি একটি স্বপ্নের মতো খবর। বছরের পর বছর ধরে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হওয়া এবং ভিসা সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে প্রতারিত হওয়ার দুঃসহ অধ্যায়ের অবসান ঘটতে চলেছে। মালয়েশিয়া সরকার এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে জানিয়েছে, এখন থেকে বাংলাদেশী কর্মীদের সে দেশে যেতে আর কোনো অর্থ খরচ করতে হবে না। নিয়োগকর্তারাই সমস্ত খরচ বহন করবেন, যা দেশের অভিবাসন খাতে এক নতুন বিপ্লবের সূচনা করতে যাচ্ছে।

নিয়োগকর্তাই দেবে সব খরচ

অতীতে একজন কর্মীকে মালয়েশিয়া যেতে ৪ থেকে ৫ হাজার মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা গুনতে হতো, যা মেটাতে তাদের জমি-জমা বিক্রি করতেও বাধ্য হতে হতো। কিন্তু নতুন এই ঘোষণায় সেই দুঃস্বপ্নের অবসান হচ্ছে। এখন থেকে কর্মীদের ভিসা, মেডিকেল পরীক্ষা, এবং বিমান ভাড়াসহ অভিবাসনের যাবতীয় খরচ সম্পূর্ণভাবে নিয়োগকর্তা বহন করবেন। এর ফলে কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় কার্যত শূন্যে নেমে আসবে। তবে, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কর্মীর যোগদানের পর প্রথম মাসের বেতন থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সার্ভিস চার্জ কেটে নেওয়া হবে।

যেভাবে বন্ধ হবে দালালি

এই যুগান্তকারী পরিবর্তন সম্ভব হচ্ছে একটি আধুনিক ও প্রযুক্তি-নির্ভর নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। মালয়েশিয়া সরকার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ILO) নীতিমালা অনুসরণ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) চালিত একটি প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে। "ইউনিভার্সাল রিক্রুটমেন্ট প্রসেস (URP)" এবং "ডাইরেক্ট লেবার রিক্রুটমেন্ট (DLR) প্লাস" নামক দুটি ব্যবস্থার মাধ্যমে কর্মীরা সরাসরি অনলাইনে চাকরির জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন।

নিয়োগকর্তারাও সেই অনলাইন ডাটাবেস থেকে সরাসরি নিজেদের পছন্দমতো কর্মী বাছাই করতে পারবেন। এর ফলে শ্রমিক ও নিয়োগকর্তার মধ্যে একটি সরাসরি সংযোগ তৈরি হবে, যা দালাল বা অন্য কোনো মধ্যস্বত্বভোগীর হস্তক্ষেপের সুযোগ পুরোপুরি বন্ধ করে দেবে।

কূটনৈতিক সাফল্য ও সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

এই অভাবনীয় সুযোগ সৃষ্টির পেছনে রয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিবিড় কূটনৈতিক তৎপরতা। তার এই উদ্যোগের ফলেই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশীদের জন্য এই নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই প্রক্রিয়া সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে।

পথের কাঁটা: পুরনো চ্যালেঞ্জগুলো

তবে এই বিশাল সম্ভাবনার পথে কিছু বড় চ্যালেঞ্জও বিদ্যমান। দেশের ভেতরের কিছু রিক্রুটিং এজেন্সির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চলমান মামলা এবং অতীতে মানব পাচারের মতো গুরুতর অভিযোগের এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। এসব জটিলতা দ্রুত সমাধান করা না গেলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে প্রবেশের এই সুবর্ণ সুযোগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

তবুও সব বাধা পেরিয়ে আশার আলোই দেখছেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। মালয়েশিয়া ইতোমধ্যে কৃষি, নির্মাণ ও সার্ভিস সেক্টরসহ ১৩টি খাতে প্রায় সাড়ে ২৪ লক্ষ কলিং ভিসা উন্মুক্ত করেছে। যদি এই শূন্য খরচের প্রক্রিয়া সফল হয়, তবে এটি বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ পরিবারের জন্য এক নতুন ভোরের সূচনা করবে।

FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর):

প্রশ্ন ১: সত্যিই কি এখন বিনা খরচে মালয়েশিয়া যাওয়া যাবে?

উত্তর: হ্যাঁ, নতুন ঘোষণা অনুযায়ী মালয়েশিয়া যেতে কর্মীদের আর কোনো টাকা লাগবে না। ভিসা, বিমান ভাড়া এবং মেডিকেলের মতো প্রধান খরচগুলো নিয়োগকর্তা বহন করবেন। তবে কর্মীর প্রথম মাসের বেতন থেকে সামান্য সার্ভিস চার্জ কাটা হতে পারে।

প্রশ্ন ২: এই প্রক্রিয়ায় কীভাবে আবেদন করতে হবে?

উত্তর: কর্মীরা সরাসরি অনলাইনে "ইউনিভার্সাল রিক্রুটমেন্ট প্রসেস (URP)" এবং "ডাইরেক্ট লেবার রিক্রুটমেন্ট (DLR) প্লাস" প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবেন। এটি একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা হওয়ায় কোনো দালালের প্রয়োজন হবে না।

প্রশ্ন ৩: দালালদের প্রতারণা থেকে এটি কীভাবে সুরক্ষা দেবে?

উত্তর: এই নতুন ব্যবস্থাটি কর্মী এবং নিয়োগকর্তার মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে। যেহেতু কোনো মধ্যস্বত্বভোগী বা দালালের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই, তাই প্রতারণার ঝুঁকিও থাকবে না।

মো: রাজিব আলী/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ