ঢাকা, শুক্রবার, ২২ আগস্ট ২০২৫, ৭ ভাদ্র ১৪৩২

MD Zamirul Islam

Senior Reporter

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভারতের গোপন নীলনকশা! ফিরছেন হাসিনা?

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ২২ ১৮:৩৬:৫১
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভারতের গোপন নীলনকশা! ফিরছেন হাসিনা?

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে, যার কেন্দ্রে রয়েছে ভারতের রাজধানী দিল্লি। অভিযোগ উঠেছে যে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে একটি নতুন রাজনৈতিক কার্যালয় স্থাপন করেছেন, যেখান থেকে তিনি তার দলের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন এবং বাংলাদেশে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পরিকল্পনা করছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে এবং ভারতের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। ভারত সরকার তাকে কেবল আশ্রয়ই দেয়নি, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক কার্যালয়ও দিয়েছে বলে জানা গেছে। "আমার দেশ" পত্রিকার এক প্রতিবেদন অনুসারে, এই কার্যালয়কে নীতি নির্ধারকরা পর্দার আড়ালে ‘হাসিনা সচিবালয়’ বলে অভিহিত করছেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, এই কার্যালয়টি আধুনিক প্রযুক্তি, গোপন বৈঠক এবং এনক্রিপ্টেড যোগাযোগ ব্যবস্থা দিয়ে সজ্জিত, যা একটি নির্বাসিত সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত।

এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাংলাদেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এটি কেবল একটি আশ্রয় নয়, বরং দিল্লির রাজনৈতিক কৌশলের একটি অংশ, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

দিল্লিতে গোপন বৈঠক ও আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগস্টের শুরুতে শেখ হাসিনা দিল্লিতে তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতাকে নিয়ে একটি বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন মায়া এবং সুজিত রায় নন্দীর মতো আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ও ক্ষমতায় ফেরার রোডম্যাপ তৈরি করা।

ভারতের ভূমিকা ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

ভারতের প্রভাবশালী প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি গৌতম লাহিড়ীর এক মন্তব্য এই বিতর্ককে আরও উস্কে দিয়েছে। তিনি বলেছেন, "বাংলাদেশে যেকোনো সময় অভ্যুত্থান হতে পারে। ড. ইউনূস দেশটাকে যেদিকে নিয়ে যাচ্ছেন, তা হয়তো ভারত মেনে নেবে না।" এই মন্তব্যটি ইঙ্গিত দেয় যে, ভারতের অভ্যন্তরে একটি শক্তিশালী মহল এখনও হাসিনাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে আগ্রহী।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ১৯৭১ সাল থেকেই ভারত চেয়েছে বাংলাদেশ তাদের মতো করে চলুক। বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে এবং এখনও তাদের মনে প্রশ্ন জাগে কেন স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরও দিল্লি মনে করে বাংলাদেশকে তাদের ছাঁচে চালাতে হবে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া

ভারতের এই পদক্ষেপকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো দেশের সার্বভৌমত্বের উপর হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে। বিএনপি থেকে শুরু করে নতুন গড়ে ওঠা এনসিপি পর্যন্ত সবাই ভারতের এই ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছে। আওয়ামী লীগের ভেতরেও যারা এখনও আনুগত্য বজায় রেখেছেন, তারাও এই ঘটনায় দ্বিধাগ্রস্ত বলে মনে করা হচ্ছে।

জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা

ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাহাদী হাসান বলেছেন, "দিল্লিতে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয় অত্যন্ত খারাপ লক্ষণ। এখন সবচেয়ে জরুরি হলো জাতীয় ঐক্য।" তিনি আরও বলেন, ভারত যদি বাংলাদেশের ওপর স্বৈরাচার হাসিনাকে চাপিয়ে দিতে চায়, তবে দল-মত নির্বিশেষে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

সারাদেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস পর্যন্ত সর্বত্রই একই আলোচনা- দেশের ভবিষ্যৎ কি এখন দিল্লি থেকে লেখা হচ্ছে? এই পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্যই পারে স্বৈরাচার ও বিদেশি ষড়যন্ত্রের ছায়া কাটিয়ে দেশের নিজস্ব সূর্যোদয় ঘটাতে। এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশের জনগণ কি পারবে তাদের নিজেদের ইতিহাস নিজেরাই লিখতে, নাকি দিল্লির অচেনা ভবনেই লেখা হবে বাংলাদেশের আগামী দিনের ভাগ্য।

জামিরুল ইসলাম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ